চট্টগ্রাম বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

এক্স-ওয়াই শেড থেকে এলসিএল পণ্য ডেলিভারির অনুমতি মেলেনি

নিজস্ব প্রতিবেদক

১১ আগস্ট, ২০২৩ | ১২:২৬ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে কনটেইনার খুলে পণ্য ডেলিভারির প্রচলিত প্রথা বন্ধ করতে এলসিএল কনটেইনারের পণ্য (এক কনটেইনারে একাধিক আমদানিকারকের থাকা পণ্য) বন্দরের বাইরে থেকে ডেলিভারির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে বন্দরের এক্স ও ওয়াই শেডকে। বন্দরের চার নম্বর গেট থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে বন্দর স্টেডিয়াম সংলগ্ন পুরাতন এক্স এবং ওয়াই নামের দুটি শেডে নতুন করে সাজানো হয়েছে। এখন থেকেই এলসিএল কার্গোর পণ্য খালাস হবে। ইতিমধ্যে একটি শেড পণ্য আনস্টাফিংয়ের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হয়েছে। তৈরি হয়েছে ডেলিভারি ইয়ার্ড।

এদিকে এক্স ওয়াই শেড থেকে আনস্টাফিং কার্যক্রম শুরু করতে গত বছরের ডিসেম্বরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে বন্ড লাইসেন্সের আবেদন করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারদের সাথে বৈঠক করে কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষ। তবে এখন পর্যন্ত ওই শেডগুলো থেকে পণ্য আনস্টাফিং ও ডেলিভারির অনুমতি পাওয়া যায়নি।

এছাড়া এ কাজের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর বে কার্গো সেন্টার নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পাঁচ বছরের চুক্তি করে। চুক্তির পরপরই শেড দুটি সংস্কারের কাজ শুরু করা হয়। একটি শেড আনস্টাফিংয়ের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। এছাড়া, সড়ক, ইয়ার্ড নির্মাণ কাজও শেষ হয়েছে। তবে এই প্রতিষ্ঠানটির পূর্ব অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন একাধিক বার্থ অপারেটর।

তাদের মতে, বন্দর কর্তৃপক্ষ কনটেইনার হ্যান্ডলিং ও পণ্য খালাস সংক্রান্ত কাজে কোন প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দিলে সাধারণত ওই কাজে পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে এমন প্রতিষ্ঠান বাছাই করে। তবে বে ওয়ানের কনটেইনার হ্যান্ডলিং বা অফডকের মতো পণ্য খালাসের কোন অভিজ্ঞতা আছে কিনা তা স্পষ্ট নয়।

পাঁচ একর জমির ওপরে এক্স ও ওয়াই শেড দুটির আয়তন ১৮ হাজার ৯০৬ বর্গমিটার। বন্দরের বর্তমান ট্যারিফ অনুযায়ী এ থেকে ভাড়া আদায় করা হবে বলে জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এমনকি বন্দরের অভ্যন্তর হতে যে ট্যারিফে এলসিএল পণ্য খালাস হয়, একই ট্যারিফ এক্স ও ওয়াই শেডও প্রযোজ্য হবে বলে জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রতিদিন গড়ে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার পণ্যবাহি কনটেইনার ডেলিভারি হয়। যার প্রায় ১০ শতাংশ পণ্য থাকে এলসিএল কনটেইনারের। প্রতিটি এলসিএল কনটেইনারে থাকে একাধিক আমদানিকারকের পণ্য। যা বন্দরের অভ্যন্তরে খুলে বিভিন্ন শেডে রাখা হয়। সেখান থেকে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানে করে ডেলিভারি করা হয়।

তবে এক্স ওয়াই শেড চালু হলে চট্টগ্রাম বন্দরের ভেতর প্রতিদিন প্রবেশ করা ৪/৫ হাজার ট্রাক কাভার্ড ভ্যানকে আর বন্দরের অভ্যন্তরে প্রবেশের জন্য লাইনে দাড়াতে হবে না। এতে মূল সড়কের ওপরের গাড়ির চাপও কমে যাবে। আর বন্দরের অভ্যন্তরের অপারেশনাল কার্যক্রম নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করা যাবে। বর্তমানে এলসিএল কার্গো খালাসে সময় লাগে ৭ দিন। এক দিনের মধ্যে কার্গো ডেলিভারি নিতে পারলে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে লিড টাইম কমে যাবে।  চট্টগ্রাম বন্দর থেকে এলসিএল কার্গো ডেলিভারি নিতে দেরি হলে ধারণক্ষমতার বেশি পণ্য জমে যেতো। শেডে স্থান সংকুলান না হওয়ায় বন্দর ইয়ার্ডে বিঘ্নিত হতো আনস্টাফিং, বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত পণ্য ডেলিভারি নিতে বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রায়শই চিঠি দিতো আমদানিকারক, বিজিএমইএ, বিকেএমইএসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনকে।

এছাড়া, চট্টগ্রাম বন্দর ২০০৪ সাল থেকে আইএসপিএস (ইন্টারন্যাশনাল শিপ এন্ড পোর্ট ফ্যাসিলিটি সিকিউরিটি) কোড বাস্তবায়ন করে আসছে। এই কোড বাস্তবায়নে ইউএস কোস্ট গার্ডের প্রতিনিধিদলের একাধিক পরিদর্শনে বন্দরের ডেলিভারি কার্যক্রম বন্দরের বাইরে সরানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। আইএসপিএস কোড বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে আনস্টাফিং কার্যক্রম সরানোর উদ্যোগ নেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দরে এলসিএল পণ্য সংরক্ষণের জন্য মোট ১১ টি শেড রয়েছে। এরমধ্যে চট্টগ্রাম কনটেইনার টার্মিনালে (সিসিটি) ১ টি, নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালে (এনসিটি) ১ টি, ওভারফ্লো ইয়ার্ডে ১ টি, জেনারেল কার্গো বার্থে (জিসিবি) ৮ টি। এই এলসিএল শেডগুলোতে ১ হাজার টিইইউএস কনটেইনারের পণ্য রাখা যায়।

 

 

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট