চট্টগ্রাম শনিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২৪

সর্বশেষ:

স্টেশনরোডে এ কেমন অরাজকতা!

রাস্তায় নির্মাণ সামগ্রী- শ্রমিকদের ­­­ আবাসন, ফুটপাতে হকার

নিজস্ব প্রতিবেদক 

২৮ আগস্ট, ২০২৩ | ১২:০০ অপরাহ্ণ

­­­নগরীর স্টেশন রোড সড়কের একাংশ দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে বাসা। ড্রেন নির্মাণে নিয়োজিতরা থাকছে এই বাসায়। এই সড়ক ধরে আর কিছুটা সামনে গেলে দেখা মিলবে ইট, বালি ও ড্রেন সংস্কার করা আবর্জনার স্তূপ। সড়কে এত সব কিছুর পর পথচারীদের চলাচলের জায়গাটুকু আর নেই। ফলে দিনের অধিকাংশ সময় যানজট লেগেই থাকে এই সড়কে। ৭৫০ মিটারের দূরত্বের ৫ মিনিটের এই সড়ক পাড়ি দিতে কখনো কখনো সময় লাগছে আধ ঘণ্টার বেশি।

 

নগরীর নিউ মার্কেট থেকে পুরাতন স্টেশন রোড পর্যন্ত ড্রেন নির্মাণ করছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। কিন্তু ড্রেন নির্মাণের সময় এভাবে সড়কে নির্মাণ সামগ্রী রাখা ও বাসা নির্মাণ সিটি কর্পোরেশনের আইনের বহির্ভূত বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

অন্যদিকে, স্টেশন রোড সড়কের ফুটপাতের চার ভাগের মধ্যে তিন ভাগের বেশি অংশ হকাররা দখল করে রেখেছে। হকারদের দয়ায় পথচারীরা ফুটপাতে চলাচলের সুযোগ পান বলে জানান সরকারি সিটি কলেজের স্নাতক তৃতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী। তবে হাঁটার সময় পথচারীদের সঙ্গে ধাক্কা লেগে হকারদের কোন মালামাল পড়ে গেলে তার জন্য গালমন্দ, এমকি পথচারীদের হামলারও শিকার হতে হয় বলে জানান এই শিক্ষার্থী।

 

নগরীর নিউ মার্কেট মোড় থেকে পুরাতন রেল স্টেশন। কী নেই ৭৫০ মিটার দীর্ঘ এই সড়কে! পথচারীদের ভাষ্য মতে, চোরাই মোবাইল থেকে শুরু করে, মসজিদ থেকে চুরি হওয়া জুতা, সব ধরনের ফলমূল, বাচ্চাদের খেলনা, মোবাইলের পার্টস, শার্টপেন্ট, বাসার শৌ-পিসসহ আরো কত কিছু। শুধু পথচারীদের চলার জায়গা টুকু নেই। যে সামান্য একটু জায়গা ছিল, সেটিও সম্প্রতি কেড়ে নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ড্রেন সংস্কার নামের উন্নয়ন। বর্তমানে সড়কের পাশে রাখা হয়েছে সংস্কারের কাজের আবর্জনা, ইট-বালি। এছাড়াও শ্রমিকরা থাকার জন্য একটি অস্থায়ী বাসা নির্মাণ করা হয়েছে সড়ক দখল করে।

 

গতকাল (রবিবার) বিকেলে নিউ মার্কেট মোড় থেকে পুরাতন রেল স্টেশন সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায়, নিউ মার্কেট মোড় থেকে সড়কের পশ্চিম পাশ ধরে ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে গেলে প্রতি পদে পদে বাঁধাগ্রস্ত হবে পথচারীরা। তবে পথচারীদের হাঁটার এই জায়গায় দেখা যাবে বেশ কিছু মোবাইল ও মোবাইলের পার্টসের দোকান। এসবের মধ্যে অধিকাংশই নাকি চুরি ও ছিনতাই হওয়া মোবাইল। নতুন রেল স্টেশন থেকে পুরাতন স্টেশন পর্যন্ত সড়কের একাংশ দখল করে রাখা হয়েছে প্রাইভেট কার, মাইক্রো, ট্রাক  ও মিনি ট্রাক। ফুটপাত দখল করে রেখেছে ফলের আড়ৎদার, জুতার দোকান।

 

অন্যদিকে, একই সড়কের পূর্বপাশের ফুটপাতে বিক্রি হচ্ছে কাপড়, বাসাবাড়ির শৌ-পিস, বিভিন্ন ফলমূল, মোবাইলের যন্ত্রাংশ। এছাড়া, পূর্বপাশের সড়কের একাংশ দখল করে টং দোকান, পাশাপাশি মানুষের ভোগান্তি বাড়াচ্ছে চসিকের নির্মাণ সামগ্রী। সড়কের একপাশে রাখা হয়েছে ইট-বালি। রিয়াজউদ্দিন ফুটওভার ব্রিজের নিচের অংশে ড্রেন সংস্কারের কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে অস্থায়ী বাসা।

 

জানতে চাইলে ফুটপাত দখল করে ফলমূল বিক্রি করা বেলাল উদ্দিন নামের এক বিক্রেতা জানান, আমি তো আজ দোকান নিয়ে বসিনি। এখানে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করে আসছি। তাছাড়া, আমি তো একা বসিনি এখানে। আমার মত আরো অনেকেই এখানে বসে ব্যবসা করছেন।

 

ফুটপাতে ব্যবসার কারণে পথচারীদের চলাচলের সমস্যা হচ্ছে এটি উল্লেখ করলে তিনি আরো বলেন, আমি তো ফুটপাতের একপাশে বসে ফলমূল বিক্রি করছি। আশেপাশে হাঁটার জন্য আরো অনেক জায়গা রয়েছে।

 

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জসিম উদ্দিন বলেন, আমি সম্প্রতি এই সড়কের দায়িত্ব পেয়েছি। শনিবার এসব মালামাল নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বৃষ্টির কারণে এসব সরানো যায়নি। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে এসব মালামাল এখান থেকে সরিয়ে নেয়া হবে।

 

শ্রমিকদের জন্য বাসা নির্মাণের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, আশেপাশে থাকার জন্য শ্রমিকদের কোনো আবাসনের ব্যবস্থা করা যায়নি, ফলে অস্থায়ী একটি বাসা নির্মাণ করে আপাতত তারা সেখানেই থাকছে। আবাসনের ব্যবস্থা হলে এখান থেকে সরিয়ে নেয়া হবে।

 

পূর্বকোণ/আরডি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট