মোবাইল ফোন কখনো ছিনতাই হয় না। সবসময় হারিয়ে যায়। থানায় গিয়ে মুঠোফোন ছিনতাইয়ের কথা বললেও ছিনতাই মামলা নিতে আগ্রহী নয় পুলিশ। মামলা না হওয়ায় মুঠোফোন ছিনতাইকারীরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। থামছে না ফোন ছিনতাই। হারিয়ে যাওয়া কিংবা ছিনতাই হওয়া মুঠোফোন মাঝে মাঝে উদ্ধার করে পুলিশ। কিন্তু কার কাছ থেকে ফোনটি উদ্ধার হলো তা জানা যায় না।
গত ১১ আগস্ট নগরীর দুই নম্বর গেট এলাকায় বাসে ১০/১৫ জন যুবক মিলে বাসযাত্রী তানভীরের মুঠোফোনটি ছিনতাই করে। পাঁচলাইশ থানায় গেলে বিয়ষটি সাধারণ ডায়েরি হিসাবে নথিভুক্ত করেন কর্তব্যরত ডিউটি অফিসার এএসআই শেখ জামাল।
ঘটনার শিকার মোহাম্মদ তানভীর চৌধুরী জানান, তিনি পেশায় ব্যবসায়ী। গত ১১ আগস্ট বিকেলে দুই নম্বর গেট থেকে বন্ধু সামিসহ একটি বাসে (চট্টমেট্টো-ছ-১১-৩৪০২) উঠেন। একই সময়ে ১০/১৫ জন যুবক একসাথে বাসে উঠে। তানভীর তার আইফোন ১৩ মডেলের মোবাইল সেটটি হাতে ধরে রেখেছিলেন। বন্ধু সামি ভাড়া দিচ্ছিল। বাসটি ষোলশহর পৌঁছার আগেই হঠাৎ করে একজন তার মুঠোফোনটি টান দিয়ে নিয়ে যায়। ভিড়ের মধ্যে ফোনটি কে নিয়েছে তা বুঝতে পারেননি।
এ সময় তানভীর চিৎকার করে বলেন, ‘আমার মোবাইলটি কে জানি একজন টান দিয়ে নিয়ে ফেলছে। ড্রাইভার বাস থামাও, ছিনতাইকারি বাসেই আছে’। কিন্তু চালক বাস থামায়নি। এরমধ্যে যুবকদের একজন বলে উঠলো, মোবাইল নিয়ে ফেলছে তাতে কি হয়েছে, বাস থামবে না। পরে ষোলশহর স্টেশন গিয়ে বাসটি থামলে যুবকদের সবাই নেমে যায়। কিছুক্ষণ পর এক বন্ধুর মুঠোফোন থেকে ছিনতাই হওয়া মুঠোফোনের নম্বরে ফোন দিলে অপর প্রান্ত থেকে একজন বললেন, তিনি সানমার ওশান সিটির সামনে আছেন। আসলে মোবাইলটি দিয়ে দেবেন। পরে মুঠোফোনটি বন্ধ করে দেয়া হয়।
মুঠোফোন ছিনিয়ে নেয়ার বিষয়টি মামলা করতে পাঁচলাইশ থানায় গেলে কর্তব্যরত ডিউটি অফিসার মামলা নিতে রাজি হননি। তানভীরকে একটি সাধারণ ডায়েরি করতে পরামর্শ দেন।
তানভীর বললেন, আমার মোবাইল তো হারায়নি। ছিনতাই করা হয়েছে। তখন ডিউটি অফিসার বললেন, আপনি তো কাউকে চিনেন না। কার বিরুদ্ধে মামলা করবেন। পরে অগত্যা মোবাইল হারানোর একটি সাধারণ ডায়েরি করেন তানভীর।
পাঁচলাইশ থানায় দায়ের করা সাধারণ ডায়েরিতে উল্লেখ করা হয়, ১১ আগস্ট বিকেল পাঁচটায় পাঁচলাইশ থানার শুলকবহর ওয়ার্ডের ষোলশহর দুই নম্বর গেট এলাকা থেকে ফোনটি নিজের অজান্তে হারিয়ে গেছে। অনেক খোজাখুঁজি করেও কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। খোজাখুঁজি অব্যাহত আছে। বিষয়টি ভবিষ্যতের জন্য সাধারণ ডায়েরি করে রাখা একান্ত প্রয়োজন।
মামলাটি থানায় ডায়েরি নথিভুক্ত করেন ডিউটি অফিসার এএসআই শেখ জামাল। ছিনতাইয়ের মামলা সাধারণ ডায়েরি হিসাবে নথিভুক্ত করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এএসআই জামাল জানান, তিনি আমাকে ছিনতাইয়ের কথা বলেননি হয়তো। বললে, ছিনতাইয়ের মামলায় নথিভুক্ত করা হত।
তানভীরের দায়ের করা সাধারণ ডায়েরি তদন্ত করছেন, পাঁচলাইশ থানার এসআই রফিকুল ইসলাম। গত রবিবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। একটু সময় লাগবে। এর আগে পাঁচলাইশ দি কিং অব চিটাগাং কমিউনিটি সেন্টারে একটি অনুষ্ঠানে পাঞ্জাবির পকেট থেকে চুরি হয় একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আবুল কাশেম নওশাদ সাইদের আইফোন ১৩ সিরিজের একটি মুঠোফোন। পুলিশ যথারীতি সেটিও হারানো ডায়েরি হিসাবে থানায় নথিভুক্ত করে।
তানভীর কিংবা নওশাদ দুইজনের কেউ তাদের মুঠোফোনের হদিস এখনো পাননি। এসআই রফিকুল বলেন, মুঠোফোনগুলো ব্যবহার না করলে পাওয়ার সম্ভাবনা কম।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, মুঠোফোন ছিনতাই কিংবা চুরি সংক্রান্ত বিষয়গুলো অধিকাংশ সময় সাধারণ ডায়েরি হিসাবে থানায় নথিভুক্ত করা হয়। প্রতিদিন নগরীর থানাগুলোতে অন্তত অর্ধশতাধিক মোবাইল চুরি কিংবা ছিনতাই সংক্রান্ত অভিযোগ আসে। সবগুলো মামলা নেয়া হলে তা তদন্তে দীর্ঘ সময় পার হয়। ছিনতাই কিংবা চুরি হওয়া দামি ফোনগুলো পার্শ্ববতী দেশে পাচার হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে পাচার হওয়া ফোনসেট পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। মামলা নিলে তা নিস্পত্তি করা অনেকটা কঠিন হবে। তাই মোবাইল সংক্রান্ত বিষয়গুলো হারানো ডায়েরি হিসাবে নথিভুক্ত করে দায় এড়ানো হয়।
পূর্বকোণ/আরডি