চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪

ক্ষতি পুষিয়ে নিতে

বৃক্ষমেলার সময় আরও বাড়ানোর অনুরোধ নার্সারি মালিকদের

মরিয়ম জাহান মুন্নী

১৬ আগস্ট, ২০২৩ | ১:৫৬ অপরাহ্ণ

দিনভর বেচাবিক্রি না হলেও বিকেলের দিকে কিছুটা বেড়েছে বেচাবিক্রি। মেলার ৭০টি স্টলে প্রায় হাজার জাতের ফলদ, বনজ, ঔষধি, শোভাবর্ধনকারী, বিরল ও বিলুপ্তপ্রায় দেশি-বিদেশি গাছ উঠেছে। এসব গাছ ২০ টাকা থেকে ২০ হাজার টাকা দামের। চন্দন নগর বনফুল নার্সারিতে ১৬ হাজার টাকা দামের নৌকা আকৃতির একটি শেওড়া গাছ উঠেছে। আরণ্যক নার্সারিতে বিদেশি জাতের লাকি ব্যাম্বো নামের এক জাতের সৌন্দর্যবধন গাছ উঠেছে। গাছটির বাজার মূল্য ১৫ হাজার টাকা। এছাড়া থাই জবা, লিপস্টিক ফুল ২শ থেকে ৪শ টাকার মধ্যে মিলছে। কাঠি মুন, মিয়া জাকির, বারি-১ পাঁচশ থেকে এক হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। রুবি লঙ্গান গাছটি ছয় হাজার থেকে নয় হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পিস লিলি, গোলাপ, অর্কিড, ক্যাকটাস, তুলসী বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে। এছাড়া ফলের মধ্যে ভিয়েতনামের মালটা, থাই বারোমাসি আমলকি, থাই পেয়ারা, থাই সফেদা, আলু বোখরাও আমের বেশ চাহিদা। এসব গাছগুলো বিক্রি হচ্ছে ৩শ থেকে সাত হাজার টাকায়। সিআরবির শিরিষতলায় আয়োজিত এবারের বৃক্ষমেলায় বৃষ্টির পানি এবং গাছের ডাল পড়ে ৭০টি দোকানের প্রায় ২৩ লাখ টাকার চারাগাছ মারা গেছে বলে দাবি করছে মহানগর নার্সারি মালিক সমিতি। সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বৃষ্টির পানির জন্য। সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়, মেলা শুরুর পর থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে। টানা বৃষ্টির কারণে মাঠে পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে প্রতিটি নার্সারিতেই দামি গাছের চারা মারা যায়। শুধু পানির জন্যই ২০ লাখের বেশি গাছের চারা মারা গেছে। এছাড়া নন্দন নার্সারি, গ্রিন ভি নার্সারি ও বাগিছা অনলাইন নার্সারি শপে গাছের ডাল পড়ে আরো ৩ লাখ টাকার বেশি গাছের চারা ও টব নষ্ট হয়ে গেছে।

 

মেলায় অংশ নেয়া একাধিক নার্সারি মালিক বলেন, ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আরো ১০ দিন সময় বাড়ানো দরকার। ৩১ জুলাই থেকে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত ১৫ দিনের এ মেলায় প্রথম ১০ দিনই কোন বেচাকেনা ছিল না। মানুষও আসেনি। শুক্রবার থেকে দর্শক আসছে, সেদিন মোটামুটি বেচাবিক্রি বেড়েছিল। তবে শনিবার থেকে আবার কমে গেছে। যেভাবে বেচাবিক্রি বাড়ার কথা সেই বেচাবিক্রি এখনো হচ্ছে না। আয়োজক কমিটি মাত্র চারদিনের সময় বাড়িয়ে ১৯ দিন করেছে। এটি পর্যাপ্ত নয়। কারণ এখানে দোকান বাঁধা, গাছের পরিবহন খরচ, কর্মচারীদের বেতন কোনো কিছুই উঠেনি। উল্ট প্রতিটি নার্সারি মালিককে ৫০ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকার বেশি লোকসান গুণতে হচ্ছে।

