আজ বিশ্ব মশা দিবস। বাংলাদেশে দিবসটি এমন একটি সময়ে পালিত হচ্ছে যখন ডেঙ্গুর পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। চট্টগ্রাম শহরের সাতটি ওয়ার্ডে মশার ঘনত্ব ৫০ শতাংশের উপরে। সাধারণ অবস্থায় মশার ঘনত্ব ২০ শতাংশের নিচে থাকে।
১৮৯৭ সালের ২০ আগস্ট চিকিৎসক রোনাল্ড রস অ্যানোফিলিস মশাবাহিত ম্যালেরিয়া রোগের কারণ আবিষ্কার করেছিলেন। ১৯৩০ সাল থেকে এই দিনে ‘মশা দিবস’ পালন করা হয় মূলত চিকিৎসক রোনাল্ড রসের আবিষ্কারকে সম্মান জানানোর জন্য। এই আবিষ্কারের জন্য তিনি নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, পৃথিবীতে তিন হাজারের বেশি প্রজাতির মশা রয়েছে; যদিও মাত্র তিন ধরনের মশা মানুষের মধ্যে রোগ ছড়ানোর জন্য দায়ী। এনোফিলিস মশা একমাত্র প্রজাতি, যা ম্যালেরিয়ার জীবাণু বহন করে। কিউলেক্স জাতীয় মশারা ওয়েস্টনাইল ভাইরাস, জাপানিজ এনসেফালিটিস ভাইরাস, সেন্ট লুই এনসেফালিটিস ভাইরাস এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে ফাইলেরিয়াসিস ও এভিয়ান ম্যালেরিয়ার জীবাণু বহন করে। তৃতীয় প্রজাতির মশা, যারা ‘এডিস’ বা ‘টাইগার মসকিউটো’ নামে পরিচিত; ইয়েলো ফিভার, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া এবং জাপানিজ এনসেফালাইটিস ভাইরাস বহন করে।
বাংলাদেশে জানুয়ারি হতে গতকাল পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৪৬৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে ৯৭ হাজার ৮৬০ জন। ২০২৩ সালে, বিশ্বব্যাপী ৩০ লাখেরও বেশি মানুষ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছে। ১,৫০০ জনেরও বেশি ডেঙ্গুজনিত মৃত্যু হয়েছে। আর্জেন্টিনা, পেরু এবং বাংলাদেশ তাদের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। প্যারাগুয়ে চিকুনগুনিয়ার ক্ষেত্রে মারাত্মক অবস্থা মোকাবেলা করছে। বিশ্ব মশা দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য হলো মশাবাহিত রোগমুক্ত বিশ্ব গড়ে তোলা।
চট্টগ্রাম জেলা কীটতত্ত্ববিদ এনতেজার ফেরদৌস পূর্বকোণকে বলেন, তারা মূলত জেলায় কাজ করলেও এবার চট্টগ্রাম শহরের ২১টি ওয়ার্ডে কাজ করেছেন। তার মধ্যে সাতটি ওয়ার্ডে মশার ঘনত্ব পেয়েছেন ৫০ শতাংশ। মাত্র একটি ওয়ার্ডে ২০ শতাংশ মশার ঘনত্ব পাওয়া গেছে। বাকিগুলোতে তার চেয়ে বেশি মশার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। অতীতে এধরনের মশার অতি ঘনত্ব পাওয়া গেলেও সেসময় ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা যায়নি। কিন্তু এবার চট্টগ্রামসহ সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এর সুনির্দিষ্ট কারণ এখনো চিহ্নিত করা যায়নি উল্লেখ করে বলেন, মশার ভাইরাস নিয়ে বাংলাদেশে গবেষণা হয় না। মশার ঘনত্ব যেমন বাড়ছে, এখন যেকোন পরিস্থিতিতে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে।
মশার মধ্যে যে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে তা নিয়ে কাজ হয়নি। মশা, মানুষ, ভাইরাস সব বিষয় নিয়ে গবেষণার সুযোগ আছে। করোনা পরবর্তীতে ডেঙ্গু কেন বাড়ল। করোনার কারণে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেল কিনা এসব বিষয়ে গবেষণার সুযোগ আছে।
বৃষ্টির কারণে এই মুহূর্তে মশার উৎপাত কিছুটা কমেছে। এখন বৃষ্টি কমেছে। কিন্তু এটি নগরবাসীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়। বাড়ির আশপাশে জমা পানি থাকলে সেখানে মশার বংশ বিস্তারের আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এর প্রতিক্রিয়া পাবো অন্তত ২ সপ্তাহ পর। তখন যদি ডেঙ্গু আবারো বাড়ে তখন বুঝবো জমে থাকা পানিতে মশা ফের বংশ বিস্তার করেছে।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মশক নিধন কর্মকর্তা শরফুল ইসলাম পূর্বকোণকে বলেন, আঙ্গিনা যার পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব তার। এই মানসিকতা যতক্ষণ সৃষ্টি হবে না ততক্ষণ আমরা মশা থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখতে পারবো না। করোনা প্রতিরোধে যেভাবে সচেতনতা তৈরি হয়েছে ডেঙ্গুর ক্ষেত্রেও সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে এই সচেতনতা তৈরি করতে হবে। তবে সিটি কর্পোরেশনের আরো প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে অগ্রসর হওয়ার সুযোগ আছে। উত্তর কোরিয়া ১০ বছরের পরিকল্পনা নিয়ে মশাকে নিয়ন্ত্রণে এনেছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে।
পূর্বকোণ/পিআর