দীর্ঘ দেড় মাসেও চালু করা যায়নি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের একমাত্র সিটিস্ক্যান মেশিনটি। যে কারণে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে দূর- দুরান্ত থেকে ছুটে আসা সাধারণ রোগীদের। শুধু আলোচ্য দেড় মাসই নয়, গত ১০২ দিনে দু’বার ত্রুটির কারণে ৬২ দিনই অচল ছিল প্রায় সাত কোটি টাকা মূল্যের মূল্যবান এ যন্ত্র। দীর্ঘদিন অচল হয়ে পড়ে থাকায় একদিকে কমমূল্যের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন গরীব-অসহায় রোগীরা। অন্যদিকে, রাষ্ট্রও হারাচ্ছে রাজস্ব।
যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, মেশিনটি দ্রুত সময়ের মধ্যে সচল করতে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে বারবার তাগাদা দেয়া হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৬ জুন প্রথমবার ত্রুটি দেখা যায় চমেক হাসপাতালের একমাত্র সিটিস্ক্যান মেশিনের। সেই দিন থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত ১৯ দিন সেবা বন্ধ থাকে। যদিও ২৫ জুন থেকে সচল করার পর রোগীরা সেবা পেলেও সর্বশেষ গত ৪ আগস্ট ফের ত্রুটি দেখা যায় মেশিনটিতে। এরপর থেকে বর্তমানে বন্ধ রয়েছে সিটিস্ক্যান সেবা। অর্থাৎ গত ৪৩ দিন ধরেই অকেজো হয়ে পড়ে থাকায় সেবা থেকে বঞ্চিত রোগীরা। সবমিলিয়ে গত ১০২ দিনের মধ্যে ৬২ দিনই বন্ধ ছিল সিটিস্ক্যান সেবা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, চমেক হাসপাতালেরর রেডিওলজি এন্ড ইমেজিং বিভাগের সিটিস্ক্যান মেশিনটি গত ৪ আগস্ট থেকে বন্ধ হওয়ার পর সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মেডিটেল লিমিটেডের প্রকৌশলীরা এসে দুই ধাপে দুটি যন্ত্র পরিবর্তন করে। প্রায় একমাস বন্ধ থাকার পর গত ২ সেপ্টেম্বর সচল করা হয়। একদিন পরীক্ষামূলক সচল থাকলেও পরদিন থেকে পুনরায় অচল হয়ে যায়। যা অদ্যবধি পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে।
পরীক্ষা নিরীক্ষার সাথে সংশ্লিষ্টরা বলেন, প্রতিদিন সকাল ৮ টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত গড়ে ৩০ থেকে ৫০ জনের পরীক্ষা করানো যেত। পরীক্ষা ভেদে মাত্র ২ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকায় এ সেবা গ্রহণ করত সাধারণ রোগীরা। কিন্তু বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার বা ল্যাবে ৩ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকায় এ পরীক্ষা করতে হয় রোগীদের।
চমেক হাসপাতালের রেডিওলজি এন্ড ইমেজিং বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সুভাষ মজুমদার পূর্বকোণকে বলেন, ‘গত ৪ আগস্ট থেকেই একমাত্র সিটিস্ক্যান মেশিনটি বন্ধ রয়েছে। এরমাঝে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের ইঞ্জিনিয়ার এসে ত্রুটি শনাক্ত করেন এবং দুই ধাপে জাপান থেকে যন্ত্রও আনা হয়। তা স্থাপনের পর একদিন পরীক্ষামূলক পর্যবেক্ষণে রাখা হলেও পরদিন থেকে পুনরায় বন্ধ হয়ে যায়। মূলতঃ মেকানিক্যাল সমস্যার কারণে চালু করা যাচ্ছে না। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে এক সপ্তাহ সময় চেয়েছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৯ সালের মার্চে দিকে চমেক হাসপাতালের তৃতীয় তলায় অবস্থিত রেডিওলজি এন্ড ইমেজিং বিভাগে স্থাপন করা হয় সিটিস্ক্যান মেশিনটি। প্রায় সাত কোটি টাকা মূল্যের এ মেশিনটি সরবরাহ করে ঢাকার মেডিটেল প্রাইভেট লিমিটেড নামে এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। চুক্তি অনুযায়ী মেশিনটির ওয়ারেন্টি রয়েছে ২০২৬ সাল পর্যন্ত। এছাড়াও মেশিনটি রক্ষণাবেক্ষনের জন্য পৃথক রক্ষণাবেক্ষন চুক্তি বা সিএমসি করা হয় প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে। তবে মেশিনটি চালু হওয়ার পর কিছুদিন বিচ্ছিন্নভাবে চালু থাকলেও বহুবার ত্রুটির কারণে সেবা বন্ধ ছিল সিটিস্ক্যানের। যে কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সাধারণ রোগীদের।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান পূর্বকোণকে বলেন, ‘দ্রুত সময়ের মধ্যে সিটিস্ক্যান মেশিনটি চালু করতে বারবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে। আশা করছি দ্রুতই চালু করা সম্ভব হবে।’
পূর্বকোণ/আরডি