চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৪

‘আমাকে পুলিশে নিয়ে গেলে শেখ হাসিনা ফোন দিয়ে ছাড়াবে’

চবি সংবাদদাতা

২৮ আগস্ট, ২০২৩ | ৫:৪০ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ জাহাঙ্গীর ফজল ও নিরাপত্তা কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাককে মারধরের অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক রাজু মুন্সীর বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত রাজু মন্সি বলেন, ‘আমাকে পুলিশে নিয়ে গেলে শেখ হাসিনা ফোন দিয়ে ছাড়াবে। আমি শেখ হাসিনার রিজার্ভ ফোর্স।’

 

সোমবার (২৮ আগস্ট) ভিন্ন ভিন্ন সময় এসব ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিচার ও নিরাপত্তা চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

 

এদিকে মারধরের প্রতিবাদে সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখেন প্রকৌশল দপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীরা।

 

রেজিস্ট্রার বরাবর প্রকৌশল দপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের দেয়া অভিযোগপত্রে বলা হয়, সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাটা পাহাড় সড়কে রাজু মুন্সির নেতৃত্বে কতিপয় ছাত্র প্রধান প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর ফজলের উপর আক্রমণ করে। একইদিনে প্রশাসনিক ভবনের সামনে দ্বিতীয়বার তার শরীরে আঘাত করে। এছাড়া নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করে। প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয়ে গিয়ে বিভিন্নভাবে ভয় ভীতি প্রদর্শন করে।

 

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, গত বুধবার (২৩ আগস্ট) ২য় কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের রাস্তা এবং ড্রেনের কাজ পরিদর্শনকালে প্রধান প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের অকথ্য ভাষায় আক্রমনাত্মক ভঙ্গিতে গালিগালাজ করে রাজু মুন্সি। যার ফলে প্রকৌশল দপ্তরের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর মারাত্মক নিরাপত্তাহীনতা ও ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। এ বিষয়ে কোন প্রতিকার ও ন্যায়বিচার না পাওয়া পর্যন্ত প্রকৌশল দপ্তরের যাবতীয় কার্যক্রম থেকে আমরা বিরত থাকবো।

 

এ বিষয়ে প্রধান প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর ফজল বলেন, ‘কাটা পাহাড় এলাকা পরিদর্শনকালে রাজু মুন্সি তার দলবল নিয়ে আমার দিকে ধেয়ে আসে। আমাকে কিল-ঘুষি মারে এবং পরবর্তী সময়ে রেজিস্ট্রার অফিসের সামনেও অসংখ্য লোকের সামনে আমাকে মারতে ধেয়ে আসে। উপস্থিত লোকজন না থাকলে আমার প্রাণনাশের আশঙ্কা ছিল।’

 

তিনি বলেন, ‘আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। ক্যাম্পাসে মান-সম্মান নিয়ে চলা দায়। তাদের নানা দাবি-দাওয়া থাকে। তিনি দুই দিন আগেও একটি প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দেন। আমি বিষয়টা প্রক্টরকে অবহিত করেছিলাম।’

 

অপরদিকে চবির প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শেখ মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘রাজু মুন্সি সকালে আমার অফিসে এসে এক প্রহরীকে বলে আমি যেন তার জন্য ১০ হাজার টাকা রেডি রাখি। ৩০ মিনিট পরে এসে সে বলে- এখান থেকে বেরিয়ে যা, না হলে তোকে মারব। সে উত্তেজিত হয়ে গেলে আমি সেখান থেকে প্রক্টর অফিসে এসে বিষয়টি জানাই।’

 

তিনি আরও বলেন, ‘পরে প্রশাসনিক ভবনের সামনে আসলে সে আমাকে বলে আমি এখনও এখানে কেন আছি? একপর্যায়ে সে আমাকে ধাক্কা দেয়। আমি বিষয়টি উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারকে জানিয়েছি।’

 

জানতে চাইলে অভিযুক্ত শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রাজু মুন্সি বলেন, আমার সামনেই প্রধান প্রকৌশলী ঘুষের টাকা নিয়েছে। নিয়োগ সংক্রান্ত নানা অভিযোগ আছে নিরাপত্তা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। তারা ঘুষ গ্রহণ ও নিয়োগ সংক্রান্ত নানা অনিয়মে জড়িত। এছাড়া টেন্ডারও তার নিয়ন্ত্রণে। আমি এসব নিয়ে প্রতিবাদ করায় আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে। কারণ আমার প্রতিবাদের ভাষা একটু বাজে।

 

তিনি আরও বলেন, ‘তারা অভিযোগ দিয়েছে, আমার নামে আরও অভিযোগ হবে। এগুলো নিয়ে কোনো সমস্যা নাই। আমাকে পুলিশে ধরে নিয়ে গেলে শেখ হাসিনা ফোন দিয়ে আমাকে ছাড়াবে। কারণ আমি শেখ হাসিনার রিজার্ভ ফোর্স, ইলেকশনে আমাকে কাজে লাগবে।’

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কেএম নুর আহমদ এসব বিষয়ে বলেন, উপাচার্য আমাকে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছেন। আমরা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।

 

পূর্বকোণ/রায়হান/জেইউ/এসি/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট