চট্টগ্রাম রবিবার, ১২ জানুয়ারি, ২০২৫

সর্বশেষ:

সোনার ডিমপাড়া হাঁস লালদিয়ার চর!

লালদিয়ার চরের ৫২ একর জমিতে টার্মিনাল নির্মাণে আগ্রহী ডেনমার্কের ­­­ শিপিং প্রতিষ্ঠান মায়ের্কস লাইন

সারোয়ার আহমদ

২৭ আগস্ট, ২০২৩ | ১১:২৭ পূর্বাহ্ণ

২০২১ সালের ১ মার্চ অবৈধভাবে দখলে থাকা ২৩শ পরিবারকে উচ্ছেদ করে লালদিয়ার চর দখলমুক্ত করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এরপর সেখানে বালি-মাটি ফেলে পুরো ভূমি সমতল করা হয়। ৫২ একর জমির চারপাশে দেওয়া হয় সীমানা প্রাচীর। দীর্ঘদিন অবৈধ দখলে থাকা সেই লালদিয়ার চরই এখন বন্দরের জন্য ‘সোনার ডিমপাড়া হাঁসে’ পরিণত হয়েছে।

 

এর বড় কারণ- লালদিয়ার চরে টার্মিনাল তৈরিতে আগ্রহ দেখিয়েছে ডেনমার্কের বিখ্যাত শিপিং প্রতিষ্ঠান মায়ের্কস শিপিং লাইন। লালদিয়ার চরে টার্মিনাল নির্মাণের জন্য ডেনমার্কের প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে বলে জানিয়েছে। মায়ের্কস শিপিং লাইনের এই আগ্রহকে ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষও।

 

বিদেশি এই প্রতিষ্ঠানের আগ্রহ ও বিনিয়োগের বিষয়টি বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল গত ২২ আগস্ট সাংবাদিকদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ডেনমার্কের মায়ের্কস শিপিং লাইন লালদিয়ার চর নিয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে। জিটুজি ভিত্তিতে সেখানে টার্মিনাল তৈরি নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে তারা।  সেখানে মায়ের্কস শিপিং লাইন বিনিয়োগ করতে চায়।

 

রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল বলেন, লালদিয়ার চরে টার্মিনাল তৈরি করে চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে জয়েন্ট অপারেশন বা বিল্ড অপারেট এন্ড ট্রান্সফার পদ্ধতিতে কার্যক্রম পরিচালনা করতে চায়। তাদের আগ্রহ ও প্রস্তাব নিয়ে এরই মধ্যে আমাদের কারিগরি সমীক্ষার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

 

তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে আমরা যত কনটেইনার হ্যান্ডেল করি তার এক-তৃতীয়াংশই হলো মায়ের্কস শিপিংয়ের। সে হিসেবে এরইমধ্যে তারা দীর্ঘদিন ধরে অংশীদার হয়ে আমাদের সঙ্গে কাজ করছে। এখন তারা চাচ্ছে নিজস্ব টার্মিনাল করতে। আমার মনে হয় সেটি করলে আরও ভালো হবে। তাদের কার্যক্রম পরিচালনা আরও সহজ, সুন্দর ও মসৃণ হবে।

 

যদিও ডেনমার্কের প্রতিষ্ঠান মায়ের্কস শিপিং লাইনের পক্ষ থেকে এই বিনিয়োগ প্রস্তাব আসার আগে লালদিয়ার চরকে পাশ্ববর্তী পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের ব্যাকআপ ইয়ার্ড হিসেবে ব্যবহারের চিন্তা-ভাবনা করেছিল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে এবার এর চেয়ে আরও ভাল সুযোগ আসায় বন্দর কর্তৃপক্ষ তার সদ্ব্যবহার করতে চায়।

 

উল্লেখ্য, ১৯৭২ সালে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় বিমানবাহিনীর জহুরুল হক ঘাঁটি সম্প্রসারণের জন্য জায়গা অধিগ্রহণ করে ওই এলাকার লোকজনকে লালদিয়ার চরে স্থানান্তর করা হয়। দীর্ঘ চার যুগ সেখানে তারা বসবাস করেন। কর্ণফুলী তীরের অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ সংক্রান্ত এক রিট পিটিশনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ বাস্তবায়নে ২০২১ সালের ১ মার্চ লালদিয়ার চরের প্রায় ২৩শ পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়। এর মধ্য দিয়ে বন্দরের দখলে আসে ৫২ একর জায়গা।

 

এর আগে ২০০৫ সালে চট্টগ্রাম বন্দরের তৎকালীন ম্যাজিস্ট্রেট মুনীর চৌধুরী লালদিয়ার চরের একাংশ থেকে ৫০০ পরিবারকে উচ্ছেদ করেছিলেন। উদ্ধারকৃত জায়গাটি তুলে দেওয়া হয়েছিল দেশের এক শীর্ষ ব্যবসায়ীর প্রতিষ্ঠানকে। ইনকনট্রেড নামে বেসরকারি কনটেইনার ডিপো নির্মাণ করে বন্দরের সেই জায়গায় এক যুগ ধরে কার্যক্রম পরিচালনা করছে প্রতিষ্ঠানটি। সেই জায়গাটিও বন্দরের টার্মিনাল নির্মাণের জন্য একাধিকবার বিভিন্ন সভায় প্রস্তাব দিয়েছিলেন বন্দর ব্যবহারকারীরা।

 

পূর্বকোণ/আরডি

শেয়ার করুন