অতি বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাস ও বন্যায় চট্টগ্রামের ২৮ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জেলার সাতকানিয়া, চন্দনাইশ ও লোহাগাড়া উপজেলায়। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পুনর্বাসনে কাজ করছে দুর্যোগ ও ত্রাণ অধিদপ্তর।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ও ত্রাণ শাখা জানায়, জেলায় ২৮ হাজার ৭০টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে ১৮ হাজার ৮৮৫ ঘরবাড়ি আংশিক ও ৯ হাজার ১৮৫ ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাতকানিয়া, চন্দনাইশ ও লোহাগাড়া উপজেলায়। সাতকানিয়ায় দুই হাজার ৪৭৯টি ঘর আংশিক ও নয় হাজার ১৮৫টি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। চন্দনাইশে চার হাজার ১২০টি ঘর আংশিক ও ৬ হাজার ৩৭৯টি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লোহাগাড়ায় ২৫ শ ঘর আংশিক ও দুই হাজার ঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসে নগরী এবং জেলার ১৫ উপজেলায় ১৬১টি ইউনিয়ন বা ওয়ার্ড পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে ৮ লাখ ৫০ হাজার ২৩৫ জন মানুষ পানিবন্দী ছিল। পানিতে ডুবে গিয়ে ২০ জন মারা যান। এখনো নিখোঁজ রয়েছেন একজন। নিহতদের মধ্যে সাতকানিয়ায় ১০ জন, চন্দনাইশে তিনজন, লোহাগাড়ায় চারজন, বাঁশখালী, রাউজন ও নগরীতে একজন করে।
জেলা দুর্যোগ ও ত্রাণ কর্মকর্তা মো. ছাইফুল্লাহ মজুমদার গতকাল পূর্বকোণকে বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ত্রাণ সহায়তার জন্য এ পর্যন্ত ৫৯৫ মেট্রিক টন চাল, ১৮ লাখ ২৫ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও ৫ হাজার ১৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার, ৩ হাজার ৫শ বিস্কুট, তিন হাজার ৫শ ওরস্যালাইন ও ৬ হাজার ৫শ পিস পানি বিশুদ্ধকরণ টেবলেট বিতরণ করা হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি পুনর্বাসনের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা ছাইফুল্লাহ মজুমদার বলেন, এ পর্যন্ত এক হাজার বান্ডিল ঢেউটিন ও ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও আরও দুই হাজার বান্ডিল টিন ও ৬০ লাখ টাকার বরাদ্দ করেছে মন্ত্রণালয়। আশা করছি, শিগগিরই তা পেয়ে যাব। তিনি বলেন, ক্ষয়ক্ষতির ধরণ অনুযায়ী বরাদ্দ দেওয়া হবে। এক বান্ডিল টিনের সঙ্গে নগদ তিন হাজার টাকা হিসাবে বরাদ্দ দেওয়া হবে। প্রাথমিকভাবে তিন হাজার বান্ডিল টিন ও ৯০ লাখ টাকা বরাদ্দপত্র এসেছে।
মৎস্য খাত : জেলা দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া তথ্যমতে, বন্যায় মৎস্য খাতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের হিসাবে ৬৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এরমধ্যে ৭৮টি ট্রলার, ৫৮০টি নৌযান ৭০টি জাল, পুকুর, ঘের পানিতে ডুবে এসব ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
কৃষি খাত : কৃষিতে ১৮৬ কোটি ৩০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এরমধ্যে ১১ হাজার ৩২৭ দশমিক ২ হেক্টর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এক লাখ ১৫ হাজার ৮৩১ জন কৃষক।
প্রাণিসম্পদ : প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাব মতে গবাদিপশু, হাস-মুরগি, পশু-পাখির বিভিন্ন ধরনের খাদ্য ক্ষতিগ্রস্ত ও মারা যাওয়া পশু-পাখিসহ ২৯ কোটি ৩০ লাখ ৯০ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেছেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সমাজের সকল স্তরের জনগণ বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ সহায়তা বন্যাকবলিত এলাকায় বিতরণ করা হয়েছে। এ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ত্রাণ কার্যক্রম চলার সময় এলাকায় কিছু অসাধু ব্যক্তি গুজব ছড়িয়ে জনগণের মধ্যে আতঙ্ক ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। এ বিষয়ে সকল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ জনপ্রতিনিধিদেরকে সর্তক থাকতে হবে।’ বন্যায় মানুষের দুর্ভোগ কমানো ও ত্রাণ কাজে সহায়তার জন্য সেনা ও নৌবাহিনী, বিজিবি, র্যাব, আনসার ও পুলিশ বাহিনীসহ সকলকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
পূর্বকোণ/পিআর