অবশেষে বামনশাহী খালের সেই বাঁধটি অপসারণ করা হয়েছে। জলাবদ্ধতা প্রকল্পের আওতায় বামনশাহী খাল পুনঃখননের মাধ্যমে বাঁধটি অপসারণ করে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। একই সাথে এ খালের দূষিত পানি যাতে কুয়াইশ খালে না যায় সেজন্য ওইখালের মুখেও একটি বাঁধ দেওয়া হয়। ফলে নগরীর দূষিত তরল বর্জ্য হালদায় পড়া অনেকখানি বন্ধ হয়ে গেছে।
গত ১৬ বছর ধরে বামনশাহী খালে একটিমাত্র বাঁধেই মরে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল হালদা। যে বাঁধটির কারণে নগরীর বিশাল এলাকার শিল্প ও আবাসিক বর্জ্য হালদায় গিয়ে পড়েছে। এতে নদীর রুই জাতীয় মাছের প্রজনন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ছাড়াও ওয়াসার সুপেয় পানির উৎস ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ব্যাপক আশঙ্কা দেখা দেয়।
২০০৮ সালে অনন্যা আবাসিকের উত্তর-পশ্চিম কোণে বামনশাহী খালে বাঁধটি দিয়েছিল চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্র্তৃপক্ষ (সিডিএ)। অনন্যা আবাসিক এলাকাটি তৈরিকালে এ বাঁধটি দেওয়া হয়। বাঁধের কারণে পানি নিষ্কাষন বন্ধের পর খালের কমপক্ষে তিন কিলোমিটার এলাকা ভরাট হয়ে যায়। এরপর নগরীর বিশাল এলাকার শিল্প ও আবাসিক বর্জ্য বামনশাহী, কৃষ্ণখালী, কুয়াইশ ও খন্দকিয়া খাল হয়ে হালদায় পড়তো। এ নিয়ে দৈনিক পূর্বকোণে একাধিক সচিত্র প্রতিবেদক ও গোল টেবিল বৈঠকও আয়োজন করা হয়েছিল। বৈঠকে বামনশাহী খালের বাঁধটি অপসারণের পক্ষে মত দেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্র্তৃপক্ষের (সিডিএ) নির্বাহী প্রকৌশলী রাজিব দাশ দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘সিডিএ’র জলাবদ্ধতা প্রকল্পের আওতায় বামনশাহী খাল পুনঃখননের মাধ্যমে বাঁধটি অপসারণ করা হয়েছে। একই সাথে কুয়াইশ খালের মুখে যেখানে বাঁধ দিয়ে দূষণ বন্ধ করা হয়েছে সেখানে ১৫ ফুট প্রস্তের সড়ক নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে।’
রুই জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা। এটি বিশ্বে একমাত্র জোয়ার-ভাটা নদী যেখান থেকে রুই জাতীয় মাছের (রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিবাউশ) নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করা হয়। এছাড়াও নগরীর সুপেয় পানির প্রধান উৎস হালদা। এ নদী থেকে মোহরা পানি শোধনাগার প্রকল্প ও মদুনাঘাটস্থ শেখ রাসেল পানি শোধনাগার প্রকল্প থেকে দৈনিক ১৮ কোটি লিটার পানি উত্তোলন করে নগরীতে সরবরাহ করে চট্টগ্রাম ওয়াসা। হালদা নদী ও এর শাখা খালগুলোর পানি দিয়ে রাউজান, হাটহাজারী, ফটিকছড়ি ও মানিকছড়ি উপজেলার হাজার হাজার একর জমিতে কৃষি কাজ করে ফসল ফলায় কৃষক। এ অবস্থায় নদীর পানি দূষিত হলে হুমকিতে পড়বে মৎস্য প্রজনন, ওয়াসার সুপেয় পানি ও কৃষি কাজ।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. মো. মনজুরুল কিবরীয়া দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘শহরের বর্জ্যে ভয়াবহ দূষণ হচ্ছে হালদা। বিশেষ করে অক্সিজেন ও কূলগাঁও এলাকার শিল্পকারখানা ও আবাসিক বর্জ্য এতদিন সরাসরি এ নদীতে পড়েছে। ২০০৮ সালের আগে এসব বর্জ্য বামনশাহী খাল হয়ে কর্ণফুলী নদীতে যেতো। কিন্তু অনন্যা আবাসিকের পশ্চিম-উত্তর পাশের ড্রেনের সাথে বামনশাহী খালটি সংযুক্ত করে দেয় সিডিএ। এতে বামনশাহী খালের বর্জ্য আবাসিকের ড্রেনের মাধ্যমে কুয়াইশ খালে গিয়ে পড়েছিল। এরপর কুয়াইশ ও খন্দকিয়া খাল হয়ে বর্জ্য পড়তো হালদা নদীতে। অপরদিকে প্রতিবন্ধকতার কারণে বামনশাহীর খালে বিরাট অংশ ভরাট হয়ে যায়। এ অবস্থায় আমাদের দফায় দফায় দাবির প্রেক্ষিতে সিডিএ বামনশাহী খালের বাঁধটি অপসারণ করে। তাতে দূষণ থেকে অনেকখানি রক্ষা পেয়েছে হালদা।’
চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য অফিসার শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘বামনশাহী খালের বাঁধটি অপসারণ হওয়ায় হালদা দূষণের হাত থেকে অনেকটা রক্ষা পাবে। ভবিষ্যতে এ নদী যাতে দূষণের শিকার না হয় সেদিকে সংশ্লিষ্ট সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে।’
পূর্বকোণ/আরডি