টানা বৃষ্টিতে ভেঙে গেছে নগরীর নিচু এলাকার অলিগলি। কোন কোন সড়ক চলাচল অযোগ্য হয়ে পড়েছে। কোথাও কোথাও প্রধান সড়কও বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যেসব এলাকায় এখনো পানি রয়ে গেছে সেখানকার সড়কের চিত্র আরো ভয়াবহ হবে এমন আশঙ্কা বাসিন্দাদের।
চারদিনের টানা বৃষ্টিতে নগরীর মোহরা, হামিদচর, চর রাঙামাটিয়া, চান্দগাঁও, বাকলিয়া, চকবাজার, কাতালগঞ্জ, কাপাসগোলা, বাদুরতলা, বহদ্দারহাট, বাস টার্মিনাল, কাপ্তাই রাস্তার মাথা, খাজা রোড, মিয়াখান নগর, প্রবর্তক মোড় আগ্রাবাদ, সিডিএ আবাসিক এলাকা, শান্তিবাগ আবাসিক, চান্দগাঁও, বাকলিয়া, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ, রিয়াজ উদ্দিন বাজার, মেহেদীবাগ, ষোলশহর ২ নম্বর গেট, মুরাদপুর, ছোটপুল-বড়পুল, গোসাইলডাঙ্গা ও হালিশহরের বিভিন্ন এলাকাসহ নগরীর নিচু এলাকার সড়কগুলোতে হাঁটুপানি থেকে কোমর পর্যন্ত পানি জমে।
সরেজমিন পরিদর্শন ও নগরীর বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পানির কারণে এসব এলাকার অনেক সড়ক ভেঙে গেছে।
এশিয়ান হাইওয়ের বহদ্দারহাট হতে মুরাদপুর পর্যন্ত সড়কের বেহাল দশা। এর মধ্যে আবার বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার থেকে আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার পর্যন্ত সড়ক উঁচু করার জন্য প্রায় দুই ফুট ভরাট করা হয়েছে। ভরাট করা বালি ও ইটের খোয়া পানির স্রোতে ভেসে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। যানবাহন চলাচল করছে ঝুঁকি নিয়ে।
এছাড়া মুরাদপুর মোড় হতে এন মোহাম্মদ পর্যন্ত সড়কের বিভিন্ন অংশে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। দেখা গেছে, নতুন চান্দগাঁও থানা এলাকায়ও সড়কের পিচ উঠে গিয়ে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
শুলকবহর এশিয়ান হাউজিং সোসাইটি আবাসিক এলাকার সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম পূর্বকোণকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মুরাদপুর থেকে বহদ্দারহাটের দিকে যে নালাটি গেছে এশিয়ান হাউজিং সোসাইটির প্রবেশ মুখের সামনে থেকে সেটি বক্স করে দেয়া হয়েছে। একইসাথে নালাটি উঁচু করা হয়েছে। এখন উঁচু করা হচ্ছে মূল সড়ক। অথচ নালাটি বক্স করে দেয়ার পর থেকে এলাকাবাসী কখনো পরিষ্কার করতে দেখেনি। পলিথিনসহ নানা আবর্জনায় নালার মুখ ভরে যাওয়ায়র কারণে নালা দিয়ে পানি নিষ্কাশনের সুযোগ নেই। তাই এখানে সড়কে পানি জমে। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন নালা পরিষ্কার না করে সড়কটি উঁচু করছে। তাতেও কোন সুফল মিলছে না। সড়ক দিয়ে পানি চলাচল করার কারণে ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যান চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। অপরদিকে আশপাশের সব ভবনের নিচতলায় পানি প্রবেশ করেছে। এতে প্রতিটি ভবনের নিচতলা পরিত্যক্ত হয়ে পড়ছে।
দেখা গেছে, গরীবুল্লাহ শাহ (র.) মাজারের পর থেকে গৃহায়নের মোড় পর্যন্ত পুরো সড়ক পাহাড়ের মাটিতে ঢেকে গেছে। কিছু অংশ ভেঙেও গেছে। এমইএস কলেজের পাশে সড়কের একাংশও পাহাড়ের মাটিতে ঢেকে গেছে। টাইগারপাস এলাকার সড়কেও একই চিত্র দেখা গেছে। মহসিন স্কুল সংলগ্ন এলাকায়ও সড়ক ঢেকে গেছে পাহাড়ের মাটিতে। বায়েজিদ বোস্তামী সড়কের মেয়র গলি থেকে ফ্লাইওভারের মুখ পর্যন্ত সড়কের বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
বাকলিয়া এলাকার বাসিন্দা আবদুর রহিম জানান, সড়ক ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে তা বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ জমে থাকা পানির কারণে হালকা যানবাহন গর্তে পড়ে উল্টে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ঘাসিয়া পাড়া এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানান, তাদের এলাকার সড়কগুলোও জলাবদ্ধতার কারণে ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে। খাজা রোড এলাকার বাসিন্দা আবুল কালাম জানান, সড়কের উপর দীর্ঘক্ষণ পানি জমে থাকার কারণে সড়ক ভেঙে গেছে। পানি সরে যাওয়ার পর তা দৃশ্যমান হচ্ছে।
ছোটপুল সমাজ পরিচালনা পরিষদের সভাপতি কামাল উদ্দিন সর্দার পূর্বকোণকে জানান, জলাবদ্ধতার পানি নেমে যাওয়ার পর অলি-গলির ক্ষতচিহ্নগুলো দৃশ্যমান হচ্ছে। আমাদের শহরে বৃষ্টি হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু শহরের যেসব কর্তৃপক্ষ আছে তাদের উচিত পানি দ্রুত নামার ব্যবস্থা করে দেয়া। তাহলে সড়ক রক্ষা পাবে। একইসাথে জনদুর্ভোগও কমবে।
অতিরিক্ত বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক সংস্কার ও দ্রুত পানি অপসারণ এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাসমূহে অস্থায়ী বাঁধ তৈরির জন্য চসিকের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মুনিরুল হুদার নেতৃত্বে দুইটি দল নগরীর বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছে। জানতে চাইলে পূর্বকোণকে তিনি বলেন, পানির কারণে অনেক এলাকার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বৃষ্টি বন্ধ হলে এসব সড়ক চিহ্নিত করে সংস্কার করা হবে।
পূর্বকোণ/মাহমুদ