 

ফতেয়াবাদ নার্সারির পরিচালক ও মহানগর নার্সারি মালিক সমিতির উপদেষ্টা মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, ৭০টি দোকানের মধ্যে কম বেশি সবারই গাছ মারা গেছে পানির কারণে। আমার আড়াই লাখ টাকার বেশি দামি দামি চারাগাছ মারা গেছে। মেলায় অংশগ্রহণের জন্য যে টাকা খরচ হয়েছে সেটিও উঠেনি।

 

নন্দন নার্সারির স্বত্বাধিকারী সৈয়দ নাজিব আশসাফ বলেন, এটি মেলার জন্য উপযুক্ত জায়গা নয়। বৃষ্টির পানিতে চারাগাছ মারা গেছে, আবার গাছের ডাল পড়ে আমার আরো দুই লাখ টাকার দামি দামি গাছের চারা মারা গেছে। টব নষ্ট হয়েছে ২০ হাজার টাকার। সব মিলিয়ে আমারই চার লাখ টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া যে টাকা খরচ করে ডেকোরেশন করেছি, অংশগ্রহণের জন্য যে টাকা দিয়েছি সেই টাকাও উঠেনি। কর্মচারীদের বেতন, যাতায়াত খরচ সবকিছুই নিজের পকেট থেকে যাচ্ছে।

 

সবুজ বিপ্লব নার্সারির স্বত্বাধিকারী আশরাফুল হক বলেন, মেলায় এখন দর্শক বেড়েছে। কিন্তু বেচাবিক্রি বাড়েনি। কারণ অনেকে শুধু ঘুরতে আসছে, কেউ কেউ ভিডিও, ছবি তুলেই চলে যান। ৯০ ভাগই দেখতে ও ঘুরতে আসে। বাকি ১০ ভাগ গাছ কিনছেন। তবে এসব কাস্টমারও অল্প টাকার গাছ কিনেন। এখনো পর্যন্ত বড় কাস্টমার একটাও পাইনি। হাজার টাকার উপরে গাছ কেনার কাস্টমার সারাদিনে ২-৪ জনও পাওয়া যায় না। সিআরবি মূলত ঘুরার জায়গা। এটি মেলার জন্য উপযুক্ত জায়গা নয়। এমন হলে নার্সারি মালিকরা আগ্রহ হারাবে। বেচাবিক্রি বাড়াতে এবং বৃষ্টির পানি কিংবা গাছের ডাল পড়ে যাতে গাছ নষ্ট না হয় এমন জায়গায় মেলা আয়োজনের পরামর্শ দেন মহানগর নার্সারি মালিক সমিতির সদস্যরা।

 

পলোগ্রাউন্ড অথবা আউটার স্টেডিয়ামে মেলা আয়োজনের প্রস্তাব : মেলায় অংশগ্রকারি নার্সারি মালিকরা কিছু প্রস্তাব তুলে ধরে বলেন- বৃক্ষ মেলা যেখানে গাছ নেই এমন খালি মাঠে করা দরকার। যেমন পলোগ্রাউন্ড, আউটার স্টেডিয়াম মাঠে এ মেলা হলে ভালো হয়। আগে এসব জায়গায় মেলা হত। তখন এমন লোকসান গুণতে হয়নি। ভালো আয় করে বাড়ি ফিরেছে নার্সারি মালিকরা। এসব জায়গায় মেলা হলে পানি জমে থাকার ভয় থাকে না, তেমনি গাছ উঠানামা করতে কোনো অসুবিধা হয় না। গাছের ডাল পড়ে গাছ নষ্ট হওয়ার কোনো আশঙ্কাও নেই। গাড়ি দোকান পর্যন্ত আসতে পারে। এতে সুবিধামতো গাছ উঠানো নামানো যায়। কিন্তু এখানে গাছ উঠা-নামা করানো কষ্টকর। অনেক গাছ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট