চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪

ফের ছিনতাইয়ে চাকমা রুবেলের গ্রুপ

নাজিম মুহাম্মদ

২৩ আগস্ট, ২০২৩ | ১১:৫৫ পূর্বাহ্ণ

সাত যুবকের ছবি দেয়া একটি পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গত তিনদিন ধরে ভাইরাল। অথচ উদ্বিগ্ন নাগরিকদের স্বস্তি দিতে ব্যবস্থা নেয়নি নগর পুলিশ। সচেতন নাগরিকের অভিযোগ ‘এরা নির্বিঘ্নে প্রতিদিন ছিনতাই করছে। পুলিশ ওদের ধরে না’। শাহরিয়ার মামুন নামে এক যুবকের গত তিনদিন আগে তার ফেসবুক ওয়ালে সাত যুবকের ছবি দিয়ে লিখেন, এদেরকে যারা চিনেন না চিনে রাখুন। তারা সুযোগ বুঝে বাসে উঠে যাত্রীদের পকেটমারা থেকে শুরু করে মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়া সবই করে। আবার কেউ প্রতিবাদ করলে একসাথে জড়ো হয়ে প্রতিবাদকারীকে মারধর করে। এরা থাকলে কেউ বাসে উঠবেন না। ১২-১৪ জনের সংঘবদ্ধ এ গ্রুপটি এক সাথেই বাসে উঠে ছিনতাই করে। একই ছবি দিয়ে অভিজিৎ নামে এক ব্যক্তি লিখেছেন এরা অনেকদিন ধরে নিউ মার্কেট থেকে টাইগারপাস পর্যন্ত দুই নম্বর বাসে ছিনতাই করে আসছে। আমিও তাদের হেনস্তার শিকার হয়েছি। প্রতিবাদ করায় আমাকে খুবই মেরেছে। সবাই এদের চিনে রাখুন। এরা বাসে থাকলে কেউ বাসে উঠবেন না। ওরা ১২-১৪ জন একসাথে থাকে। প্রতিবাদ করলে দুর্ব্যবহার করে, গায়ে হাত  তোলে। সবাই সাবধানে থাকবেন। আশা করছি প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। 

 

তবে কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (ওসি) জাহেদুল কবির জানান,  ফেসবুকের ছবিটি আমি দেখেছি। যাদের ছবি দেয়া হয়েছে ওরা ছিনতাইয়ে জড়িত। এ গ্রুপটির দলনেতা রুবেল প্রকাশ চাকমা রুবেল (৩২)। রুবেল নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের মুছাপুর গ্রামের মৃত আবদুল মালেকের ছেলে। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে দশটায় পুরাতন রেল স্টেশন এলাকা থেকে চাকমা রুবেলসহ সাতজনকেই গ্রেপ্তার করেছিলাম। ওই সময় রুবেল সদরঘাটের উত্তর নালাপাড়ার গুরা সওদাগরের বাসায় ভাড়া থাকত।  গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছিল, গভীর রাত এবং ভোরে চলাচলরত বাসগুলোতে যাত্রীর সংখ্যা কম থাকে। মূলত ওই সময়ে বাসে উঠে তারা ছিনতাই করে। শুধু নগরীতে নয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে, সীতাকুণ্ড, ফৌজদারহাট, মইজ্জ্যারটেক, পটিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাই করে।

 

ওসি জাহেদুল জানান, যে ছবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে সেখানে চাকমা রুবেলসহ গত ফেব্রুয়ারিতে গ্রেপ্তার হওয়া সাতজনই আছে। তারা জামিনে এসে ফের ছিনতাইয়ে জড়িয়েছে এমনটি ধারণা করা হচ্ছে।

 

ওসি জাহেদুল বলেন, যে সাতজনের ছবি দেখা যাচ্ছে তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। দলনেতা চাকমা রুবেলের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে ১৫টি। বাকি ছয়জনের মধ্যে আল আমিনের দুটি, রমজান হোসেন রুবেলের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনসহ আটটি, শাহাদাৎ হোসেন বাবুর তিনটি, বাদশার একটি, দ্বীন ইসলাম প্রকাশ মুন্নার বিরুদ্ধে দুটি এবং মনিরুল হোসেনের বিরুদ্ধে চারটি মামলা রয়েছে। তাদেরকে গ্রেপ্তারে  আমরা কাজ করছি।  

 

এদিকে ফেসবুকে সাত ছিনতাইকারীর ছবি ছড়ানোর পর শতাব্দি রায় নামে একজন লিখেছেন দুই দিন আগে দুই নম্বর গেট পুলিশ বক্সের সামনে থেকে বাসের জানালা দিয়ে ফোন টান দিয়ে নিয়ে গেছে। যার ফোন সে পিছনে পিছনে দৌড়ালেও পুলিশ সুখ-দুঃখের গল্প করছিল বসে বসে। জাবেদ বিন রশিদ নামে একজন লিখেছেন, এই চক্রটা গত বছরের অক্টোবর মাসে বাদুরতলা বড় গ্যারেজের সামনে এক নম্বর গাড়ির ভেতর থেকেই আমার মোবাইলটা ঝাপটা মেরে নিয়ে দ্রুত নেমে যায়। পরে অবশ্য চকবাজার থানা পুলিশ মোবাইলটি উদ্ধার করেছিল।

 

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশকে উদ্দেশ্য করে সাবরিনা হক লিখেছেন, আপনাদের এই চোখে পড়ে না। সাধারণ জনগণের দুর্ভোগের শেষ নেই, এসব ছিনতাইকারীর জন্য। হাসান মুরাদ নামে একজন লিখেছেন, এদেরকে আমি দেখেছি। জিইসি মোড় থেকে একজনের মোবাইল নিয়েছে। এরাই সেই ছিনতাইকারি। এরা ১০/১২ জন মিলে ছিনতাই করে। 

 

নাইম আহমেদ নামে একজন লিখেছেন, এরা সবসময় নিউ মার্কেট এলাকায় থাকে। তার উত্তরে এ আহমেদ সাকিব নামে একজন লিখেছেন, ওরা দুই নম্বর গেট এলাকায়ও থাকে।

 

জানতে চাইলে নগর পুলিশের উত্তর জোনের উপ-কমিশনার মোখলেসুর রহমান জানান, কয়দিন আগেও  ছিনতাইয়ের অভিযোগে পাঁচজনকে  গ্রেপ্তার করা হয়। ছিনতাইকারিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ কাজ করছে। 

পূর্বকোণ/আরডি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট