চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪

ভয়ংকর মহিলা প্রতারক তানিয়া ঢাকার পর এবার চট্টগ্রামে

নাজিম মুহাম্মদ 

২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ | ১২:১৫ অপরাহ্ণ

ঢাকার পর ভয়ঙ্কর মহিলা প্রতারক তানিয়া সিকদার এবার নজর দিয়েছে চট্টগ্রামে। টানা পাঁচ বছরের বেশি সময় ঢাকায় বিভিন্ন এলাকায় অভিনব কায়দায় প্রতারণা করে মানুষের টাকা, গহনা হাতিয়ে নিয়েছে তানিয়া। তার বিরুদ্ধে ঢাকার বিভিন্ন থানায় মামলা রয়েছে ১৯টি। গ্রেপ্তারও হয়েছেন একাধিকবার। কিন্ত জামিনে বের হয়ে ফের প্রতারণার ফাঁদ পাতে আনুমানিক ৩৫ বছর বয়স্ক এ তরুণী। তানিয়া গাজিপুরের জয়দেবপুরের গজারিয়া পাড়ার মৃত হাসান মিয়ার মেয়ে।  গত ১২ সেপ্টেম্বর নগরীর পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকার একটি বাসায় মেয়ের বান্ধবী পরিচয়ে ঢুকে নগদ টাকা ও বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নেয়। পাঁচলাইশ থানা পুলিশ তানিয়ার দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে। তানিয়াকে ধরতে অভিযান চলছে। ঘটনার শিকার হামিদা বেগম (৭২) জানান, তার ছেলে চাকরির সুবাধে ঢাকা ও মেয়ে আমেরিকা থাকেন। গত ১২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা আনুমানিক সাতটার সময় তার পাঁচলাইশের বাসার ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরায় দেখতে পান বাসার নীচে আনুমানিক ৪০ বছর বয়সী একজন মহিলা অপেক্ষা করছে। তখন বাসায় থাকা বোনের ছেলে রফিকুল ইসলামকে (৪১) বাসার দরজা খুলে দিতে নিচে পাঠায়। দরজা খোলার পর ওই মহিলা জানান, তিনি চার পাঁচদিন আগে আমেরিকা থেকে এসেছেন। আমেরিকায় বসবাসরত হামিদা বেগমের মেয়ে শামীমার (৪০) বান্ধবী। মেয়ের বান্ধবী শুনে দরজা খুলে ঘরের ভেতরে  বসতে দেয় ওই মহিলাকে। বাসায় ঢুকে হামিদা বেগমের সাথে কথাবার্তা বলছিল ওই মহিলা। এরমধ্যে হামিদা বেগম অসুস্থবাধে করে। এই ফাঁকে মেয়ের বান্ধবী পরিচয় দেয়া ওই মহিলা হামিদা বেগমের বেডরুমে ঢুকে আলমারিতে থাকা ২০ ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার, নগদ তিন লাখ টাকা, ৫শ ইউএস ডলার তিনটি ব্যাংকের চেকবাই নিয়ে সটকে পড়ে। এ ব্যাপারে ঘটনার শিকার সত্তোরোর্ধ হামিদা বেগম বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

পাঁচলাইশ থানার ওসি সন্তোষ কুমার চাকমা জানান, থানায় মামলা দায়ের হবার পর তথ্য প্রযুক্তি সহায়তায় গত ১৮ সেপ্টেম্বর গাজীপুরের গজারিয়াপাড়া থেকে বাগেরহাট মোড়লগঞ্জের চিংড়ীখালী ইউনিয়নের আসালাম হোসেনের ছেলে মো. নাঈম হোসেন (২৬), গাজীপুরের সদর থানার নাঈম হোসেনের স্ত্রী এশ বিনতে ইমিকে (২৫) গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে তানিয়া আক্তার সাদিয়া (৩৪) নামে এক মহিলা আমেরিকা প্রবাসী শামীমার বান্ধবী পরিচয় দিয়ে সেদিন পাঁচলাইশের ওই বাসায় ঢুকেছিল। এরআগে  ঢাকায় এ ধরনের অনেকগুলো ঘটনা ঘটিয়েছে তানিয়া।

তানিয়া মূলত দেশের যাদের ছেলে মেয়ে বিদেশ থাকে তাদের তথ্য সংগ্রহ করে। পরে বিদেশ থাকা ওই সব ছেলে মেয়েদের বন্ধু সেজে বাসায় হানা  দিয়ে কৌশলে টাকা, স্বর্ণালংকার চুরি করে।

ওসি সন্তোষ বলেন, আমরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারি ২০১৮ সাল থেকে রাজধানী ঢাকায় এ ধরনের একাধিক ঘটনা  ঘটিয়েছে তানিয়া নামের এ মহিলা। তিনি একেক জায়গায় একেক নাম ব্যবহার করেন। তার বিরুদ্ধে ঢাকার বিভিন্ন থানায় ১৯টি মামলা রয়েছে। ঢাকায় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারও হয়েছেন একাধিকবার। তানিয়াকে পাওয়া গেলে কৌশলে চুরি করা স্বর্ণালংকার, টাকা ও অন্যান্য জিনিসপত্র উদ্ধার করা যাবে। এমনটি আশা ওসির।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৯ সালে মে মাসে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয় তানিয়া। সে মূলত ধনী পরিবারগুলোকে টার্গেট করে তাদের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে বাসায় যেতেন। লোকজনদের বোকা বানিয়ে অভিনব উপায়ে সর্বস্ব লুট করতেন। কখনো নদী, কখনো সাদিয়া আক্তার তানিয়া, কখনো নুসরাত, কখনো তানিয়া সুমি আবার কখনো ডা. নওশিন নামে পরিচয় দিতেন তানিয়া সিকদার। ২০১৯ সালের ১৯ মে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার সাবেক ব্যাংকার খলিলুর রহমাননের বাসায় গিয়ে মেয়ের বান্ধবী পরিচয় দিয়ে বাসার ভেতরে ঢুকে সবাইকে বোকা বানিয়ে গহনা ও টাকা লুট করে নিয়ে যায় ওই তরুণী। এর ১০ দিন আগে বসুন্ধরা আবাসিকের লন্ডন প্রবাসী জাবিরের বন্ধু পরিচয় দিয়ে একই কায়দায় ৩০ ভরি স্বর্ণালংকার, ডায়মন্ডের একটি আংটি, দুটি নেকলেস নিয়ে যায়। ধারণা করা হচ্ছে বিগত পাঁচ বছরে ঢাকায় অসংখ্যা ঘটনা করার পর এবার চট্টগ্রামের দিকে নজর দিয়েছে ভয়ঙ্কর প্রতারক তানিয়া।

 

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট