চট্টগ্রাম রবিবার, ১২ জানুয়ারি, ২০২৫

নিরাপত্তার এত আয়োজনের মধ্যে আবার জাহাজে কেন ওয়াচম্যান!

নিজস্ব প্রতিবেদক 

১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ | ১:৫১ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দর সীমার মধ্যে প্রবেশকারী সকল বিদেশি জাহাজে চট্টগ্রাম বন্দরের ওয়াচম্যান সেল থেকে ওয়াচম্যান (পাহারাদার) নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। জাহাজে চুরি/ডাকাতি রোধে গত ২১ আগস্ট চট্টগ্রাম বন্দরের নিরাপত্তা বিভাগ থেকে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে, বিদেশি বন্দর থেকে কোন অতিরিক্ত নিরাপত্তা ছাড়াই চট্টগ্রাম বন্দর সীমানায় প্রবেশের পর কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী, নৌপুলিশ, র‌্যাব, বন্দরের নিজস্ব নিরাপত্তা বিভাগ থাকার পরেও কেন বেসরকারি কোন সংস্থার ওয়াচম্যান বাধ্যতামূলক নিতে হবে এমন প্রশ্নই উঠে এসেছে শিপিং এজেন্টসদের মধ্যে।

চট্টগ্রাম বন্দরের নিরাপত্তা বিভাগ থেকে গত ২১ আগস্ট জাহাজে বাধ্যতামূলক ওয়াচম্যান নেয়ার কথা উল্লেখ করে শিপিং এজেন্ট এসোসিয়েশনে চিঠি পাঠানো হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, চট্টগ্রাম বন্দরের মুরিং, বয়া, পোর্ট ফ্যাসিলিটি জেটিসমূহ ও বহির্নোঙরে অবস্থানরত জাহাজে ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ৬টি চুরি/ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এতে বিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। এরই প্রেক্ষিতে গত ৮জুন বাংলাদেশ কোস্টগার্ড, র‌্যাব-৭, নেভি, ডিসি পোর্টসহ অন্যান্য সংস্থার সাথে সভা করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয়- ‘যে কোন জাহাজ বন্দরে আগমনের সাথে সাথে চট্টগ্রাম বন্দরের ওয়াচম্যান সংক্রান্ত নিয়মাবলী ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত তথ্যাবলী জাহাজের এজেন্ট কর্তৃক জাহাজের মাস্টারকে অবহিত করতে হবে এবং এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের নিরাপত্তা বিভাগ সার্বিক সহযোগিতা করবে। জাহাজে বন্দরের ওয়াচম্যান সেল থেকে ওয়াচম্যান নেয়া বাধ্যতামূলক’।

শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ পূর্বকোণকে বলেন, জাহাজে ওয়াচম্যান নেওয়ার জন্য বা জাহাজের নিরাপত্তার জন্য যে সভা করা হয়েছিল সে ব্যাপারে আমাদের জানানো হয়নি। উপরন্তু একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে সেটি কার্যকর করা শুরু হয়েছে। কিন্তু বিদেশি জাহাজের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে সেটি অন্তত তিনমাস আগে জানানো প্রয়োজন। কারণ বিদেশি জাহাজগুলোর প্রিন্সিপালদের যেকোন সিদ্ধান্ত আগে থেকেই জানাতে হয়।

তিনি আরো বলেন, আমরা বুধবার (৩০ আগস্ট) বন্দরে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে চিঠি দিয়ে এ বিষয়ে নানা জটিলতার কথা জানিয়েছি। বন্দরসীমার মধ্যে কোস্টগার্ড, নোবাহিনী, নৌ-পুলিশ, র‌্যাবসহ বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব নিরাপত্তা কর্মীর পাশাপাশি জাহাজে অন বোর্ড কাস্টমস অফিসার ও শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটরের সুপারভাইজারও থাকে। এছাড়া জাহাজের নিজস্ব মেরিন ক্রু ও অফিসাররা তো থাকেই। এরপরও অতিরিক্ত ওয়াচম্যান নেয়া অযৌক্তিক। কিন্তু তারপরেও যদি বন্দর মনে করে অতিরিক্ত নিরাপত্তার জন্য ওয়াচম্যান প্রয়োজন তাহলে সেটি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হোক। ট্যারিফে ওয়াচম্যানের খরচ নির্ধারণ করা হোক। বন্দরের নিজস্ব নিয়োগে কিংবা সম্পূর্ণ সরকারিভাবে আলাদা ওয়াচম্যান বিষয়ক বিভাগ চালু হোক। কিন্তু কোন বেসরকারি সংস্থার নিরাপত্তা কর্মীদের ওয়াচম্যান বলে জাহাজে বাধ্যতামূলক করে তুলে দেওয়াটা নিয়মের মধ্যে পড়ে না। এছাড়া ওয়াচম্যান নেয়ার জন্য যে বাড়তি খরচ তা শিপিং এজেন্টরা বহন করতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সেটি প্রিন্সিপাল অনুমতি দিচ্ছে।

সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, ‘বহু বছর ধরে বন্দরের এনলিস্টেড ভেন্ডর থেকে প্রয়োজন অনুসারে জাহাজে ওয়াচম্যান দেওয়ার একটি প্রথা চলে আসছে। সেই ওয়াচম্যানদের শিপিং এজেন্ট কর্তৃক তদারকির সুযোগ থাকলেও বন্দরের ওয়াচম্যান সেল থেকে নেয়া ওয়াচম্যানদের ক্ষেত্রে সেই সুযোগ নেই। আর চট্টগ্রাম বন্দর শিপিং এজেন্ট এন্ড মেরিন কনট্রাক্টরস জাহাজ পাহারাদার (ওয়াচম্যান) বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড নামে কোন সংগঠনের সাথে আমরা পরিচিত নই। তাদের এজেন্ট হয়ে কেন বন্দর জাহাজে বাধ্যতামূলক পাহারাদার পাঠাবে। কেন বন্দর নিজস্বভাবে একটা ওয়াচম্যান এর পূর্ণাঙ্গ সেল তৈরি করছে না। যেখানে সরকারিভাবে ওয়াচম্যান নিয়োগ হবে, প্রশিক্ষণ হবে এবং বন্দর কর্তৃক বেতনভূক্ত হবে। এভাবে বাধ্যতামূলকভাবে ওয়াচম্যান জাহাজে দেয়া হলে যে বাড়তি খরচ হবে তা প্রকৃত অর্থে ভোক্তা পর্যায়ে গিয়েই পড়বে। এতে পণ্য পরিবহন খরচ বাড়বে’।

চট্টগ্রাম বন্দর মেরিন কনট্রাক্টর জাহাজ পাহারাদার কল্যাণ সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক মুনির হোসেন বলেন, ওয়াচম্যান বুকিং সেলের কতিপয় কর্মকর্তার ইন্ধনে চট্টগ্রাম বন্দর শিপিং এজেন্ট এন্ড মেরিন কনট্রাক্টরস জাহাজ পাহারাদার (ওয়াচম্যান) বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড নামে সংগঠনটির সৃষ্টি। এটি মূলত সমবায় সমিতি থেকে নিবন্ধন প্রাপ্ত। যার কার্যক্রম সমবায় সমিতি সংক্রান্ত। কিন্তু সংগঠনটি ট্রেড ইউনিয়ন সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করছে। যা ২০০৯ সালের বন্দর সংক্রান্ত শ্রম আইনের পরিবর্তনের পরিপন্থী। তারা কয়েকজন মিলে ওয়াচম্যান বুকিং সেলে অর্থের বিনিময়ে মানুষদের বন্দরের চাকরির নামে নিয়োগ দিচ্ছে। গত তিনমাস আগেও এমন এক থেকে দেড়শ মানুষকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। আমরা চাই বন্দরের কার্যক্রম ব্যক্তিস্বার্থে পরিচালিত না হয়ে বন্দরের স্বার্থে পরিচালিত হোক।

 

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট