চট্টগ্রাম শনিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২৪

সর্বশেষ:

সেলাই শিখে পথের দিশা পেয়েছেন ওরা

মরিয়ম জাহান মুন্নী

২০ আগস্ট, ২০২৩ | ১১:৫৫ পূর্বাহ্ণ

পশ্চিম ষোলশহর বার্মা কলোনির ইসমত আরা বেগম (৩২) স্বাবলম্বী হওয়ার আশায় দেড় বছর আগে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর থেকে দর্জির প্রশিক্ষণ নেন। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে একটি সেলাই মেশিন কিনতে পারেননি। যে কারণে কাজ শিখেও বেকার ছিলেন তিনি। আফসোস ছিল একটা সেলাই মেশিনের জন্য। এবার ইসমত আরা বেগমের সেই দুঃখ ঘুচলো। প্রশিক্ষণের দুই বছর পর মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের ডাক পড়লো। জানালেন সুখবর। তিনি সংস্থাটির পক্ষ থেকে একটি সেলাই মেশিন অনুদান হিসেবে পাচ্ছেন। খবরটা শুনে খুশিতে আত্মহারা ইসমত আরা। শুধু তিনিই নয়, এবছর বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ৯৩তম জন্মবার্ষিকীতে জাতীয় মহিলা সংস্থা এবং মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর চট্টগ্রামের পক্ষ থেকে অসহায়, দুস্থ নারীদের ৫০টি পা-চালিত সেলাই মেশিন উপহার দেয়া হয়। 

 

চট্টগ্রাম মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর সংশ্লিষ্টরা জানান, সবগুলো ট্রেডের মধ্যে মেয়েদের দর্জি প্রশিক্ষণের প্রতি আগ্রহ বেশি। এখানে সফলতার হারও বেশি। প্রতিবছর চার সেশনে চার শতাধিক নারী এখান থেকে পাঁচটি বিষয়ের উপর প্রশিক্ষণ নিয়ে বের হয়। তাদের মধ্যে যারা আর্থিকভাবে দুর্বল এবং অসহায়- বিধবা, স্বামী পরিত্যক্ত ও দুস্থ- এমন নারীদের বাছাই করে স্বাবলম্বী হতে তাদের হাতে তুলে দেয়া হয় সেলাই মেশিন। তেমনি হামজারবাগ মোমেন বাজারের আমেনা বেগম, চকবাজারের রাবেয়া খাতুন, আগ্রাবাদের নাছিমা বেগম ও শিক্ষার্থী নাহিদাসহ ৫০ নারীকে এ বছর ৫০টি সেলাই মেশিন দেয়া হয়। এদের মধ্যে কেউ স্বামী পরিত্যক্ত, বিধবা ও দুস্থ নারী। সেলাই মেশিন পেয়ে আশায় বুক বাঁধছেন তারা।

 

আবেগতাড়িত কণ্ঠে ইসমত আরা বেগম বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার পর শ্বশুরবাড়ির মানুষজন আমাকে বের করে দেন। বাধ্য হয়ে উঠি বাবার বাড়ি, ভাইদের উপর। ভাইরাও দিনে এনে দিনে খান। তার উপর আমি। তাদের সংসারে নিজেকে বোঝা মনে হতো। কিন্তু কোথাও যাওয়ার উপায় ছিল না। পাশের এক ভাবীর মায়া হয়। তার সহযোগিতায় এখানে সেলাই শেখার প্রশিক্ষণের কথা জানতে পারি। তারপরই কাজ শিখতে আসি। প্রথমবার যখন আসি তখন ভর্তির সুযোগ পাইনি। পরেরবার ভর্তি হই। আগে থেকে সেলাইয়ের সামান্য কিছু কাজ আমার জানা ছিল। এখানে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কাজটি খুব ভালোভাবে শিখতে পারি। এরপর সেই ভাবীর মাধ্যমেই এলাকার টেইলার্সের দোকানে বিয়ে- গায়ে হলুদের কোনো বড় অর্ডার পড়লে দোকানে দৈনিক মজুরি হিসেবে দর্জির কাজের ডাক পাই। আবার এবছর ঈদের সময় মাত্র এক মাসের জন্য এসব দোকানে সেলাইয়ের কাজও করি। এরপর আবার বেকার হয়ে পড়ি। সেলাই মেশিনটি পেয়ে আবারো সুন্দরভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখছি।

 

হামজারবাগের আমেনা বেগম বলেন, বাবার অভাবের সংসারে বেশি পড়ালেখা করতে পারিনি। এরপর বিয়ে দেয় আরেক গরিব পরিবারে। সেখানেও অভাব। আবার স্বামী করতো নেশা এবং অন্য নারীতে আসক্ত ছিল। আমাকে খুব মারতো। পরে আরেক জনের বউ পালিয়ে এনে বিয়ে করে। এখন আমরা আলাদা। সংসার চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে। তাই এখানে কাজ শিখতে এসেছি। আমি ব্লক বাটিক এন্ড প্রিন্টিংয়ের কাজ শিখেছি। আগেই সেলাইয়ের কাজ জানা ছিল। তবে টাকার অভাবে একটা মেশিন কিনতে পারিনি। মহিলা সংস্থা থেকে সেলাই মেশিন পেয়েছি। আগে থেকেই আমি অনলাইনে বাচ্চাদের পোশাক বেচাকেনা করে আসছি। এখন আরো সুবিধা হয়েছে। বাচ্চাদের পোশাক সেলাই করে এবং তাতে হাতের কাজ করে বিক্রি করতে পারব।

 

অনার্স পড়ুয়া নাহিদা সুলতানাও এখানে কাজ শিখেছেন। আর্থিকভাবে দুর্বল হওয়ায় তাকেও এ অনুদান দেয়া হয়েছে। নাহিদা পড়াশোনার পাশাপাশি স্বাবলম্বী হতে কাজ করছেন মেয়েদের পোশাক সেলাইয়ের। আবার অনলাইনে সেই পোশাকগুলো বিক্রি করেন।

 

মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাধবী বডুয়া বলেন, অন্যান্য ট্রেডের চেয়ে মেয়েদের সেলাইয়ের কাজের প্রতি আগ্রহ বেশি। তাই সেলাই প্রশিক্ষণ কোর্সে বেশি অনুদান দেয়া হয়। এখানে প্রশিক্ষণ নেয়ার পর ৯৫ শতাংশই স্বাবলম্বী হতে পারেন। কারণ প্রশিক্ষণ নিয়ে কেউ বসে থাকেন না। কেউ ঘরে বসে আয় করেন। অনেকে বিভিন্ন পোশাক কারখানায় চাকরি করেন।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট