একদিকে আকাশ ছোঁয়া সবুজ পাহাড়, অন্যদিকে দিগন্ত বিস্তৃত সাগর-প্রকৃতির এমন সৌন্দর্যে ঘেরা শহর বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। পাহাড়ের বুক বেয়ে নেমে আসা ঝর্ণা, স্বচ্ছ পানির হ্রদ, রোমাঞ্চকর ট্রেইল, ঢেউ খেলানো নদী, ছোট-বড় সমুদ্র সৈকত- কী নেই চট্টগ্রামে! তবে রাজশাহী কিংবা সিলেটের মতো ‘সিটি ট্যুরিজম’ ব্যবস্থা জনপ্রিয় না হওয়ায় ‘প্রাচ্যের রাণী’ চট্টগ্রাম পর্যটনের অপার সম্ভাবনা পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারছে না।
বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে দৈনিক পূর্বকোণ আয়োজিত ‘টেবিল টক’ এ অংশ নিয়ে পর্যটন সংশ্লিষ্টরা এসব কথা বলেছেন। চিটাগং টুরিস্ট গ্যাং’র ফাউন্ডার এডমিন সাকিব নাবিলের সঞ্চালনায় এতে গো-ট্রিপ’র ফাউন্ডার এডমিন রাশেদুল হাসান ইমন, তাবু নিবাসী ট্রাভেল গ্রুপ’র ফাউন্ডার এডমিন মিরাজ ইবনে নিজামী, বিডি এডভেঞ্চার ট্র্যাকার’র এডমিন আশিক খান ওচিটাগং টুরিস্ট গ্যাং’র মডারেটর সালমা জাহান জুঁই অংশ নেন।
রাশেদুল হাসান ইমন বলেন, বাংলাদেশে ট্যুরিজমের প্রায় ৬০-৭০ শতাংশ ভালো স্পট বৃহত্তর চট্টগ্রামেই। কিন্তু অধিকাংশ পর্যটক ঢাকা থেকে সরাসরি বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি কিংবা কক্সবাজারচলে যান। রাজশাহী, সিলেট বা খুলনায় সিটি ট্যুরিজম যেভাবে জনপ্রিয়- চট্টগ্রাম নিয়ে সেভাবে কাজ হয়নি। শহরের কাছেই মিরসরাই-সীতাকুণ্ডে ঝর্ণা আছে, বাঁশখালী-আনোয়ারায় সৈকত আছে, কর্ণফুলী নদীতে ভালো রিভার ক্রুজ হতে পারে।
তিনি বলেন, ডিসি পার্ক, পর্যটক বাস চালুসহ নানা পর্যটনবান্ধব কার্যক্রম হাতে নিয়েছেনবর্তমান ডিসি। প্রচারণা পেলে চট্টগ্রামে সিটি ট্যুরিজম আরো উন্নত হবে।এক্ষত্রে ট্যুর অপারেটররা বড় ভূমিকা পালন করতে পারেন। ঝর্ণা বা ট্রেইল ট্রেকিংয়ে যাওয়া পর্যটকদের জন্য নিরাপত্তা জোরদার করা জরুরি। সিটি ট্যুরিজম ছাড়াও বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজারের হোটেল-পরিবহন ব্যবস্থা শৃঙ্খলায় আনা প্রয়োজন।
মিরাজ ইবনে নিজামী বলেন, চট্টগ্রাম-কাপ্তাই নৌ-রুটে ভালো রিভার ক্রুজ পরিচালনা সম্ভব। পতেঙ্গা থেকে মিরসরাই পর্যন্ত ৯টি সৈকত আছে। প্রশাসন এগিয়ে এলে এসব সৈকত পর্যটকে মুখর হয়ে উঠবে। এ জন্য সবার আগে আমাদের পরিবহন ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে। যেমন কেউ মিরসরাই যাবেন। তিনি শহর থেকে মিরসরাই বাজারে গিয়ে দেখলেন পর্যটন স্পটে যাওয়ার সড়ক ভাঙা। তাহলে পর্যটকরা ওই স্পটে আর যাবেন?
তিনি বলেন, নাফাখুম, দেবতাখুম তরুণ পর্যটকদের জনপ্রিয় গন্তব্য। কিন্তু সেখানে বোট ভাড়া অনেক বেশি। কক্সবাজারে হোটেল ভাড়া নিয়ে অনেক অভিযোগ। বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপের অপতৎপরতার কারণে কখনো কখনো পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা থাকায় বান্দরবানে পর্যটক কমছে। এসব দিকে নজর দেয়া উচিত। চট্টগ্রামে ডে ট্যুর জনপ্রিয় করতে ডিসি স্যার অনেক উদ্যোগ নিয়েছেন। আশা করি- এর সুফল আমরা সবাই পাবো।
আশিক খান বলেন, বাংলাদেশের মধ্যে ঝর্ণা বা পাহাড় সবচেয়ে বেশি চট্টগ্রামে। সবচেয়ে সুন্দর শহরও এটি। এসব ঝর্ণা বা পাহাড়ে দিনে দিনে পর্যটক বাড়ছে। ৫ বছর আগেও খৈয়াছড়া, নাপিত্তাছড়া, কমলদহ ট্রেইলে তেমন কেউ যেত না। এখন প্রায় প্রতিদিন সেখানে পর্যটকরা আসছেন। পাহাড়-ঝর্ণায় ট্রেকিং করতে যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা দরকার, সেটিতে প্রশাসনকে ফোকাস দিতে হবে। এসব স্থানে পর্যাপ্ত গণশৌচাগার, বিশ্রামকেন্দ্র দরকার।
তিনি বলেন, ঝর্ণায় প্রাণহাণী ঘটছে। কিন্তু প্রশাসন সাইনবোর্ড দিয়েই দায় সারছে। ট্রেইলগুলোতে প্রচুর ময়লা ফেলা হচ্ছে। প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে। কাশ্মীরের ডাল লেক পৃথিবী বিখ্যাত। আমার মনে হয়- আমাদের কাপ্তাই লেক, ডাল লেকের চেয়েও সুন্দর। কিন্তু সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে আমরা কাজে লাগাতে পারছি না। কাপ্তাই লেককে কাজে লাগাতে পারলে- এটি ডাল লেকের চেয়েও জনপ্রিয় হবে।
সালমা জাহান জুঁই বলেন, চট্টগ্রামের পর্যটন সম্ভাবনার সবটুকু কাজে লাগানো যাচ্ছে না সংশ্লিষ্টদের সচেতনতার অভাবে। গণমাধ্যমসহ নানা জায়গায় চট্টগ্রামের ট্যুরিজম নিয়ে আরো আলোচনা হওয়া দরকার। তাহলে সমাজে পর্যটন আরো গ্রহণযোগ্য হবে। বিশেষ করে মেয়েদের জন্য। মেয়েরা ঘুরতে যেতে চাইলে অনেক পরিবার সহজভাবে নেয় না। সামাজিক সচেতনতা বাড়ালে চট্টগ্রামের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে পর্যটকের সংখ্যা আরো বাড়বে।
পূর্বকোণ/পিআর