ইলিশ মৌসুমকে ঘিরে আবারও জমজমাট হয়ে উঠছে নগরীর জেলে পল্লীগুলো। নিষেধাজ্ঞার পর প্রথমবার রূপালী ইলিশ ধরা পড়ছে জেলেদের জালে। আর তাতেই পাল্টে গেছে নগরীর উপকূলীয় এলাকার দৃশ্যপট। এই মৌসুমে সাধারণত পূর্ণিমা এবং অমাবস্যার সময়ে সমুদ্রে জোয়ারের পানিতে সবচেয়ে বেশি ইলিশ ধরা পড়ে। স্থানীয় জেলেরা এ সময়টাকে ‘জো’ বলে থাকে।
গত ২৩ জুলাই রাতে নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর থেকে জেলেদের জালে তেমন একটা ইলিশ ধরা পড়েনি। তবে পূর্ণিমার জো’তে এসে হাসি ফুটতে শুরু করেছে উপকূলীয় জেলেদের মুখে। বৈরি আবহওয়ার মধ্যেও ঝুঁকি নিয়ে দলবেঁধে সাগরে নামছে জেলেরা। আর তাদের জালে ধরাও পড়ছে রূপালী ইলিশ। তবে তুলনামূলকভাবে কিছুটা কম। আর তাই দামও এখন কিছুটা বেশি। তারপরও আগ্রহের কমতি নেই ক্রেতাদের। উপকূলজুড়ে এখন তাই ক্রেতা বিক্রেতার ভিড়ে সরগরম।
বৃষ্টি না থাকায় গত মঙ্গলবার পূর্ণিমার দিনে তেমন একটা ইলিশ আটকায়নি জেলেদের জালে। তবে পূর্ণিমার পরের দিন গত বুধবার বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর ধরা পড়তে শুরু করেছে ইলিশ। পাল্টে যেতে শুরু করেছে নগরীর পতেঙ্গা কাঠগড়, আকমল আলী ঘাট, হালিশহর, দক্ষিণ কাট্টলী রানি রাসমনি ঘাট, কাট্টলী খাল, সলিমপুর জেলে পাড়ার চিত্র। ইলিশ মৌসুমকে ঘিরে সরব হয়ে উঠেছে সৈকত এলাকা। প্রতিটি ঘাটে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ধরণের অস্থায়ী স্থাপনা। এরমধ্যে রয়েছে বেশিরভাগ চা ও বরফ বিক্রির দোকান এবং অস্থায়ীভাবে ইলিশ সংরক্ষণের গুদাম। ইলিশ মৌসুমকে ঘিরে আগামী অক্টোবরে নিষেধাজ্ঞার আগ পর্যন্ত সরব থাকবে উপকূলীয় এসব এলাকা।
গতকাল সকালে কাট্টলী উপকূলীয় এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, জেলেরা নৌকা থেকে ঝুড়িতে ইলিশ বোঝাই করে সাগর পাড়ে উঠতে না উঠতেই ঘিরে ধরছেন ক্রেতার দল। পাড়ে উঠেই নিলামে তোলা হচ্ছে এসব মাছ। সাইজ ভেদে ৮ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম উঠছে। তবে বড় সাইজের ইলিশের সংখ্যা অনেকটা কম।
শখের বসে ছেলেকে নিয়ে ইলিশ কিনতে আসা ব্যাংক কর্মকর্তা মো. জামাল বলেন, পাইকারদের জন্য এখানে ইলিশ কেনা দুরূহ ব্যাপার। খুচরা কিনতে দাম হাঁকাচ্ছেন অনেক বেশি। ৪শ থেকে ৫শ গ্রাম ইলিশ বিক্রি হচ্ছে সাতশ থেকে আটশ টাকায় এবং এককেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি করছে ১১শ থেকে ১২শ টাকায়।
কাট্টলী লতিফপুর এলাকার জেলে সর্দার মিন্টু জলদাস বলেন, মৌসুমের শুরুতে ছোট সাইজের মাছ একটু বেশি ধরা পড়ে। খরচ পুষিয়ে নিতে মাছের দাম একটু বেশি নিতে হয়। এ সময়টাতে জেলেদের তেমন একটা লাভ হয় না। জালে বড় মাছ ধরা পড়লে লাভও হয় ভাল। আশা করছি সামনের জোগুলোতে বড় সাইজের ইলিশ ধরা পড়বে।
রাসমনি ঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বৈরী আবহওয়ার মধ্যেও থেমে নেই জেলেরা। তবে ভরা মৌসুমের মতো এতটা হাঁকডাক নেই। এ ঘাটে তুলনামূলক বড় সাইজের মাছ একটু বেশি পাওয়া যায়।
দক্ষিণ কাট্টলী জেলে পাড়া সর্দার খেলন জলদাস বলেন, স্থানীয় জেলেদের প্রায় দু’শ নৌকা সাগরে নিয়মিত মাছ ধরতে গেছে। ফিশিং বোটের সংখ্যা আরও বেশি। মৌসুমে প্রথমবার সাগরে একসাথে সব জেলে। তবে এখনো আশানুরূপ ইলিশ পাওয়া যায়নি। সামনের জো’গুলোতে ইলিশের সংখ্যা বাড়বে বলে তিনি জানান।
পূর্বকোণ/মাহমুদ