চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪

সর্বশেষ:

বিরোধ গড়াল ভোটের মাঠে

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

২৪ নভেম্বর, ২০২৩ | ৫:১১ অপরাহ্ণ

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের অন্তত অর্ধ ডজন উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের ‘নৌকা’ প্রতীক চেয়ে আবেদন জমা দিয়েছেন। ইতিমধ্যেই তিনজন চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। স্থানীয় উন্নয়ন ও রাজনীতির মাঠে দীর্ঘদিনের মনস্তাত্তি¡ক বিরোধের ছাইচাপা তুষের আগুন ফুঁসে উঠেছে বলে জানান দলীয় নেতা-কর্মীরা।
জাতীয় নির্বাচনে প্রস্তুতির কথা জানিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন সীতাকুণ্ড উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম আল মামুন। তিনি উত্তর জেলা যুবলীগের সভাপতি ছিলেন। এছাড়া তিনি আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত আবুল কাসেম মাস্টারের ছেলে।

দলীয় সূত্র জানায়, ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন তৎকালীন সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কাসেম মাস্টার। কিন্তু নৌকার টিকেট পান বর্তমান সংসদ সদস্য শিল্পপতি মো. দিদারুল আলম। তা সহজেই মেনে নিতে পারেনি কাসেম মাস্টার পরিবার। সেই থেকে দুই পরিবারের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব চলে আসছে। একই সময়ে দুই পরিবারের দুই সদস্য সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

সম্প্রতি উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেন এসএম আল মামুন। ইতিমধ্যে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে নৌকা প্রতীকের আবেদন জমা দিয়েছেন। গতকাল তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ‘আমি উপজেলাভিত্তিক কাজ-কর্ম নিয়ে ছিলাম। উনি (এমপি দিদার) উনার কাজ-কর্ম নিয়ে ছিলেন। আমাদের মধ্যে কোনো বিরোধ ছিল না।’ তিনি বলেন, ‘আমার নেত্রী যাকে নেতা মনোনীত করবেন, তিনিই আমার নেতা। আমি দলের সিদ্ধান্তের বাইরে নেই।’
শুধু এসএম আল মামুন নন, আরও পাঁচ উপজেলা চেয়ারম্যান আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইতিমধ্যেই তিনজন পদত্যাগ করেছেন।
চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পটিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী। ইতিমধ্যেই তিনি চেয়ারম্যান পদ ছেড়েছেন। এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরী নৌকা প্রতীকে তিনবার নির্বাচিত হন। স্থানীয় নেতা-কর্মীরা জানান, এলাকার উন্নয়নসহ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে দু’জনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে মনোমালিন্য চলে আসছে। সেই ক্ষোভ থেকে এবার উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে জাতীয় নির্বাচনে প্রতিযোগিতা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন মোতাহেরুল ইসলাম। মোতাহেরুল ইসলাম গতকাল বলেন, ‘নির্বাচনের প্রস্তুতি রয়েছে। তবে দলীয় মনোনয়ন পেলে নির্বাচন করবো।’
চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী। উপজেলা চেয়ারম্যান এখানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ মোতালেব। দু’জনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক বিরোধ চলে আসছে। এই বিরোধ প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। এবার উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে জাতীয় নির্বাচনে প্রতিযোগিতা করার জন্য দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন মোতালেব। ইতিমধ্যেই মাঠে-ময়দানে সরব হয়ে উঠেছেন তিনি। স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিনের বিরোধের জের ধরেই মোতালেব জাতীয় নির্বাচনের মাঠে নেমেছেন।
সদ্য পদত্যাগ করা সাতকানিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ মোতালেব বলেন, ‘আমি দলের পক্ষে মনোনয়ন চেয়েছি। আশা করছি দল আমাকে মনোনয়ন দেবে। কারণ সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অমাার সাথে আছেন। এছাড়াও আমি দীর্ঘদিন ধরে দল ও নেতা-কর্মীদের সময়ে-দুঃসময়ে মাঠে ছিলাম।’
বাঁশখালীতে উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে সদ্য পদত্যাগ করেছেন চৌধুরী মো. গালিব। তিনি দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক। আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ও সংসদ সদস্য প্রয়াত সুলতানুল কবীর চৌধুরীর ছেলে। ২০১৪ সালে জাতীয় নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। দলীয় সূত্র জানায়, মোস্তাফিজুর রহমান সংসদ সদস্য হওয়ার পর সুলতানুল কবীর চৌধুরীর সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। ২০১৯ সালে উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নৌকা পান সুলতানুল কবীরের পুত্র চৌধুরী মো. গালিব। দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগ নেতা খোরশেদ আলম।
উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ ছেড়েছেন জানিয়ে চৌধুরী মো. গালিব পূর্বকোণকে বলেন, ‘আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে আমি দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে জোর আশাবাদী।’
চার উপজেলা চেয়ারম্যানের পদত্যাগ ছাড়াও আরও একাধিক উপজেলা চেয়ারম্যান, সিটি করপোরেশন কাউন্সিলর ও ইউপি চেয়ারম্যান এবার জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
চন্দনাইশ উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার চৌধুরী ও তার ভাই ব্যবসায়ী নেতা আবদুল কৈয়ূম চৌধুরী আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। আবদুল জব্বার গত উপজেলা নির্বাচনে নৌকা প্রতীক না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হন। বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় রাজনৈতিকভাবে সংসদ সদস্য নজরুল ইসলামের সঙ্গে তার মনোমালিন্য রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান। দু’জনকে ঘিরে দুই ধারায় বিভক্ত আওয়ামী লীগের রাজনীতি। দলীয় মনোনয়ন পেলে পদত্যাগ করে বিধি মেনে নির্বাচন করবেন বলে জানান আবদুল জব্বার। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছেন ফটিকছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান হোসাইন মো. আবু তৈয়ব।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে দুই দফায় চট্টগ্রামের ১৪ উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম ধাপে ১৮ মার্চ সীতাকুÐ, মিরসরাই, ফটিকছড়ি, স›দ্বীপ, রাঙ্গুনিয়া, রাউজান ও হাটহাজারী উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় ধাপে ২৪ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় পটিয়া, বাঁশখালী, বোয়ালখালী, আনোয়ারা, চন্দনাইশে। ১৪ অক্টোবর হয় সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাচন। সেই হিসাবে বর্তমানে উপজেলাগুলোর মেয়াদকাল চলছে প্রায় ৪ বছর আট মাস।
নির্বাচন বিশ্লেষকদের ধারণা, উপজেলা চেয়ারম্যানদের মেয়াদকাল চলছে প্রায় চার বছর আট মাস, সংবিধান মতে জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেই হিসাবে বর্তমান চেয়ারম্যানদের মেয়াদকাল বড়জোড় দুই-তিন মাস রয়েছে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক ও বর্তমান একাধিক কাউন্সিলর আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চেয়ে আবেদন জমা দিয়েছেন।

পূর্বকোণ/এএইচ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট