চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ভেতরে এ যেন একখণ্ড শিশুপার্ক। বিকেল হতেই শিশুদের কোলাহলে মুখরিত হয়ে ওঠে পাহাড়ের নিচে নামহীন ছোট্ট পার্কটি। শিশুরা দোলনায় দোল খাচ্ছে, স্লিপারে উঠে খেলা করছে আবার একঝাঁক শিশু শেষভাগে নির্মিত চরকির দোলনায় ঘুরছে। পশু-পাখির অভয়ারণ্য চট্টগ্রামের একমাত্র এ চিড়িয়াখানায় বাঘ, ভাল্লুক, বানর, হরিণসহ বিভিন্ন প্রাণীর প্রতি যে শিশুদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে তা নয়, বরং এটি এখন শিশুদের চিত্তবিনোদনের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমও হয়ে উঠেছে। এ কারণে নগরীর অন্যসব শিশু পার্কের চেয়ে শিশু-কিশোর ও অভিভাবকদের পছন্দের তালিকায় প্রথম স্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা ও চিড়িয়াখানার ভিতরে শিশুদের জন্য ছোট পরিসরের পার্কটি। চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানাকে নান্দনিক ও দৃষ্টিনন্দন করতে ব্যাপক
উন্নয়নমূলক কাজ চলছে। এরমধ্যে মানুষের বিনোদন, শিশুদের শিক্ষা এবং গবেষণার জন্য চিড়িয়াখানাটিতে বাড়ানো হয়েছে পরিধি। সেই ধারাবাহিকতায় চিড়িয়াখানার পশ্চিমাংশে পাহাড়ের নিচে শিশুদের জন্য তৈরি করা হয়েছে ছোট্ট পরিসরের একটি পার্ক। যেখানে স্থাপন করা হয়েছে ২০টির বেশি দোলনা, চারটি স্লিপার, একটি চরকি দোলনাসহ বাঘ সিংহের মূর্তি। পার্কের এসব খেলনা ও স্থাপনা চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার সকল শ্রেণি- পেশার মানুষের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
কথা হয় বাচ্চাদের নিয়ে ঘুরতে আসা একাধিক অভিভাবকের সঙ্গে। তারা জানান, অপেক্ষাকৃত কম টাকায় শিশুদের আনন্দ দিতেই চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় আসেন তারা।
মঙ্গলবার সরেজমিনে চিড়িয়াখানায় গিয়ে দেখা যায়, সাপ্তাহিক ছুটির দিন না হওয়া সত্ত্বেও চিড়িয়াখানার ভেতরে পাহাড়ের নিচে শিশুদের জন্য নির্মিত পার্কটি শিশুদের কোলাহলে মুখরিত ছিল। এ যেন শিশুদের রাজ্য। প্রতিটি দোলনায় দোল খাচ্ছে শিশু-কিশোররা। পাশের স্লিপারগুলোতেও খেলা করে আনন্দ উপভোগ করছে তারা। স্লিপারে কে- কার আগে উঠবে, এ নিয়ে চলছে একে অন্যের সাথে প্রতিযোগিতা। দোলনায়ও দেখা যায় একই অবস্থা। এখানেও খালি নেই কোন দোলনা। তাই দোলনা দখল করতে প্রতিটি দোলনার আশপাশে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে অন্য শিশু ও সন্তানকে বসাতে তাদের অভিভাবকরাও দাঁড়িয়ে আছে। সুযোগ পেলেই বসিয়ে দিচ্ছেন নিজের সন্তানকে। তবে আনন্দে ভাটা পড়ে দোলনার সংখ্যা কম হওয়ায়।
ঘুরতে আসা অভিভাবকরা বলছেন, চিড়িয়াখানায় আসতে শিশুদের আগ্রহ বেশি দেখা যায় মূলত এখানে সাদা বাঘসহ নানারকম পশুপাখির পাশাপাশি আনন্দ পাওয়ার মত খেলার সুব্যবস্থা থাকায়। কিন্তু পার্কটি প্রয়োজনের তুলনায় ছোট। পার্কের পরিধি বাড়ানো দরকার।
লালখান বাজার থেকে আসা অভিভাবক আরজু মণি মোরশেদ বলেন, আমার ছেলেমেয়ের পছন্দের জায়গা এ চিড়িয়াখানা। অল্প টাকায় শিশুদের আনন্দ দিয়ে ঘরে ফিরতে পারি, এজন্যেই এখানে ঘুরতে আসি।
অপর এক অভিভাবক পলাশ দাশ বলেন, আমি থাকি রোজ ভ্যালি আবাসিকে। অফিস শেষে মাঝেমধ্যে বাচ্চাদের নিয়ে এখানে ঘুরতে আসি। কারণ বাচ্চারা এখানে আসলে আনন্দ পায়। চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ভালো দিক হচ্ছে, অন্যসব শিশু পার্কের চেয়ে টিকেট খরচ কম। একবার টিকেট কেটে ঢুুকলেই সব প্রাণী দেখে ভেতরে শিশুদের দোলনায় চড়াতে পারি। আবার পাহাড়ের উপর মনোরম পরিবেশে নির্মিত সিঁড়িতে উঠে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। ছবি তোলার জন্য আদর্শ জায়গা। পার্কের পরিধি আরো বাড়ালে ভালো হয়। কারণ প্রতিদিন বিকেলে শিশুদের সংখ্যা বাড়ে। এ শিশুরা দোলনা, স্লিপার দেখলে সেখানে খেলতে উৎসুক হয়ে উঠে। এতে যে শিশুরা দোলনা দখল করে তারা এটি ছাড়ে না। অন্য শিশুরা মন খারাপ করে পাশে দাঁড়িয়ে থাকে। অনেক শিশু কান্না জুড়ে দেয়।
পূর্বকোণ/আরডি