চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪

সর্বশেষ:

খরচ বাড়ছে পাঁচশ কোটি

মিজানুর রহমান

১৪ অক্টোবর, ২০২৩ | ১১:৩৩ পূর্বাহ্ণ

বন্দরনগরী চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় সরাসরি জ্বালানি তেল পরিবহনে নেওয়া পাইপলাইন স্থাপন প্রকল্পের খরচ ও মেয়াদ-দুটোই বাড়ছে। বিশ্ববাজারে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব ও দেশে ডলারের দাম রেকর্ড পরিমাণ বাড়ায় এ প্রকল্পের খরচ প্রায় ৫০০ কোটি টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে, ভূমি অধিগ্রহণসহ নানা জটিলতায় নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় দুই বছর বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে প্রকল্পের মেয়াদ।

দেশের অভ্যন্তরে সরাসরি জ্বালানি তেল পরিবহনে নেওয়া প্রথম এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)। নির্মাণকাজের তত্ত্বাবধানে রয়েছে সেনাবাহিনীর ২৪তম ইঞ্জিনিয়ার কন্সট্রাকশন বিগ্রেড। বিপিসির প্রস্তাবনা অনুযায়ী ৫০০ কোটি টাকা বাড়লে পাইপলাইন স্থাপন প্রকল্পের খরচ সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

অন্যদিকে, দুই বছর বাড়ানো হলে প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২৪ এর ডিসেম্বরে গিয়ে দাঁড়াবে।

প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বিপিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান- বর্তমানে চট্টগ্রাম থেকে সারাদেশে নৌ এবং সড়ক পথেই জ্বালানি তেল পরিবহন করা হয়। এতে বিপুল পরিমাণ পরিবহন খরচের পাশাপাশি তেলও চুরি হয়। এছাড়া শুষ্ক মৌসুমে নৌ-পথে নাব্যতা সঙ্কট তৈরি হওয়ার কারণে জ্বালানি তেল পরিবহনেও সমস্যা দেখা দেয়। জ্বালানি সরবরাহে বিঘœ ঘটে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এসব ক্ষতি থেকে বাঁচবে বিপিসি। বছরে ২৭-৩০ লাখ মেট্রিক টন জ্বালানি তেল সরাসরি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পরিবহন করা সম্ভব হবে। যা পর্যায়ক্রমে ৫০ লাখ মেট্রিক টন পর্যন্ত বাড়তে পারে। এতে জ্বালানি তেল পরিবহন ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। সুরক্ষিত জ্বালানি তেল পরিবহন ব্যবস্থার জন্য দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান হবে।

২০১৮ এর অক্টোবরে ২ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘চট্টগ্রাম-ঢাকা পর্যন্ত পাইপলাইনে জ্বালানি তেল সরবরাহ’ প্রকল্পের অনুমোদন দেয় একনেক। পরে এ প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়ায় ৩ হাজার ১৭১ কোটি টাকা। বাস্তবায়নে মেয়াদ ধরা হয়- ২০২২ এর ডিসেম্বর। এখন খরচ পাঁচশ কোটি এবং মেয়াদ ২০২৪ এর ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রকল্পের অধীনে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত আড়াইশ’ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। এরমধ্যে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা গুপ্তখাল থেকে ফেনী, কুমিল্লা, চাঁদপুর, মুন্সিগঞ্জ হয়ে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল পর্যন্ত নির্মাণ করা হচ্ছে ২৪১ দশমিক ২৮ কিলোমিটার পাইপলাইন। ভূগর্ভে স্থাপন করা এসব পাইপলাইনের ব্যাস থাকছে ১৬ ইঞ্চি।

এছাড়া নারায়ণগঞ্জের গোদানাইল থেকে ফতুল্লা পর্যন্ত নির্মাণ করা হচ্ছে ৮ দশমিক ২৯ কিলোমিটার পাইপলাইন। তবে এসব পাইপলাইনের ব্যাস ১৬ ইঞ্চির পরিবর্তে ১০ ইঞ্চি থাকছে। পতেঙ্গা থেকে ফতুল্লা পর্যন্ত পাইপলাইন যাচ্ছে ২২টি নদীর তলদেশ ছুঁয়ে। পুরো পাইপলাইনজুড়ে থাকছে ৯টি স্টেশন। আর কুমিল্লার বরুড়ায় স্থাপন হচ্ছে নতুন করে একটি ডিপো।

গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ প্রকল্পের ২৫০ কিলোমিটার পাইপলাইনের মধ্যে ২৩২ কিলোমিটার পাইপলাইন বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। চট্টগ্রাম এবং ফেনীর কিছু অংশে বাকি ১৮ কিলোমিটার পাইপলাইন বসানের কাজ চলছে। এছাড়া ৯টি স্টেশন নির্মাণও শেষ হয়েছে ৮০ শতাংশ। পাশাপাশি ৪টি পাম্প হাউজ বসানোর কাজ চলছে। সব মিলিয়ে এ প্রকল্পের অগ্রগতি ৭০ শতাংশ।

প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী আমিনুল হক পূর্বকোণকে বলেন, নানা জটিলতা কাটিয়ে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত পাইপলাইনে জ্বালানি তেল সরবরাহ প্রকল্পের কাজ। ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের ৭০ শতাংশ কাজ শেষ। বাকি কাজ ২০২৪ এর ডিসেম্বরের মধ্যেই শেষ করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে দেশের জ্বালানি তেল পরিবহনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট