চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪

সর্বশেষ:

আওয়ামী লীগে একঝাঁক, বিএনপিতে শুধু খসরু

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

২১ অক্টোবর, ২০২৩ | ৫:৩৮ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম-১১ আসনকে ‘ধনবতী’ আসন বলা হয়। দেশের অর্থনীতির হৃদপিণ্ডখ্যাত চট্টগ্রাম বন্দর, কাস্টমস, শিপিং কর্পোরেশন, তেল শোধনাগার, বিমান ও নৌবাহিনীর ঘাঁটি, বিমান বন্দর, ইপিজেড শিল্পনগরী, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার, ব্যাংক-বীমা ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রধানকেন্দ্র আবর্তিত এই আসনকে ঘিরে। এ আসনকে কেন্দ্র করেই চট্টগ্রামকে বন্দর ও বাণিজ্য নগরী বলা হয় ।
চট্টগ্রামের ১৬ সংসদীয় আসনের মধ্যে চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা-ডবলমুরিং) আসনের গুরুত্ব অত্যধিক। জাতীয় রাজনীতিতেও এ আসন গুরুত্ব বহন করে। তাই বিগত নির্বাচনগুলোতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এখানে ‘হেভিওয়েট’ প্রার্থী করে আসছে। এতে বেশির ভাগই প্রাধান্য পেয়েছেন ব্যবসায়ী প্রার্থী।
২০০৮ সালে নির্বাচনী সীমানা পুনর্নিধারণের পর চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) নামে স্বতন্ত্র সংসদীয় আসনে রূপ দেওয়া হয়। এর আগে এটি ছিল চট্টগ্রাম-৮ সংসদীয় আসন। ১৯৯১ সাল থেকে ২০০১ সালের নির্বাচন পর্যন্ত টানা তিনবার চট্টগ্রাম-৮ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন ব্যবসায়ী নেতা বিএনপিদলীয় প্রার্থী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি ছিলেন তিনি। আমির খসরু এখন বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী সদস্য। জাতীয় রাজনীতিতে এখন গুরুত্বপূর্ণ নেতা তিনি।
আগামী নির্বাচনে বিএনপির হেভিওয়েট নেতা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী দলের একক প্রার্থী। তিনি বলেন, ‘ভোট নিয়ে এখন কোন মাথাব্যথা নেই। আমরা শেখ হাসিনার পতন আন্দোলনে আছি। জনগণ যখন নিজেদের ভোট নিজেরাই দিয়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করার পরিবেশ সৃষ্টি হবে তখনই নির্বাচনের প্রশ্ন আসবে।’
আসন পুনর্বিন্যাসের পর চট্টগ্রাম-১১ আসনে ২০০৮ সাল থেকে টানা তিনবার জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের এমএ লতিফ। তিনিও চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি ছিলেন। এমএ লতিফ বলেন, ‘কাকে নমিনেশন দেবে তা দল বিবেচনা করবে। জনগণের ভালো-মন্দ নিয়ে সব সময় পাশে ছিলাম। এলাকার উন্নয়নে অনেক কাজ করেছি। পরিবর্তনের কারণে নেত্রী ও দলের ইমেজ বেড়েছে। এসব বিবেচনা করে দল যাকে উপযুক্ত মনে করবে তাকে মনোনয়ন দেবে।’
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ২৭-৩০ ও ৩৬-৪১ নং ১০টি ওয়ার্ড নিয়ে চট্টগ্রাম-১১ সংসদীয় আসন গঠিত। সম্ভাব্য ভোটার সংখ্যা ৫ লাখ ১০ হাজার ৬৩৭ জন। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১৫২টি। ভোটকক্ষ ১০৬৬টি।
২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন। পরবর্তীতে তা বদলে চেম্বার সভাপতি এমএ লতিফকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয়। তবে ২০২০ সালের ৬ জুন তাকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক নিয়োগ দেয় সরকার। ৬ মাস প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করে নগরবাসীর কাছে স্বতন্ত্র ইমেজ তৈরি করেন।
নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে জনগণের জন্য কাজ করে আসছি। এখন জীবনসায়াহ্নে পৌঁছেছি। প্রতিটি রাজনৈতিককর্মীর জনগণের জন্য কাজ করা ও সংসদে যাওয়ার স্বপ্ন-আকাক্সক্ষা থাকে। খোরশেদ আলম আরও বলেন, ‘এ আসনে সরকারি হাসপাতাল নেই, নেই মাতৃসদনও। মানুষের পক্ষে কথা বলা ও ভাগ্য বদলেরও কেউ নেই। আমি দীর্ঘদিন ধরে মানুষের স্বপ্ন পূরণে কাজ করেছি। জনগণও চায়, আমি সংসদে গিয়ে তাদের পক্ষে কথা বলি। আমাকে মনোনয়ন দিলে আসনটি আমি দলকে উপহার দেব।
নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলতাফ হোসেন বাচ্চু বলেন, স্কুলজীবনে ছাত্রলীগের মাধ্যমে রাজনীতি শুরু করি। ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগে সক্রিয় রয়েছি। আশা করছি, দল ও নেত্রী ত্যাগী-পরীক্ষিত কর্মীদের মূল্যায়ন করবে।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ করছেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বোর্ড সদস্য ও ৩৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন। তিনি বলেন, এ নির্বাচনী এলাকার সবচেয়ে বেশি ভোট আমার ওয়ার্ডে। দুইবারের কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন ও রাজনীতি করতে গিয়ে আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করেছি। একই সঙ্গে জনগণকে সরকারের প্রতি আস্থা-বিশ্বাস অর্জনে কাজ করেছি। আশা রাখছি, দল আমার উপর আস্থা রাখলে এ আসনকে স্মার্ট আসনে পরিণত করবো।
জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক জসিমুদ্দিন বাবুল এবং জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও নগর শাখার সভাপতি সোলায়মান আলম শেঠ এ আসন থেকে প্রার্থী হচ্ছেন। এছাড়াও নগর আওয়ামী লীগের সদস্য রোটারিয়ান মো. ইলিয়াছ, ৩৬নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও মহানগর জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, বন্দর থানা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইলিয়াছ, ৩৭ নং মুনিরনগর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মুহাম্মদ এনামুল হক মুনিরী ও ব্যারিস্টার সওগাতুল আনোয়ার খান মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ করে যাচ্ছেন।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ছাড়াও ১৪ দলের শরিক জাসদ, জাতীয় পার্টি, ইসলামী ফ্রন্ট, ইসলামিক ফ্রন্টসহ আরও একাধিক দলের প্রার্থী দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন।

পূর্বকোণ/এএইচ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট