চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪

সর্বশেষ:

গৃহিণী থেকে দেশসেরা ফ্রিল্যান্সার খাদিজা

মরিয়ম জাহান মুন্নী

৩০ ডিসেম্বর, ২০২৩ | ৭:৩৯ অপরাহ্ণ

‘ঘরে বসেই আয় করা যাবে’। ২০১৮ সালের দিকে এমন একটি প্রযুক্তি কোম্পানির নামফলকে আটকে যায় চোখ। কৌতুহলে তাদের ঠিকানা সংগ্রহ করেন। বাসায় এসে তাদের সম্পর্কে জানেন। ‘কি হয় দেখি’ সেই ভাবনা থেকে প্রথম অনলাইন কোর্সের গ্রাফিকস ডিজাইনে ভর্তি হন। তারপর শুরু হয় করোনা। প্রবাসী স্বামীর বিদেশে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়।

 

এদিকে দেশে তিন সন্তান নিয়ে সংসার চালাতে হিমসিম খাচ্ছিলেন। এমন সময় সন্তানদের জন্য কিছু করতে হবে। সেই ভাবনা থেকেই সরকারের ‘লার্নিং এন্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট’ প্রকল্পের মাধ্যমে নিজেকে দক্ষ করে তোলেন। ছেলেদের জন্য কেনা কম্পিউটারে ২০১৯ সালে একটু আধটু করে শুরু করেন ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ। প্রথম মাসে ঘণ্টায় ৮ ডলার করে মাসে ৩০০ ডলার আয় করেন। এরপর ধীরে ধীরে হাজার টাকা থেকে লাখ টাকা ছাড়ালো মাসিক আয়। এভাবেই নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে গৃহিণী থেকে হয়ে উঠেন সফল ফ্রিল্যান্সার। ২০২৩ সালে দেশ সেরা ফ্রিল্যান্সারও হয়েছেন মিরসরাই উপজেলার মিঠানালা গ্রামের মেয়ে শেখ খাদিজা খানম।

 

সংসার সামলিয়ে গৃহিণী হয়েও আজ তিনি সফল ফ্রিল্যান্সার। শুধু তাই নয় ২০২৩ সালে মা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম বিভাগের মিরসরাই উপজেলা থেকে ‘অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী’ ক্যাটাগরিতে সেরা পাঁচ জয়িতার একজন নির্বাচিত হয়ে সম্মাননা অর্জন করেন।

 

তাঁর সাফল্যের এ পথ চলা সম্পর্কে শেখ খাদিজা খানম বলেন, ছোট থেকেই কম্পিউটারের প্রতি একটা ভালোলাগা কাজ করতো। যে কারণে এইচএসসি’তে অপশনাল সাবজেক্ট হিসেবে কম্পিউটারও নিয়েছিলাম। তবে আমার শখ ছিল কলেজের শিক্ষক হওয়া। কিন্তু তা আর হলো না। কারণ স্বামী সন্তানসহ সংসার সামলাতেই ব্যস্ত হয়ে পড়ি। কিন্তু ২০১৮ সালে পারিবারিক কাজে ব্যাংকে যাই। সেখানেই ব্যাংকের বিপরীত পাশে চোখ পড়ে একটি প্রযুক্তি কোম্পানির নামফলকে। যেখানে লেখা ছিল ঘরে বসেই আয় করা যাবে। কৌতুহলে তাদের ঠিকানা সংগ্রহ করি। বাসায় এসে অনেকটা কৌতূহলবশত তাদের সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি। তাদের প্রথম অনলাইন কোর্সের আগ্রহ নিয়ে গ্রাফিকস ডিজাইনে ভর্তি হই। তারপর করোনা শুরু হয়। বিদেশে স্বামীর ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। দেশে তিন সন্তান নিয়ে সংসার চালাতে পারছিনা। এরপর সন্তানদের কথা ভেবে আমাদের এক মডারেটরের সহযোগিতায় একটু আধটু করে কাজ শুরু করি। প্রথম দিকে ঘণ্টায় ৮ মার্কিন ডলারে কাজ শুরু করি। যা মাসে আয় হত ২৬-২৮ হাজার টাকা। এখন প্রতি ঘণ্টায় ১৫ ডলারের বেশি টাকার কাজ করি। এভাবে মাসে ২৫০-৩০০ ঘণ্টা কাজ করি। মাসে প্রায় দুই হাজার ডলার আয় হয়। লাখ টাকার বেশি মাসিক আয় হয়।

 

খাদিজা খানম বলেন, আমি গ্রাফিকস ডিজাইনের পাশাপাশি ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের কাজও করি। বিদেশি গ্রাহক বা প্রতিষ্ঠান থেকে যেসব কাজ আসে সেগুলো করি। তিন বছর ধরে ৪০ জন ক্লায়েন্টের সঙ্গে কাজ করেছি। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠানে ভার্চ্যুয়াল এসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করছি। গত আগস্ট মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত জাতীয় ফ্রিল্যান্সার সম্মেলনে সেরা ফ্রিল্যান্সার সম্মাননা পেয়েছি। এখন আমি আপওয়ার্কে সেরা ৩ শতাংশ ফ্রিল্যান্সারদের একজন আমি। সামনে আরো এগিয়ে যেতে চাই। ফ্রিল্যান্সিংয়ের পাশাপাশি চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজ থেকে বাংলায় স্নাতক শেষ করি। আমার তিন ছেলে। বড় দুইজন আমার সাথে ফ্রিল্যান্সিং শিখছেন।

 

শেখ খাদিজা খানম বলেন, প্রথম দিকে হাঁপিয়ে উঠলেও ধীরে ধীরে সব গুছিয়ে নিয়েছি। এ কাজে আমার স্বামীর পুরো সহযোগিতা করেছেন। আমার কাজের সময় ছেলেদের স্কুলে নেয়া, খাওয়া দাওয়া, সংসারের সব কাজ তিনি করেন। এখন আমি ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর, প্রিমিয়ার প্রো, ক্যানভা প্রো, ডিজিটাল মার্কেটিং ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পেইড মার্কেটিংয়ে কাজ করি। এখন যেভাবে কাজ করছি এভাবেই কাজ করে যেতে চাই। তবে ইচ্ছে আছে সমাজের অবহেলিত নারীদের পাশে দাঁড়ানো।

 

নতুনদের উদ্দেশ্যে শেখ খাদিজা খানম বলেন, যে কাজে দক্ষতা আছে সে কাজ নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। যথাসময়ে কাজ শেষ করতে হবে। পাশাপাশি ঘুম, খাওয়া, নিজের যত্ম সবকিছু করতে হবে।

 

পূর্বকোণ/জেইউ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট