আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হেভিওয়েট প্রার্থীদের বেশির ভাগই ব্যবসায়ী। এরমধ্যে কয়েকজন ব্যবসার পাশাপাশি শিক্ষকতা, আইনজীবী, কৃষিজীবী হিসেবে একাধিক পেশায় রয়েছেন। বর্তমান সংসদ সদস্য, মন্ত্রী, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানসহ প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ করে এই তথ্য পাওয়া যায়।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের ১৬ আসনে ১৪৮ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পর ১১৬ জনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেন রিটার্নিং অফিসার। ৩২ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। বাতিল হওয়া প্রার্থীদের মধ্যে বেশির ভাগই স্বতন্ত্র প্রার্থী। এরমধ্যে অন্তত ৮ জন হেভিওয়েট প্রার্থী রয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২৯ প্রার্থীর মধ্যে ২৫ জন ব্যবসায়ী। শিক্ষক ও আইনজীবী রয়েছেন তিনজন। একজন প্রার্থীর পেশা পরামর্শক। এছাড়া দু-তিনজন ব্যবসার সঙ্গে শিক্ষকতা ও কৃষিজীবী হিসেবে আয় করেন।
চট্টগ্রাম-৭ আসনের সংসদ সদস্য ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ পেশা উল্লেখ করেছেন শিক্ষকতা ও ব্যবসা। আয়ের উৎস হিসেবে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন, কৃষি খাত থেকে বছরে আয় এক লাখ ৩০ হাজার টাকা, বাড়ি ভাড়া থেকে এক লাখ ৪৭ হাজার টাকা। ব্যাংক ও অন্যান্য খাত থেকে সম্মানী বাবদ এক লাখ ২২ হাজার ২৬৩ টাকা। ব্যবসা থেকে নিজের আয় উল্লেখ না করলেও নির্ভরশীলদের আয় দেখিয়েছেন দুই লাখ ৭৪ হাজার টাকা।
চট্টগ্রাম-১৩ আসনের প্রার্থী ও ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ পেশায় ব্যবসায়ী। ব্যবসা থেকে বছরে তার আয় এক লাখ ৩৫ হাজার ৩০০ টাকা। কৃষি খাত থেকে আয় ৮৩ হাজার টাকা। বাড়ি ভাড়া থেকে ৫৮ লাখ ৮৩ হাজার ৩৭৯ টাকা। সম্মানী ভাতা ১২ লাখ ৬০ হাজার টাকা। অন্যান্য খাত থেকে ৫০ হাজার ৪১৮ টাকা।
চট্টগ্রাম-৯ আসনের সংসদ সদস্য ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল পেশায় আইনজীবী। পেশা থেকে বছরে তার আয় ১৪ লাখ ৫২ হাজার ১০৮ টাকা। কৃষিখাত থেকে ৩৭ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫০ টাকা। চাকরি থেকে ১০ লাখ ৩৮ হাজার টাকা ও অন্যান্য খাত থেকে ১৬ লাখ ৬৩ হাজার ১৭০ টাকা।
চট্টগ্রাম-১৫ আসনের সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী পেশায় শিক্ষক (অধ্যাপক)। আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্ট্রি বোর্ডের চেয়ারম্যান। এ খাত থেকে বছরে আয় করেন এক কোটি ৩৭ লাখ ৬১ হাজার ৪৪২ টাকা।
রাউজান আসনের সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিমের পেশা ব্যবসা, মৎস্য ও ডেইরি খামার রয়েছে। ব্যবসা থেকে বছরে এক কোটি ১১ লাখ ৪৮ হাজার ৮৯৯ টাকা ও কৃষিখাত থেকে এক লাখ ২৫ হাজার ১২৫ টাকা আয় করেন। এছাড়াও বাড়ি ভাড়া, ব্যাংক আমানত, ডেইরি ও মৎস্য খামার থেকে আলাদা আয় রয়েছে।
চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী পেশায় ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির পরামর্শক। তিন লাখ ৮৫ হাজার ২৯৬ টাকা। আরেক প্রার্থী মুজিবুর রহমান পেশায় ব্যবসায়ী। ১৫টি শিল্প গ্রুপের পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিনি। ব্যবসা থেকে বছরে তার আয় ৩৩ লাখ ৫৯ হাজার ৮৬২ টাকা। অন্যান্য খাতে পরিচালক ভাতা পান ৬৬ লাখ টাকা।
সীতাকু- আসনের এসএম আল মামুন শিপ, রিসোর্ট ও ট্রেডিং ব্যবসায়ী। ব্যবসা থেকে বছরে আয় এক কোটি ১৮ লাখ ৭০ হাজার টাকা।
চট্টগ্রাম-১০ আসনের প্রার্থী সাবেক মেয়র মনজুর আলম ব্যবসায়ী। ২০টি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন। তার বার্ষিক আয় ২০ লাখ ৭৫ হাজার ৮৫০ টাকা। এছাড়াও বাড়িভাড়া, ব্যাংক আমানত, সম্মানীভাতা থেকে বিপুল পরিমাণ আয় রয়েছে তার। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চুও পেশায় ব্যবসায়ী। ব্যবসা থেকে বছরে আয় ১৭ লাখ ৯৪ হাজার ৫০০ টাকা।
চট্টগ্রাম-১১ আসনের দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য এম এ লতিফ ও জিয়াউল হক সুমন-দু’জনই পেশায় ব্যবসায়ী। ব্যবসা থেকে লতিফের আয় ২০ লাখ ৭২ হাজার ৩৪৪ টাকা। সুমনের আয় ৩০ লাখ ৩৪ হাজার ১৫৫ টাকা। এছাড়াও কৃষিখাত, বাড়ি ভাড়া, ব্যাংক আমানত থেকেও বিপুল আয় রয়েছে তার।
চট্টগ্রাম-২ আসনের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভা-ারী, সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য খাদিজাতুল আনোয়ার সনি, হোসাইন মুহাম্মদ আবু তৈয়ব ও সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদ পেশায় ব্যবসা। তবে সাইফুদ্দিনের গৃহসম্পত্তি, কৃষি, হাদিয়া ও মৎস্য খামার থেকে আয় রয়েছে।
চট্টগ্রাম-১ আসনের সংসদ সদস্য মাহবুব উর রহমান রুহেল, চট্টগ্রাম-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতা, চট্টগ্রাম-১২ আসনের প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরী ও মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১৪ আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরীও পেশায় ব্যবসায়ী। চট্টগ্রাম-৫ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এমএ সালাম পেশায় ব্যবসায়ী। সৈয়দ মো. ইবরাহিম পেশায় ব্যবসা ছাড়াও গবেষণা ও রাজনীতি হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
পূর্বকোণ/সাফা/পারভেজ