ভারী বর্ষণে দেশে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের দুই শতাধিক দোকান-গোডাউনে পানি ঢুকে গেছে। বন্ধের দিন হওয়ায় ব্যবসায়ী কর্মচারী কেউই ছিল না।
ব্যবসায়ীদের দাবি চাক্তাই খাল থেকে প্রয়োজনীয় মাটি দ্রুত উত্তোলন করতে হবে। একইসাথে চাক্তাই খালের মুখে নির্মিত স্লুইচ গেটগুলো যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নতুবা চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান হবে না।
খাতুনগঞ্জ ট্রেড এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ সগীর আহমদ পূর্বকোণকে বলেন, চাক্তাই খাল থেকে সময়মত মাটি তুলতে না পারার কারণে খাতুনগঞ্জের কিছু অংশে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। শুধু খাতুনগঞ্জ নয়, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট চকবাজার এবং আশপাশের যেসব এলাকার পানি চাক্তাই খাল দিয়ে নিষ্কাশন হয় সেসব এলাকাও জলমগ্ন হয়ে পড়ে। এ সমস্যা সমাধানে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্পের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার আহ্বান জানান তিনি।
চাক্তাই এলাকার নয়া মসজিদ ও রাজাখালী এলাকায় কোথাও হাঁটু পরিমাণ, কোথাও কোমর সমান পানিতে ডুবে যায়। এসব এলাকায় অনেক দোকান ও গুদামে পানি ঢুকেছে। চাক্তাই ছাড়াও আসাদগঞ্জের মসজিদ গলি, কলা বাগিচা এলাকা পানিতে থৈ থৈ করছে। তবে আসাদগঞ্জের সড়ক উঁচু করায় পানি উঠেনি। পানি থেকে রক্ষা পেয়েছে অনেক গুদাম ও দোকানপাট।
চাক্তাই আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি আহসান খালেদ পারভেজ বললেন, ‘চাক্তাই এলাকায় পানির সমস্যা সহসা সমাধান হবে বলে মনে হয় না। জোয়ার হলেই নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে যায়।’
চাক্তাই শিল্প ও ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ বাহাদুর বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার চাক্তাই খালে স্থাপিত স্লুইস গেটের কপাট বন্ধ থাকায় পানি উঠেনি। জোঁ হওয়ায় গতকাল পানির চাপ বেশি ছিল। তাই চাক্তাই নয়া রাস্তা, মসজিদ গলি, খালপাড়সহ নিম্ন এলাকায় পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে দীর্ঘদিন ধরে পোড় খাওয়ায় ব্যবসায়ীরা সতর্ক রয়েছেন। দোকান ও গুদামের ভেতরে তিন ফুট উচ্চতার দেয়াল নির্মাণ করেছেন। এতে বড় ধরনের ক্ষয়-ক্ষতি হয়নি।’
চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার ও সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম পূর্বকোণকে বলেন, ৫ ঘণ্টা পানিবন্দী ছিলেন তারা। দুপুর থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত পানি নামেনি। ৫টার পর ধীরে ধীরে নামতে শুরু করে। গত বৃহস্পতিবার চাক্তাই খালের স্লুইচ গেট খুলে দেয়ার কারণে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে জলাবদ্ধতার সমস্যা হয়নি। কিন্তু গতকাল সম্ভবত স্লুইচ গেট বন্ধ ছিল। যে কারণে বিকাল ৫টার পরেও সড়কে পানি ছিল। কোন কোন সড়কে আড়াই ফুট পর্যন্ত পানি জমে। জোয়ারের পানি থেকে রক্ষা পেতে দোকান এবং গোডাউনের সামনে যে পাকা দেয়াল তুলেছে পানির উচ্চতা তার চেয়ে বেশি হয়েছে। যেকারণে খাতুনগঞ্জের দুই শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকেছে।
তিনি জানান, গতকাল শুক্রবার বন্ধের দিন সব দোকান-পাট বন্ধ ছিল। তাই কোন দোকানে কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার সঠিক চিত্র জানা যায়নি। তবে খাতুনগঞ্জে যেহেতু কাঁচা ও ভুষা মালের ব্যবসা বেশি। তাই কোন কোন ব্যবসায়ী বড় ধরনের ক্ষতির শিকার হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
স্লুইচ গেট সঠিকভাবে পরিচালনা করলে সমস্যা কিছুটা কমবে। চাক্তাই রাজাখালী রোডের পাশে অন্তত ৩০টি কলোনি রয়েছে। গতকাল সব কলোনিতে পানি প্রবেশ করেছে। নিম্নআয়ের এসব পরিবারে রান্না-বান্নাও বন্ধ ছিল গতকাল।
পূর্বকোণ/মাহমুদ