
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে ৮১ জনই ব্যবসায়ী। যা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চেয়ে ১১ শতাংশ বেশি। এছাড়াও চাকরিজীবী, কৃষিজীবী, শিক্ষক পেশার প্রার্থীও রয়েছে ভোটের মাঠে।
শুধু ব্যবসায়ী প্রার্থী বেশি নন, উচ্চশিক্ষিত প্রার্থীর সংখ্যাও বেড়েছে। এবার স্নাতক স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী প্রার্থী রয়েছেন ৬৪ দশমিক ১৬ শতাংশ। তবে মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক ও স্বশিক্ষিত প্রার্থীও রয়েছেন ভোটের মাঠে। আছে পিএইচডি, বার-এট-ল (ব্যারিস্টার) ও এমফিল ডিগ্রিধারী প্রার্থীও।
চট্টগ্রামের ১৬ আসনে ভোটের লড়াইয়ে আছেন ১২০ জন সংসদ সদস্য প্রার্থী। নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ করে এই তথ্য পাওয়া যায়।
হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১২০ জন প্রার্থীর মধ্যে ব্যবসায়ী প্রার্থী হচ্ছেন ৮০ জন। যা শতকরা ৬৬ দশমিক ৬৬ জন। ব্যবসায়ী ছাড়াও আছেন আইনজীবী, চাকরিজীবী, শিক্ষক, কৃষিজীবী প্রার্থী। পাশাপাশি গবেষণা ও রাজনীতিবিদও রয়েছেন। কয়েকজন প্রার্থী দ্বৈত পেশায় জড়িত। তবে ব্যবসাতেই তাদের আয় বেশি দেখিয়েছেন।
নির্বাচন বিশ্লেষকেরা জানান, টাকা-পয়সা না থাকলে রাজনৈতিক দলগুলো দলীয় নমিনেশন দিতে চায় না। আর্থিক সক্ষম বিবেচনা করে দলীয় নমিনেশন দেয়। যে যত বেশি বিত্তশালী নমিনেশন পাওয়ার সম্ভাবনা তার তত বেশি। রাজনীতি দলগুলো অর্থ-বিত্ত বিবেচনায় নেয় বলে প্রার্থীদের বেশিরভাগই হচ্ছেন ব্যবসায়ী।
১২০ জন প্রার্থীর মধ্যে চাকরিজীবী রয়েছেন ১৩ জন। যা ১০ দশমিক ৮৩ শতাংশ। আইনজীবী রয়েছেন ১০ জন। যা মোট প্রার্থীর ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ। কৃষিজীবী রয়েছেন ৬ জন। যা ৫ শতাংশ। শিক্ষকতা পেশায় রয়েছেন ৫ জন। এছাড়া চিকিৎসক, সাংবাদিক, ঘর-গৃহস্থি, অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার প্রার্থীও রয়েছেন ৭ জন। যা প্রার্থীদের ৫ দশমিক ৬ শতাংশ।
নির্বাচন বিশ্লেষক ও সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক এডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী পূর্বকোণকে বলেন, ‘নির্বাচন প্রক্রিয়া ও মনোনয়ন বাণিজ্যের কারণে নির্বাচনব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। নির্বাচনকে ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ হিসেবে নিয়েছেন। কালো টাকার দৌরাত্ম্যে সত্যিকার রাজনৈতিক, সজ্জন ও ভালো মানুষ নির্বাচনে আসতে আগ্রহ হারাচ্ছেন। তা না হলে এমপিদের সম্পদ ২-৩শ গুণ কীভাবে বাড়ে ?’
শিক্ষাগত যোগ্যতা :
প্রার্থীদের হলফনামা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সংসদ সদস্য পদে উচ্চ শিক্ষিত প্রার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। স্নাতক স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী প্রার্থী আছেন ৭৭ জন। যা মোট প্রার্থীর ৬৪ দশমিক ১৬ শতাংশ। এরমধ্যে চট্টগ্রাম-৫ আসনের সৈয়দ মোখতার আহমেদ ও চট্টগ্রাম-৭ আসনের ইসলামী ফ্রন্টের প্রার্থী মুহাম্মদ ইকবাল হাছান এমফিল (আইন) করেছেন। পিএইচডি ডিগ্রিধারী রয়েছেন দুইজন। তারা হলেন চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসনের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং চট্টগ্রাম-১৫ আসনের সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী।
বার-এট-ল (ব্যারিস্টার) ডিগ্রিধারী রয়েছেন তিনজন। তারা হলেন, হাটহাজারী-৫ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, চট্টগ্রাম-৯ আসনের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ প্রার্থী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও একই আসনের জাতীয় পার্টি প্রার্থী সানজীদ রশীদ চৌধুরী। একই আসনে দুই ব্যারিস্টার ছাড়াও স্বশিক্ষিত প্রার্থীও রয়েছেন।
উচ্চশিক্ষিত প্রার্থী ছাড়াও স্বশিক্ষিত ও স্বাক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন প্রার্থী রয়েছেন আছেন ২০ জন। যা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের ১৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ। উচ্চ মাধ্যমিক পাস করা (এইচএসসি) প্রার্থী আছেন ১৪ জন। যা ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ। মাধ্যমিক (এসএসসি) পাসধারী প্রার্থী রয়েছেন আছেন ৫ জন। যা মোট প্রার্থীর ৪ শতাংশ ১৬ শতাংশ। এছাড়াও এসএসসির গণ্ডি (দশম-নবম ও উচ্চ মাধ্যমিক) পার হতে পারেননি ৪ জন।
রাজনীতি বিশেষজ্ঞদের অভিমত, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চাইতেন, আইনসভায় আইনজীবীদের সংখ্যা বেশি থাক। তিনি তা প্রকাশ্যে বলতেন। এখন দেখা যাচ্ছে, আইনজীবীদের অংশগ্রহণ কমে যাচ্ছে। এতে বোঝা যায়, রাজনৈতিক দলগুলো ভ্রান্তপথে আছে। আইনসভায় আইন পেশার লোকদের যতযতভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে না।
শুধু চট্টগ্রামে নয় জাতীয়ভাবেও সংসদ নির্বাচনে ব্যবসায়ীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। কমেছে আইনজীবী ও কৃষিজীবী প্রার্থীর সংখ্যা। দেশের প্রথম জাতীয় সংসদে আইনজীবীর হার ছিল ৩১ শতাংশ। কৃষিজীবীর হার ছিল ১১ শতাংশ। শিক্ষকের হার ছিল ১২ শতাংশ। আর ব্যবসায়ীর হার ছিল ১৮ শতাংশ। পরবর্তী নির্বাচনগুলোতে এই সূচক উল্টোপথে হেঁটেছে। আইনজীবী ও কৃষিজীবী আর শিক্ষকের হার ক্রমান্বয়ে কমেছে। শুধু ব্যবসায়ীর হার বেড়েই চলেছে। ৮ম জাতীয় সংসদে আইনজীবীর হার ছিল ১২ শতাংশ। কৃষিজীবীর সংখ্যা ছিল এক শতাংশে নেমে আসে। আর ব্যবসায়ীর সূচক বেড়ে যাচ্ছে।
পূর্বকোণ/পিআর