চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪

সর্বশেষ:

শূন্যই থেকে গেল প্রাপ্তির খাতা!

মোহাম্মদ আলী

২০ ডিসেম্বর, ২০২৩ | ১১:৫৭ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের রাজনীতির মাঠের দুই ত্যাগী ও ক্লিন ইমেজধারী পরিচিত রাজনীতিবিদ মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সুজন ও এম এ সালাম। দুইজনই রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছেন স্কুল জীবন থেকে। অর্ধ শতাব্দীর বেশি সময় ধরে রাজনীতিতে সক্রিয় থাকায় তাদের দুইজনকে ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে অনেক। তাদের হাত ধরে রাজনীতিতে আসা অনেকে হয়েছেন সংসদ সদস্য। শুধু তাই নয়, তাদের চেয়ে অনেক কম সময় রাজনীতি করে অনেকের সৌভাগ্য হয়েছেন সংসদ সদস্য থেকে মন্ত্রী হওয়ারও। কিন্তু তাদের প্রাপ্যের হিসাবের খাতা একেবারেই শূন্য। মেলেনি একবারও সংসদ সদস্য হওয়ার সুযোগ। মনোনয়ন পেয়ে উল্টো ফেরত দিতে হয়েছে বারবার।

 

মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও ১৪ দলের নগর সমন্বয়ক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সুজনের রাজনীতির হাতেরখড়ি উত্তর কাট্টলী নুরুল হক চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। বিগত ৫৪ বছরের রাজনৈতিক জীবনে তিনি ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি শুধুমাত্র ২০০৮ সালে একবার চট্টগ্রাম-১১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেও কয়েকদিন পর তা পরিবর্তন করে অন্যজনকে দিয়ে দেয়। তারপরও দমে যাননি মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সুজন। রাজনীতির মাঠে সক্রিয়ভাবে কাজ করে গেছেন। পরবর্তীতে তাকে চসিকর প্রশাসক মনোনীত করা হলে অনেকে ধরে নিয়েছিলেন তাকে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী করা হবে। কিন্তু তাতেও বঞ্চিত হন তিনি। এবারের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অনেকে মনে করে ছিলেন খোরশেদ আলম সুজনকে মনোনয়ন দিতে পারে আওয়ামী লীগ। পরবর্তীতে ঘোষিত প্রার্থীর তালিকায় তার নাম দেখতে না পেয়ে হতাশ হন রাজনীতি সংশ্লিষ্টরা।

 

মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সুজন দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘২০০৮ সালে একবার চট্টগ্রাম-১১ আসনে আমি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেও কয়েকদিন পর তা পরিবর্তন করে অন্যজনকে দিয়ে দেয়। তারপরও দলের স্বার্থে আমি এটা মেনে নিয়েছি। এরপর ২০১৮ সালে আমাকে মনোনয়নের চিঠি দিতে ঢাকায় ডেকে নিয়ে যায়। কিন্তু পরে আমাকে আর চিঠি দেওয়া হয়নি। এরপরও আমি হতাশ হইনি। দেশ ও জাতির স্বার্থে রাজনীতি করে যাচ্ছি।’

 

মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সুজনের মতো রাজনীতিতে আরেক বঞ্চনার নাম এম এ সালাম। তিনি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। বিগত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন তিনি। এর মধ্যে একবার নির্বাচনে হেরে যান। বাকি দুইবার মনোনয়নপত্র জমা দেন। কিন্তু দলের মিত্র জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনটি ছেড়ে দিতে হয়েছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। প্রত্যাহার করতে হয়েছে মনোনয়নপত্র। এর মধ্যে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ থেকে এম এ সালামকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। কিন্তু কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের কারণে আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে আসনটি ছেড়ে দিতে হয়েছে তাকে। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনের জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান এম এ সালাম। যথানিয়মে মনোনয়নপত্র জমা দেন তিনি। কিন্তু মিত্র জাতীয় পার্টির সঙ্গে সমঝোতার কারণে তাকে এবারও মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিতে হয়। ৫০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে তিনি উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের টানা ২৮ বছর সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেন। চার বছর আগে সম্মেলনের মাধ্যমে তিনি উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। এখনো এই পদে রয়েছেন। ১৯৯৬ সালে তিনি হাটহাজারী থেকে নির্বাচন করেন এম এ সালাম। এরপর ২০০৮ এবং সর্বশেষ ২০২৩ সালের আসন্ন নির্বাচনসহ দুইবার মনোনয়ন পেয়েও জোটের কারণে প্রত্যাহার করে নেন এম এ সালাম।

 

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন স্কুলছাত্র অবস্থায় ছাত্রলীগ দিয়ে রাজনীতি শুরু এম এ সালামের। এরপর কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি করেন। এছাড়া তিনি চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রশাসক ও চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু সংসদ সদস্য হওয়ার সুযোগ পাননি তিনি। এ নিয়ে হতাশা রয়েছে তার অনুসারীদের।

 

উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘বার বার মনোনয়ন পেয়েও নির্বাচন করতে না পারার কষ্ট থাকবে। এবারও দেশ ও দলের স্বার্থে আমি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছি। তারপরও বলবো- আমি কি হই বা না হই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন ও শেখ হাসিনার কর্মী হিসেবে আজীবন আওয়ামী লীগ করে যাব। দল-মত, জাতি ধর্ম নির্বিশেষে হাটহাজারীবাসীর জন্য আমার দরজা আমৃত্যু খোলা থাকবে। তাদের সাথে আমার আত্মার সম্পর্ক, আমি আজীবন তাদের একজন হয়ে থাকবো।’

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট