এ বছরের শুরুতে ১৬ জানুয়ারি ঘটা করে চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে প্রথমবারের মতো ২০০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১০ মিটার গভীরতার একটি জাহাজ ভিড়ানো হয়েছিল। তবে ওই আনুষ্ঠানিকতার পর চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য উঠা-নামায় ব্যবহৃত জিসিবি, সিসিটি ও এনসিটির কোন জেটিতে ২০০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১০ মিটার গভীরতার আর কোন জাহাজ ভিড়েনি এবং এবছর আর ভিড়বেও না।
কারণ চট্টগ্রাম বন্দরের মেরিন বিভাগ থেকে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত অনুমোদিত জাহাজের দৈর্ঘ্য ও গভীরতার যে সীমা উল্লেখ করা হয়েছে তাতে শুধুমাত্র পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালেই ২০০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ ভিড়তে পারবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অন্য সব জেটিতে সর্বোচ্চ ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্য ও সাড়ে ৯ মিটার গভীরতার জাহাজ ভিড়ানোর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে ২০০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ ভিড়ানোর অনুমোদন দেওয়া হলেও ওই জেটি প্রায় এক বছর ধরে প্রস্তুত হয়েও সেটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনই এখনো হয়নি। শুধু সরকারি কিছু পণ্য ছাড়া ওই জেটিতে এখনো সাধারণ আমদানিকারদের পণ্য নিয়ে জাহাজ ভিড়েনি। উল্লেখ্য, গত ১৬ জানুয়ারি বেলুন উড়িয়ে ‘এমভি কমন অ্যাটলাস’ নামের ২০০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১০ মিটার গভীরতার জাহাজটির বার্থিং কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। এর মধ্য দিয়ে বন্দরের জেটিতে সরাসরি বড় জাহাজ ভিড়ানোর এক নতুন যুগে প্রবেশ করেছিল চট্টগ্রাম বন্দর। বন্দরের জেটিতে বড় জাহাজ বার্থিং করা সম্ভব হলে বন্দর ব্যবহারকারীরা তুলনামূলক কম খরচে পণ্য পরিবহনের সুযোগ পাবে। এতে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়ার পাশাপাশি মেরিটাইম ওয়ার্ল্ডে দেশের ভাবমূর্তিও বাড়বে। এমন প্রত্যাশা থাকলেও তা বাস্তবতার রূপ নেয়নি।
প্রসঙ্গত, লন্ডনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এইচ আর ওয়ালিংফোর্ডের কর্ণফুলী নদীর ওপর একটি গবেষণায় চালিয়ে বর্তমানের চেয়ে আরও বড় আকারের জাহাজ বন্দরের জেটিতে ভিড়ানোর বিষয়ে সুপারিশ করেছিল।
বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে সাড়ে ৯ মিটার ড্রাফটের এবং ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্যরে জাহাজ বার্থিং করে। সর্বশেষ ২০১৫ সালে কর্তৃপক্ষ বন্দরে প্রবেশকারী জাহাজের ড্রাফট ও দৈর্ঘ্য বাড়িয়েছিল। এর আগে আরও কম ড্রাফটের জাহাজ বন্দরে প্রবেশ করতে পারত।
বন্দর কর্মকর্তারা জানান, বিদ্যমান ড্রাফট অনুযায়ী বন্দরে আসা একটি কনটেইনারবাহী জাহাজে করে ১৭শ থেকে ১৮শ টিইইউএস (প্রতিটি ২০ ফুট দৈর্ঘ্যরে সমতুল্য) কনটেইনার পরিবহন হয়ে থাকে। ড্রাফট বাড়লে ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যরে ও ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজে করে ২৬শ থেকে ২৮শ টিইইউএস কনটেইনার আনা যাবে।
আগের চেয়ে একটু হলেও বড় আকারের জাহাজ বন্দরে ভিড়লে একসঙ্গে বেশি পণ্য পরিবহন সম্ভব হবে। এতে খরচও কমে আসবে। আমদানি ও রপ্তানিকারকরা এর উপকার পাবেন। ফলে দেশের অর্থনীতিতেও এর কিছুটা সুফল মিলবে। তবে সেই সুফল সহসাই পাচ্ছেন না তারা।
চট্টগ্রাম বন্দরের মোট ১৯টি জেটি আছে। এর মধ্যে চালু থাকা ১৭টিতে জাহাজ ভিড়ে। কর্ণফুলী কনটেইনার টার্মিনাল (সিসিটি) ও নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালের (এনসিটি) মোট সাতটি জেটিতে কনটেইনার হ্যান্ডলিং (ওঠানামা) হয়ে থাকে।
পূর্বকোণ/পিআর