বঙ্গবন্ধু হত্যার ঘটনায় আরও তদন্ত করার দাবি জানিয়েছেন ইতিহাসবিদ ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস এর বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন।
রবিবার (২৭ আগস্ট) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত আলোচনা সভায় এমন দাবি জানান তিনি।
অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার বলেন, বাংলাদেশ বিপদমুক্ত নয়, ষড়যন্ত্র মুক্ত নয়। কেননা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানিরা আত্মসমর্পণ করলেও ষড়যন্ত্রকারীরা আত্মসমর্পণ করেনি। তার প্রমাণ ২১ আগস্টের বোমা হামলা। সুতরাং আবারও দাবি জানাচ্ছি, বঙ্গবন্ধু হত্যার ঘটনায় আরও তদন্ত করা হোক, শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হোক। তদন্ত কমিটি যদি না হয়, ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে যদি ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, তাহলে ১৫ আগস্টের মতো ঘটনা, ২১ আগস্টের মতো ঘটনা আবারও ঘটবে।
জাতীয় শোক দিবস ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে চবির সমাজবিজ্ঞান অনুষদ মিলনায়তনে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ (হলুদ দল)।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন মেজর রশীদের স্ত্রী জোবায়দা রশীদ। তিনি চট্টগ্রামের আন্ধা হাফিজের কাছে দোয়া নিতে এসেছিলেন। আন্ধা হাফিজ তাকে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পদ্ধতি শিখিয়ে দেন।
তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু তার শাসনামলের শুরুর দিকে ভুল করেছেন। তিনি পাকিস্তানি আমলাদের মাধ্যমে দেশ পরিচালনার কাজ শুরু করেন। এটা নিয়ে আলজেরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্সে ফিদেল কাস্ত্রো বঙ্গবন্ধুকে বলেছেন যে পাকিস্তানি আমলা দিয়ে যেন দেশ পরিচালনা না করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের মাধ্যমে দেশ পরিচালনা করতে হবে।’
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর করা কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন ছিল আসল শিক্ষা কমিশন। এরপরে অনেকগুলো কমিশন হলেও সেগুলোর গুনগত মান ছিল না। আমিও ১৯৯৭ সালের করা শিক্ষা কমিশনের সদস্য ছিলাম। কিন্ত, সেই কমিশনগুলো ভালো ছিল না। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা এখন হযবরল হয়ে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ২৫ জানুয়ারি ১৯৭৫ সালে বাকশাল করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। কারণ বঙ্গবন্ধু চাইতেন, বাংলাদেশের মানুষ ভালো থাকুক, সুখে থাকুক। তাদের কথা ভেবেই তিনি বাকশাল করতে চেয়েছিলেন। মোস্তাক বঙ্গবন্ধুকে বলেছিল, অত বাকশাল বাকশাল করো না। তখন বঙ্গবন্ধু তাকে বলেছিলেন, আমি বাকশালও করব, সমাজতন্ত্রও করব। কারণ বাংলাদেশের মানুষের অধিকার এতেই রক্ষা হবে।
আলোচনা সভায় ‘বঙ্গবন্ধু : রাষ্ট্রনায়কের সাফল্য ও মর্মন্তুদ ট্র্যাজেডি’ শিরোনামে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মহীবুল আজিজ।
বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শেখ সাদীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্বে করেন চবির হলুদ দলের আহ্বায়ক এবং কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. মো. সেকান্দর চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী এস এম খসরুল আলম কুদ্দুসী এবং বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন ইংরেজি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. সুকান্ত ভট্টাচার্য।
পূর্বকোণ/রায়হান/জেইউ/পারভেজ