চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪

সর্বশেষ:

নদীরক্ষার তোড়জোড় শুধু কাগজেই

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

১৪ অক্টোবর, ২০২৩ | ১১:২৪ পূর্বাহ্ণ

বেপরোয়া দখলে দিন দিন সরু হয়ে আসছে কর্ণফুলী নদী। অথচ এ নদীর অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ ও দূষণরোধে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে। তারপরও বেদখল হয়ে যাচ্ছে কর্ণফুলী।

 

গত বছরের শেষ দিকে কর্ণফুলীর অবৈধ দখলদার উচ্ছেদে উচ্চ পর্যায়ের একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করেছিল জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। নদী রক্ষা কমিশন ও জেলা প্রশাসনের চিহ্নিত অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করে নদীকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার নির্দেশনা ছিল কমিশনের। কিন্তু ১১ মাসেও সেই কমিটি কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। নদী রক্ষা কমিশন সূত্র জানায়, ২০২২ সালের ৬ ডিসেম্বর ১৭ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির আহ্বায়ক করা হয় ই-পাসপোর্ট প্রকল্পের সাবেক পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) প্রকৌশলী সাইদুর রহমান খানকে। সদস্য করা হয় নদী সমীক্ষা প্রকল্পের পরিচালক, নৌ পরিবহন, ভূমি মন্ত্রণালয় ও জননিরাপত্তা বিভাগের প্রতিনিধি, বুয়েট শিক্ষক, বন্দর, জেলা প্রশাসক, পরিবেশ অধিদপ্তর, মেরিন একাডেমি, নদী গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রতিনিধি।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী গতকাল পূর্বকোণকে বলেন, ‘কমিটিকে কাজ করতে দেয়নি। বাঁধা দিয়েছে। শুধু কমিটি নয়, আমাকেও নানাভাবে ভয়-ভীতি দেখানো হয়েছে। তারপর প্রধানমন্ত্রী আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন, আমি কাজ করে যাবো। কর্ণফুলী উচ্ছেদ করে ছাড়বো।’

 

২০১৫ সালে হাইকোর্টের আদেশে কর্ণফুলীর সীমানা নির্ধারণ ও অবৈধ স্থাপনার তালিকা করেছিল চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। নদীর দুই তীরে দুই হাজার ১৮৭টি অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করা হয়েছিল। ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের আদেশ দেন হাইকোর্ট। ২০২০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ডাকঢোল পিটিয়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করেছিলেন জেলা প্রশাসক।

 

সাত বছর পর নতুন করে সমীক্ষা করেছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। নদীর দুই তীরে দুই হাজার ৪৯২ টি অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করেছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও দখলদারদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করার সুপারিশ করেছে নদী রক্ষা কমিশন।

 

নদীর বিশাল এলাকা দখল করে ফিশারিঘাট মৎস্য অবতরণকেন্দ্রসহ বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে উল্লেখ করে নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘কর্ণফুলী ক্রমান্বয়ে দখল হয়ে সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। এভাবে বেদখল হয়ে গেলে এক সময়ে জাহাজ চলাচল একমুখী হয়ে যাবে। আশ্চর্যের বিষয়ে হচ্ছে, চট্টগ্রামের মন্ত্রী-এমপি, সরকারি কর্মকর্তা ও পরিবেশবাদীরা এসব নিয়ে কেন কথা বলেন না। মনে হচ্ছে, দখলদারদের সঙ্গে তাদের সখ্যতা আছে।’

 

সরেজমিন দেখা যায়, নদীর ব্যাপক দখল রয়েছে বাকলিয়ার বাস্তুহারা, ক্ষেতচর ও চাক্তাই এলাকায়। নদীর তীরের সরকারি খাস জমি দখল করে গড়ে উঠেছে বিশাল বস্তি। কয়েক হাজার ঘরবাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে বস্তিগুলোতে। এছাড়াও চাক্তাই-রাজাখালী খাল এবং নদীর তীর দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে মৎস্য অবতরণকেন্দ্র। শাহ আমানত সেতু থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত অংশে ব্যাপক দখল ও স্থায়ী অবকাঠামো গড়ে ওঠেছে। রয়েছে বহুতল ভবনও। এরমধ্যে সরকারি নানা স্থাপনাও রয়েছে। রয়েছে বিভিন্ন সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এভাবে প্রতিনিয়ত বেদখলে সরু হয়ে আসছে কর্ণফুলী।

 

কর্ণফুলী নদী বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ড. ইদ্রিস আলী পূর্বকোণকে বলেন, ‘অপেশাদার আমলা, অপ্রয়োজনীয় ব্যক্তি ও নদী-পরিবেশের কিছুই বুঝে না-তাদের নিয়ে করা মাথা ভারী কমিটি অঙ্গশোভা ছাড়া আর কিছুই নয়। তাই সরকার বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করছে, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।’

 

২০১৮ সালেও এই ধরনের কমিটি গঠন করা হয়েছে উল্লেখ করে ড. ইদ্রিস আলী বলেন, ‘ওই কমিটিতে আমাকে সদস্য করা হয়েছিল। কিন্তু আমাকে মিটিংয়ে ডাকতো না। নদীর সঙ্গে বাঁচা-মরা অংশীজনদের না রেখে অপেশাদারদের রাখলে সংকট কখনো সমাধান হবে না।’ চট্টগ্রামের ভূমিপুত্র মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরাও কর্ণফুলীকে বাঁচানোর জন্য উদাসীন। জবাবদিহি না থাকায় কর্ণফুলী দখল ও দূষণমুক্ত হচ্ছে না।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট