চট্টগ্রাম বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

ডিজিটাল জরিপ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন

কর্মকর্তাদের স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান ভূমিমন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিবেদক

৬ আগস্ট, ২০২৩ | ৯:৪১ অপরাহ্ণ

‘অবৈধ জমি দখলের দিন ফুরিয়ে আসছে’ উল্লেখ করে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপি বলেছেন, ‘দলিল যার জমি তার’ এই বার্তাটি মানুষের কাছে এর মধ্যে ভালোভাবেই পৌঁছে গেছে। মানুষ অধীর আগ্রহে এ আইন কবে পাস হবে তার অপেক্ষায় আছে। এ বিষয়ে আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, প্রধানমন্ত্রী নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন। আগামী সেপ্টেম্বর নাগাদ ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইনের খসড়া আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্যে সংসদে পাঠানো হবে। অবৈধ জমি দখলের জন্য জেল ও জরিমানা- দুটিরই ব্যবস্থা আছে এই আইনে। আশাকরি একই সংসদ অধিবেশনে আইনটি পাস হবে। সুতারাং অবৈধভাবে জমি দখলের দিন ফুরিয়ে আসছে।

 

রবিবার (৬ আগস্ট) নগরীর চট্টগ্রামে অবস্থিত প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইন্সটিটিউট (পিটিআই) মিলনায়তনে বাংলাদেশ ডিজিটাল জরিপ (বাংলাদেশ ডিজিটাল সার্ভে- বিডিএস) রোল আউটের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

 

তিনি বলেন, আমি চট্টগ্রামের সন্তান হিসেবে চেয়েছি ভূমি ডিজিটাল জরিপ কার্যক্রমটা চট্টগ্রাম থেকেই শুরু করতে। চট্টগ্রামে বিডিএস রোলআউটের মধ্যে দিয়ে সারাদেশে আজ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুত বাংলাদেশ ডিজিটাল সার্ভে (বিডিএস) কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হলো। জরিপে এনআইডি ইন্টিগ্রেশন থাকায় এখানে জমির মালিকানা, শ্রেণি ও ধরন ইত্যাদি বিষয়ে ডিজিটাল তথ্যভাণ্ডার গড়ে উঠবে। যা দিয়ে উপজেলা, জেলা, বিভাগ ভিত্তিক ও জাতীয় তথ্যভাণ্ডার গড়ে উঠবে। যার ফলে ভূমি ব্যবস্থাপনায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে।

 

প্রায় ১৩০ বছর পূর্বে বাংলাদেশে প্রথম বিজ্ঞানভিত্তিক জরিপও শুরু হয় চট্টগ্রাম থেকে উল্লেখ করে ভূমিমন্ত্রী আশা প্রকাশ করে বলেন, চট্টগ্রামে শুরু হওয়া বিডিএস হবে মাঠে গিয়ে পরিচালিত শেষ জরিপ। বাংলাদেশ ডিজিটাল সার্ভের মূল উদ্দেশ্য অল্পসময়ে সমগ্র বাংলাদেশে ক্যাডাস্ট্রাল সার্ভে তথা ভূ-সম্পদ জরিপ শেষ করা এবং পরবর্তীতে মাঠে গিয়ে সার্ভের প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে নিয়ে আসা। এছাড়া কোনো এলাকায় প্রাকৃতিক কারণে বড় ধরনের ভূমির বিচ্যুতি না ঘটলে রিভিশন্যাল সার্ভের প্রয়োজনীয়তাও থাকবেনা ডিজিটাল ম্যাপ পার্টিশনের সুবিধার জন্য।

 

ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, প্রথম পর্যায়ে চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন, ধামরাই ও কুষ্টিয়া সদর উপজেলা (পৌরসভাসহ) এবং মানিকগঞ্জ পৌরসভার মোট ৬৩৪টি মৌজায় ৯৩৩ বর্গ কি.মি. (২ লাখ ৩৮ হাজার একর) এলাকায় ‘ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনা সিস্টেম স্থাপন (ইডিএলএমএস)’ প্রকল্পের আওতায় বিডিএস রোলআউট কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

 

ভূমি সচিব মো. খলিলুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আব্দুল বারিক, বিডিএস কার্যক্রমের ইডিএলএমএস প্রকল্প পরিচালক জহুরুল ইসলাম, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, চট্টগ্রামের জোনাল সেটলমেন্ট কর্মকর্তা আফিয়া আখতারসহ ভূমি মন্ত্রণালয়, সংশ্লিষ্ট প্রকল্প ও মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, দক্ষিণ কোরীয় ভেন্ডার প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাবৃন্দ, স্থানীয় রাজনীতিবিদ, স্থানীয় সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ এবং গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।

 

এর আগে গত বছরের (২০২২) ৩ আগস্ট পটুয়াখালী জেলার সদর উপজেলার ইটবাড়ীয়া ইউনিয়ন বিডিএস পাইলটিং কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন ভূমিমন্ত্রী। পাইলটের সাফল্যের ওপর ভিত্তি করে আজ চট্টগ্রাম থেকে পূর্ণাঙ্গ বিডিএস কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন ভূমিমন্ত্রী।

 

প্রথম পর্যায়ের বিডিএস কার্যক্রম:

 

চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন, ধামরাই ও কুষ্টিয়া সদর উপজেলা (পৌরসভাসহ) এবং মানিকগঞ্জ পৌরসভার মোট ৬৩৪টি মৌজায় ৯৩৩ বর্গ কি.মি. (২ লাখ ৩৮ হাজার একর) এলাকায় ‘ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনা সিস্টেম স্থাপন (ইডিএলএমএস)’ প্রকল্পের আওতায় প্রথম পর্যায়ের বিডিএস রোলআউট কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

 

বিডিএস-এ অপেক্ষাকৃত স্বল্পসময়ে, নির্ভুলভাবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমি জরিপ করার জন্য স্যাটেলাইট, ড্রোন তথা ইউএভি এবং গ্রাউন্ড কন্ট্রোল স্টেশনের সমন্বয়ে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। বিডিএস বাস্তবায়িত হলে ভূমি জরিপ, ভূমি ব্যবস্থাপনা অফিসের মধ্যে নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠাসহ অটোমেশন ব্যবস্থার প্রবর্তন হবে। মৌজা-ম্যাপ ও রেকর্ডের মধ্যে লিংকেজ প্রতিষ্ঠার ফলে ভূমির মালিকগণ সহজেই অনলাইনের মাধ্যমে রেকর্ড ও প্লট দেখার সুযোগ পাবে। ভূমি জরিপ ও ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে বিধায় জনদুর্ভোগ হ্রাস পাবে ও দক্ষ মানব সম্পদ সৃষ্টি হবে।

 

বিডিএসের পুরো সিস্টেমটি জাতীয় ভূমিসেবা অটোমেশন সিস্টেমের একটি মডিউল হিসাবে ইন্টেগ্রেট করা হবে। এ প্রকল্পের আওতায় নির্ধারিত জিও-রেফারেন্স-কৃত মৌজা ম্যাপ ‘ভূমি ব্যবস্থাপনা অটোমেশন’ প্রকল্পে সরবরাহ করা হবে। জমি বিক্রির পর নামজারি খতিয়ান পরিবর্তনের সাথে সাথে ম্যাপের সীমানা পরিবর্তন হয়ে যাবে।

 

উল্লেখ্য, সুষ্ঠুভাবে বাংলাদেশ ডিজিটাল জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করার সুবিধার্থে দুটি আলাদা প্রকল্পের আওতায় যুগপৎভাবে পর্যায়ক্রমে সমগ্র বাংলাদেশে বিডিএস কার্যক্রম সম্পাদন করা হবে। প্রকল্প দুটি ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হবে।
দুটি প্রকল্পের একটি হচ্ছে বর্ণিত ‘ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনা সিস্টেম স্থাপন (ইডিএলএমএস)’ প্রকল্প। এর জন্য সরকার ও কোরিয়া ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফান্ডের (ইডিসিএফ) অর্থায়নে মোট ৩৮৩.৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। যার মধ্যে সরকারি খাত থেকে ৭৮.১০ কোটি টাকা এবং কোরিয়া থেকে ৩০৫.৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

 

অপরটি হচ্ছে ‘ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমি জরিপ করার জন্য ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের পরিচালনা সক্ষমতা শক্তিশালীকরণ প্রকল্প’ (এসওসি-ডিডিএস) শীর্ষক প্রকল্প। এর জন্য সরকারের অর্থায়নে ১২১২.৫৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় কিছুদিন পর বিডিএস রোলআউট শুরু হবে পুরো বরগুনা ও পটুয়াখালী জেলায়।

 

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে বিজ্ঞানভিত্তিক প্রথম আধুনিক ক্যাডাস্ট্রাল সার্ভে প্রোগ্রাম তথা ভূ-সম্পদ জরিপ কার্যক্রম পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হয়েছিল ১৮৮৮ সালে তৎকালীন চটগ্রাম জেলার অন্তর্গত কক্সবাজার মহকুমার রামুতে। এই জরিপ কার্যক্রম এর মৌলিক জাতিবাচক নামেই তথা ক্যাডাস্ট্রাল সার্ভে (সিএস সার্ভে) নামে পরিচিত ছিল। রামুর অভিজ্ঞতার আলোকে ১৮৯০ সালে চট্টগ্রাম থেকে শুরু হয়ে সমগ্র পূর্ববঙ্গে সিএস সার্ভে কার্যক্রম পরিচালনা শুরু হয় এবং শেষ হয় ১৯৪০ সালের দিনাজপুর জেলায়। তৎকালীন চট্টগ্রামের কিছু এলাকা এবং সিলেট প্রশাসনিকভাবে বাংলার অংশ না হওয়ায় এসব যায়গায় সিএস সার্ভে পরিচালিত হয়নি। আশা করা যাচ্ছে আজ হতে শুরু হওয়া বিডিএস কার্যক্রম পরিচালনা শেষ হলে মাঠে গিয়ে এই ধরনের ক্যাডাস্ট্রাল সার্ভে করার প্রয়োজনীয়তা আর হবে না।

 

পূর্বকোণ/নয়ন/জেইউ/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট