চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪

সর্বশেষ:

ভেনিসের আদলে নগরীর ৩ খালে চলবে পর্যটন নৌকা-স্পিড বোট

ইমরান বিন ছবুর

৫ ডিসেম্বর, ২০২৩ | ১২:৩২ অপরাহ্ণ

ভেনিসের আদলে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের তিন খালে পর্যটন নৌকা ও স্পিড বোট চালানোর উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) নেওয়া নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় বাকলিয়ার তিনটি খালে উদ্যোগটি চালু করা হবে। খাল তিনটি হচ্ছে- বাকলিয়া এলাকার রাজাখালী-১, রাজাখালী-২ এবং রাজাখালী-৩। প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করতে আজ (মঙ্গলবার) বিকেলে খালগুলো পরিদর্শনে যাবেন সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী।

 

নগরীর খালগুলো ভরাট, দখল ও দূষণ থেকে রক্ষা করে খালকে বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে সম্প্রতি সিটি মেয়রকে এই প্রস্তাব দেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল শাহ আলী। এই উদ্যোগটি বাস্তবায়িত হলে নগরীর খালগুলো ভরাট, দখল ও দূষণ থেকে বাঁচবে। যা চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। এছাড়া পর্যটন ও যোগাযোগ ব্যবস্থারও নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, সিডিএ’র জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় খনন করা নগরীর বাকলিয়া এলাকার রাজাখালী-১, রাজাখালী-২ এবং রাজাখালী-৩, এই তিনটি খাল একটি অন্যটির সঙ্গে যুক্ত। ৩০-৩২ ফুট প্রস্তের এ তিন খালের দৈর্ঘ্য প্রায় ৪ কিলোমিটার। ইতিমধ্যে খাল তিনটির খনন কাজের পাশাপাশি দুই পাড়ে রিটেইনিং ওয়াল, রেলিং নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া খাল দখল ঠেকাতে দুই পাশে নির্মাণ করা হয়েছে সড়কও।

 

জানতে চাইলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল শাহ আলী বলেন, উন্নয়নমূলক কাজ শেষ হওয়ায় প্রতিদিন বিকালে রাজাখালীর খালগুলোতে প্রচুর লোকজনের সমাগম হচ্ছে। নগরবাসীর ঘোরাঘুরির সুন্দর একটি পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এজন্য খালগুলোতে বিনোদনের ক্ষেত্র তৈরির একটি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

 

তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশনকে আমরা রাজাখালীর খালগুলোতে নৌকা, স্পিড বোট চালুর একটি প্রস্তাব দিয়েছি। মেয়র মহোদয় সেটি গ্রহণ করেছেন এবং মঙ্গলবার (আজ) বিকেলে তিনি খালগুলো পরিদর্শনে যাবেন। খালে প্রতিদিন বিকালে নৌকা, স্পিড বোট চললে- প্রচুর মানুষ চড়বে। এতে খালগুলোতে ময়লা-আবর্জনা ফেলার পরিমাণ শূন্যে নেমে আসবে।

 

সেনাবাহিনীর প্রস্তাবটি দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, খাল দূষণ এবং ভরাট ঠেকাতে নৌকা ও স্পিড বোট চালুর প্রস্তাব পেয়েছি। মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) সরেজমিন খালগুলো পরিদর্শন করবো। দ্রুত রাজাখালী খালে নৌকা ও স্পিড বোট চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে। অন্য খালগুলোতেও পর্যায়ক্রমে এটি চালু করা হবে।

 

সিটি কর্পোরেশনের এই উদ্যোগটি সহসায় বাস্তবায়ন করা উচিত উল্লেখ করে নগর পরিকল্পাবিদ ও স্থপতি আশিক ইমরান বলেন, এটি নিঃসন্দেহে একটি ভালো প্রস্তাব। এরফলে একদিকে যেমন পর্যটন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে, অন্যদিকে ভরাট, দখল ও দূষণ থেকে বাঁচবে নগরীর খালগুলো।

 

তিনি আরো বলেন, আমাদের শহরের অধিকাংশ মানুষ এখনো খালকে ডাস্টবিন হিসেবে ব্যবহার করে। যার যখন যেখানে ইচ্ছে খালে ময়লা ফেলে। যখন দেখবে খালে নৌকা-স্পিড বোট চলছে, বিনোদন ও যাতায়াতের নতুন পথ সৃষ্টি হয়েছে, তখন মানুষের মন মানসিকতার পরিবর্তন হবে। পুরো শহরের মানুষের মাঝে ইতিবাচক ধারণা আসবে।

 

তবে এই উদ্যোগ যাতে ঢাকার রামচন্দ্রপুর খালের মত না হয় সেই বিষয়ে লক্ষ্য রাখার পরামর্শ দিয়েছেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শাহজালাল মিশুক।

 

তিনি বলেন, দলবল নিয়ে নৌকায় করে ঢাকার রামচন্দ্রপুর খাল পাড়ি দিচ্ছেন মেয়র আতিকুল ইসলাম। এরকম একটি ছবি কয়েকবছর আগে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছাপা হয়েছিল। মেয়র ও তাঁর সঙ্গীদের ১০টি নৌকা তিন কিলোমিটার দীর্ঘ রামচন্দ্রপুর খাল পেরিয়ে বুড়িগঙ্গা নদী পর্যন্ত গিয়েছিলো। কিন্তু এক থেকে দেড় বছরের মধ্যেই ভরাট হয়ে, আবর্জনা জমে কোথাও কোথাও এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে যে খাল খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এমন যাতে না হয়।

 

তিনি আরো বলেন, নগরীর খালে পর্যটন নৌকা ও স্পিড বোট চালুর মতো যে উদ্যোগ নিয়েছে, সেটি নিঃসন্দেহে বেশ চমৎকার। চ্যালেঞ্জগুলো অতিক্রম করে এই উদ্যোগ চালু রাখতে হবে।

 

উল্লেখ্য, ৮ হাজার ৬২৬ কোটি টাকায় চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের অধীনে নগরীর ৩৬টি খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন করছে সিডিএ। সিডিএ’র হয়ে এ প্রকল্পের পূর্ত কাজ পরিচালনা করছে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনক্ট্রাকশন ব্রিগেড। গত ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত এ প্রকল্পের অধীন ৩৬টি খালের মধ্যে ১৮টি খালের উন্নয়ন কাজ শেষ হয়েছে। আরও ৩টি খালের রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ শেষে এখন মাটি খননের কাজ চলছে। সব মিলিয়ে আরডিপিপি অনুযায়ী এ প্রকল্পের অগ্রগতি ৭০ শতাংশ।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট