সন্দ্বীপে এবার যাত্রী পরিবহন শুরুর দাবি
প্রতিবন্ধকতায়ও পণ্য পরিবহনে জনপ্রিয় হচ্ছে রাসমনি ঘাট
স্বাধীনতার পর থেকেই চট্টগ্রাম শহর থেকে সরাসরি নৌ-রুট চালুর দাবি জানিয়ে আসছিল সন্দ্বীপের বাসিন্দারা। দক্ষিণ কাট্টলী রানি রাসমনি ঘাট থেকে সরাসরি পণ্য পরিবহণের মাধ্যমে তাদের দাবি কিছুটা হলেও পূরণ হয়েছে। ঘাট ইজারাদারের উদ্যোগে বেসরকারিভাবে প্রতিদিন একটি করে বড় নৌকায় পণ্য আনা নেওয়া করা হচ্ছে এই রুটে। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে সন্দ্বীপে পণ্য পাঠানো সম্ভব হওয়ায় জনপ্রিয়তা পাচ্ছে এ ঘাটটি। এখন এ রুটে সরাসরি যাত্রী পরিবহন করার দাবি সন্দ্বীপের বাসিন্দাদের। কিন্তু অবকাঠামো ও রাস্তা নির্মাণ এবং খালের নাব্যতা সংকটসহ নানা সমস্যার কারণে পুরোপুরি চালু করা যাচ্ছে না এই ঘাট।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডবিøউটিএ) চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ এই রুটটি পুরোপুরি চালু করতে চায়। কিন্তু ঘাটের সংস্কার কাজ করতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। বিআইডবিøউটিএ চট্টগ্রামের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবও পেশ করা হয়েছে। ঘাটটির উন্নয়ন কাজ শেষ করে পুরোপরি চালু করা হলে কুমিরা ঘাট দিয়ে চলাচলে সন্দ্বীপবাসীর যে ভোগান্তি তা দূর হবে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম শহর থেকে সরাসরি নৌপথে স্বল্প সময়ে আসা-যাওয়া করতে পারবেন সন্দ্বীপে র বাসিন্দারা।
গতকাল রানি রাসমনি ঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, সন্দ্বীপের উদ্দেশ্যে অপেক্ষমাণ নৌকায় পণ্য লোড করতে ব্যস্ত শ্রমিকরা। প্রতিদিন দিনের বেলা জোয়ারের সময় একটি করে পণ্যবাহী নৌকা আসা-যাওয়া করছে এ রুটে। প্রতিটি নৌকায় ৫০ থেকে ৬০ টন মালামাল পরিবহন করা যায়।
ব্যবসায়ী মহিদুল ইসলাম এসেছেন পণ্য পাঠাতে। প্রতিদিন এ রুটে সন্দ্বীপে আইসক্রিমের চালান পাঠান তিনি। নৌপথে সময় কম এবং ঘাটে সহজে পণ্য নিয়ে আসতে পারায় এ রুটটি তার প্রথম পছন্দ। তিনি বলেন, খরচ সামান্য বেশি হলেও দুই ঘণ্টা আগে পণ্য পৌঁছে যায় সন্দ্বীপে । এছাড়া ঘাটে পণ্য আনতেও সময় কম লাগে। কুমিরা ঘাট দিয়ে পণ্য পাঠালে প্রায় সারাদিন চলে যায়।
সন্দ্বীপের এরশাদ মার্কেটে নিজের দোকান রানা এন্টারপ্রাইজে স্টেশনারি পণ্য পাঠাতে এসেছে সাইফুল ইসলাম রাহাদ। তিনি বলেন, খুব সহজেই এ রুটে পণ্য পরিবহন করতে পারি। যাত্রী পরিবহনের ব্যবস্থা করলে আরও জমে ওঠবে এই ঘাট। এরমধ্যে পণ্যবাহী নৌকায় চলাচলও শুরু করেছেন অনেক যাত্রী। এদের একজন মুছাপুর সেনের হাট এলাকার কালাচাঁদ এসেছেন বাড়ি ফিরতে। আড়াইশ টাকায় টিকেট কাটলেন সন্দ্বীপে পাড়ি দিতে।
পূর্বকোণকে তিনি বলেন, ফইল্যাতলি বাজারে ভাইয়ের বাসায় বেড়াতে এসেছিলাম। এ ঘাট দিয়ে আসা-যাওয়ায় খরচ ও সময় দুটাই কম লাগে। তিনি আরও বলেন, স্পিড বোটে করে যাত্রী পরিবহণ করা হলে আরও ভাল হবে। খুব সহজেই অল্প সময়ে নগরী থেকে সন্দ্বীপে আসা-যাওয়া করা যাবে। সাধারণ যাত্রীদের দাবি বর্তমান অবস্থায় অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত এ ছয় মাস স্পিট বোটে এ রুটে নিয়মিত যাত্রী পরিবহন শুরু করা হোক। এতে লাভবান হবেন নগরীতে বসবাসরত সন্দ্বীপের লক্ষ লক্ষ বাসিন্দা।
রাসমনি ঘাটের ইজারার দায়িত্বে থাকা মো. নাজিম উদ্দিন বলেন, ঘাটে এখনও কোন অবকাঠামো বা স্থাপনা নির্মাণ করা হয়নি। সুপেয় পানির কোন ব্যবস্থা নেই। খালের একপাশে হলেও সড়ক নির্মাণ করা প্রয়োজন। যাতে সহজেই যাত্রী চলাচল এবং পণ্য নিয়ে নৌকায় ওঠা যায়। খালের স্লইস গেটটি সচল না থাকায় পলি জমে যাচ্ছে। এছাড়া দুপাশে জমানো ড্রেজিংয়ের মাটি নেমে ভরাট হয়ে যাচ্ছে খাল। খালের সম্মুখভাগ ড্রেজিং না করায় পণ্য নিয়ে খালে নৌকা ঢুকতে সমস্যা হচ্ছে। তারপরও যাত্রীদের দাবির প্রেক্ষিতে এ অবস্থায় শীত মৌসুমে স্পিড বোট চালুর চেষ্টা করবেন বলে তিনি জানান।
বিআইডব্লিউটিএ বন্দর ও পরিবহন বিভাগ, চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক নয়ন শীল পূর্বকোণকে বলেন, প্রাথমিকভাবে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নৌ চলাচলের উপযুক্ত করা হয়েছে ঘাটটি। পর্যায়ক্রমে এটিকে নগরীর অন্যতম বড় নৌ ঘাটে পরিবর্তন করা হবে। এর মধ্যে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাব পাশ ও প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ পেলে রাস্তা ও অবকাঠামো নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় সব উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করা হবে। তিনি আরও বলেন, বিআইডব্লিউটিএ একটি ড্রেজার খালটি চলাচলের উপযুক্ত রাখতে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। তবে বর্ষাকাল হওয়াতে খালের সম্মুখভাগে স্রােতের কারণে ড্রেজিং করা সম্ভব হচ্ছে না।
পূর্বকোণ/আরডি