অবকাঠামোগত কাজ শেষ হয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের নতুন আইসিইউ ওয়ার্ডের। এখন শুধু শয্যা সংযোজনের পালা। ইতোমধ্যে ওয়ার্ডটিতে আইসিইউ স্থাপনের জন্য এসেছে শয্যা-ভেন্টিলেটরসহ যাবতীয় সরঞ্জাম। এটি স্থাপন হতে পারে যে কোন সময়। এরপরই আনুষ্ঠানিকতা শেষে চালু হবে চমেক হাসপাতালের নবনির্মিত ৩২ শয্যার বৃহৎ আইসিইউ ওয়ার্ডটি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন ৩২ শয্যার এ ওয়ার্ডটি চালুর পর আইসিইউ শয্যা বাড়বে প্রায় আড়াইগুণ। ফলে চট্টগ্রামে বহু প্রতীক্ষিত আইসিইউ শয্যার সংকট অনেকটাই ঘুচবে। এতে করে মুমূর্ষু রোগীর সেবা যেমন বৃদ্ধি পাবে, তেমনি আইসিইউ শয্যার অভাবে মৃত্যুর খবরও কম শুনতে হবে।
এর আগে ২০২৩ সালের এপ্রিলে চমেক হাসপাতালের নিচ তলায় অবস্থিত ন্যায্যমূল্যের ওষুধের দোকানের পেছনে থাকা পূর্বের মানসিক ওয়ার্ডে নতুন আইসিইউ ওয়ার্ড স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করে কর্তৃপক্ষ। এরপরই অবকাঠামোর কাজ শুরু হয়। ইতোমধ্যে অবকাঠামোর কাজ শেষ হয়েছে। শুধুমাত্র শয্যা ও যন্ত্রপাতি সংযোজনের অপেক্ষায় রয়েছে। যা যে কোন সময় সংযোজন হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান পূর্বকোণকে বলেন, ‘অত্যাধুনিক আইসিইউ ওয়ার্ড নির্মাণের অবকাঠামোর কাজ শতভাগ শেষ। এখন শুধুমাত্র আইসিইউ শয্যা ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হবে। ওয়ার্ডটিতে ৩২ শয্যার আইসিইউ বসানোর জন্য যাবতীয় যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করা হয়েছে। আশা করছি আগামী সপ্তাহে সব কাজ শেষ হবে। চালু হলে আইসিইউ’র যে সংকট, তা অনেক কেটে যাবে। যদিও রোগীর তুলনায় হাসপাতালটিতে কমপক্ষে দু’শ আইসিইউ থাকার প্রয়োজন। আশা করছি অন্তত ১২০ শয্যার আইসিইউ উন্নীত করা সম্ভব হবে। ইতোমধ্যে এ নিয়ে বৃহৎ পরিকল্পনা করা হয়েছে।’
তথ্য অনুসারে, ১৯৬০ সালে মাত্র ১২০ শয্যা ও অল্প কিছু রোগী নিয়ে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করে বৃহত্তর চট্টগ্রামের একমাত্র টার্শিয়াল পর্যায়ের এ হাসপাতালে। প্রথম দিকে হাসপাতালটিতে মাত্র পাঁচ শয্যার আইসিইউ কার্যক্রম চালু ছিল। সবশেষ ২০০৫ সালে তা ১২ শয্যায় উন্নীত হয়। যদিও তখনও সাধারণ শয্যার পরিমাণ ছিল ১ হাজার ১০ টিতে। ২০১৩ সালে সাধারণ শয্যা বেড়ে ১৩১৩ তে উন্নীত হলেও বাড়েনি আইসিইউ শয্যা। ১৫ বছর পর ২০২০ সালের সালের অক্টোবর মাসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এ হাসপাতালের জন্য ৮টি ভেন্টিলেটরযুক্ত আইসিইউ পাঠানো হয়। যা ওই সময়ে স্থাপন করা হয়। ফলে আইসিইউ শয্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২০ শয্যায়। তবে দীর্ঘ বছর পর ২০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও বর্তমানে ১৮টি শয্যা দিয়েই মুমূর্ষু রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে বৃহত্তর চট্টগ্রামের একমাত্র টার্শিয়ারি পর্যায়ের বৃহৎ এ হাসপাতাল।
চমেক হাসপাতালের এ্যানেসথেসিয়া ও আইসিইউ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘মুমূর্ষু রোগীরাই চমেক হাসপাতালে ভর্তি হন। যাদের অধিকাংশের আইসিইউ’র সাপোর্ট প্রয়োজন হয়। প্রতিদিন কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ জন রোগীকে আইসিইউ সাপোর্ট দেওয়ার জন্য চাহিদা আসে। কিন্তু শয্যার অভাবে সবাইকে দেওয়া সম্ভব হয় না। হয়তো দুই থেকে তিনজনকে সাপোর্ট দিতে পারলেও অনেক সময় কাউকে দেওয়া সম্ভব হয় না। তবে নতুন ৩২ শয্যার ওয়ার্ডটি চালু হলে আইসিইউ’র সংকট অনেক লাঘব হবে।’
সংশ্লিষ্টরা জানান, বৃহত্তর চট্টগ্রামের একমাত্র টার্শিয়ারি পর্যায়ের এ হাসপাতালে কম খরচে আইসিইউ সেবা নিতে প্রতিদিনই অসংখ্য রোগী ভিড় করেন। কিন্তু শয্যার সংখ্যা অপ্রতুল হওয়ায় বেসরকারি পর্যায়ে গিয়ে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হয় রোগীদের। তবে নতুন করে আইসিইউ শয্যা বৃদ্ধি হলে মুমূর্ষু ও মৃত্যু পথযাত্রী রোগীদের আরও অধিক সেবা নিশ্চিত করা যাবে বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের।
পূর্বকোণ/আরআর