চট্টগ্রাম অঞ্চলে বন্যার কারণে সরবরাহ সংকট সৃষ্টি হয়েছে, এমন অজুহাতে মাছ-ডিমসহ কয়েকটি নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে। একই সাথে বেড়েছে মুরগি ও পেঁয়াজে দামও। পাঁচ দিনের ব্যবধানে এসব ভোগ্যপণ্যের দাম কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা বাড়তে দেখা যায়। যদিও আগে থেকে চড়া ছিল মাছের দাম। তবে গত দুই সপ্তাহ ধরে বাজারে কমেছিল মুরগি ও সবজির দর।
ভোগ্যপণ্যের এমন ঊর্ধ্বমুখী দামের জন্য রিয়াজউদ্দিন বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী বলছেন, বৃষ্টিতে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। এতে শহরের সাথে জেলা উপজেলাগুলোর যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। আবার সবজির ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। এ কারণে সবজিসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে।
এদিকে পণ্যের দাম বাড়ায় ক্ষুব্ধ ক্রেতারা। বহদ্দারহাটে মাসের বাজার করতে আসা কয়েকজন ক্রেতার সাথে আলাপ করে জানা যায় মাসের প্রথম দিকেই তারা পুরো মাসের বাজার করেন। কিন্তু এবার বৃষ্টির কারণে সে সময় বাজার করা হয়নি। ঘর থেকে বেরুনোর উপায় ছিল না বৃষ্টি আর বন্যার জন্য। এখন বাজারে এসে দেখা যায় পণ্যে দামে আগুন জ্বলছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার নগরীর বহদ্দারহাট কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায় বাজারে ডিম প্রতি ডজন ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা পাঁচ দিন আগেও বিক্রি হয়েছিল ১৪০-১৪৫ টাকায়। একই সাথে কেজিতে ২৫ টাকা দাম বেড়ে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকায়। যা চারদিন আগে বিক্রি হয়েছিল ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকায়। সোনালি মুরগি কেজিতে ২০ টাকা দাম বেড়ে ৩১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ২৯০ টাকায়। তবে অপরিবর্তিত রয়েছে লেয়ার মুরগির দাম। এ মুরগি এখনো ৩৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বহদ্দারহাটের পোল্ট্রি ব্যবসায়ী মিনহাজ উদ্দিন বলেন, মুরগির দাম বেড়েছে মূলত টানা কয়েক দিনের বৃষ্টির কারণে, উপজেলাগুলো থেকে গাড়ি আসতে পারছে না। এতে শহরে মুরগি ও ডিমের সংকট দেখা দেয়। এদিকে আবার বন্যার মধ্যে বাজারে চাহিদা বেড়ে গেছে। কারণ মানুষ বৃষ্টির কারণে ভারী কিছু না করে ডিম, মুরগি বেশি কিনেছেন। তাই দাম বেড়েছে। সরবরাহ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত দাম এমনই থাকবে আগামী কয়েক দিন। মুরগির দাম আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে ৫০ থেকে ৬০ টাকা দাম বেড়েছে বরবটির। গত সপ্তাহে মান ভেদে প্রতি কেজি বরবটি বিক্রি হয়েছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। যা এখন বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকায়। শুধু বরবটিই নয়, কাঁচামরিচ কেজিতে ৯০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২৭০ থেকে ২৮০ টাকায়। যা কয়েক দিন আগেও বিক্রি হয়েছিল ১৬০ থেকে ১৮০ টাকায়। টমেটো কেজিতে দাম বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। দাম বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২১০ টাকায়। আবার আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়, পটল ৫০ থেকে ৬০ টাকায়, মিষ্টি কুমড়ো ৫০ টাকায়, লাউ ৫০ থেকে ৬০ টাকায়, কাকরোল ৬০ টাকায়, তিতকরলা ৮০ টাকায়, চিচিঙ্গা ৫০ থেকে ৬০ টাকায়, ঝিঙা ৬০, বেগুন ৬০ টাকায়, লতি ৬০ টাকায়, কচুর চড়া ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা। এসব সবজি মান ভেদে ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
এছাড়া আদা, রসুন ও সয়াবিন তেলের দাম এখনো অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা দাম বেড়েছে পেঁয়াজের। ৪০ থেকে ৪৫ টাকা দামের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়।
এদিকে মাছের দাম আগে থেকেই চড়া ছিল। গতকাল সেই দামের উপর আবারো বেড়েছে। রুই মাছ আকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকায়, কাতল ৩৮০ থেকে ৫৫০ টাকায়, মৃগেল আকারভেদে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকায়, তেলাপিয়া আকার ভেদে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়, পাঙ্গাস ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা দাম বেড়েছে। এসব মাছে ৩০ থেকে ৫০ টাকা দাম বেড়েছে। এদিকে সামুদ্রিক মাছের মধ্যে সব চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ। আকারভেদে ইলিশের কেজি ৫০০ থেকে ১৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আবার লইট্যা ২০০ থেকে ২৬০ টাকায়, সামুদ্রিক বাইলা আকার ভেদে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকার, রূপচাঁদা ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকায়, পোপা ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় এবং চিংড়ি আবারভেদে (দেশি এবং সামুদ্রিক) ৬০০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ক্রেতা নজরুল ইসলাম বলেন, মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে বেতন পেলেই সারামাসের বাজার করি। এবার সেটি সম্ভব হয়নি বৃষ্টি এবং বন্যার জন্য। মাত্র তিন থেকে চার দিনের ব্যবধানে মাসের বাজারে ১৪৩০ টাকা বেশি খরচ হয়েছে।
তিনি বলেন, চাল, ডালসহ মুদি পণ্যের সাথে পুরো মাসের মাছ, মাংস কেনা হয় এক সাথে। কিন্তু মাছের দামে যেন আগুন জ্বলছে। এখন দেড় কেজি ওজনের একটা পাঙ্গাস ২৬৫ টাকায় কিনেছি।
পূর্বকোণ/এসি