অপরাধ দমন, যানবাহনের নিরাপত্তা ও সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে প্রতিটি যানবাহনে ডিজিটাল নম্বর প্লেট লাগানোর উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। কিন্তু ডিজিটাল নম্বর প্লেটের সুফল মেলেনি গত এক যুগেও। পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ জানিয়েছে, বিআরটিএ’র সার্ভারে থাকা গাড়ির তথ্য সম্পর্কে জানা গেলেও ডিজিটাল নম্বর প্লেটের মাধ্যমে বিভিন্ন অপরাধে ব্যবহৃত ও চুরি যাওয়া যানবাহন সম্পর্কে জানা যাবে কিনা সে সম্পর্কে তারা অবগত নয়।
নগর পুলিশের ট্রাফিক উত্তর জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) জয়নাল আবেদীন জানান, ডিজিটাল নম্বর প্লেটের সুবিধা সম্পর্কে আমরা অবগত নই। ডিজিটাল নম্বর প্লেটের কারণে কি সুবিধা পাওয়া যাবে এ সংক্রান্ত কোনো চিঠি আমরা এখন পর্যন্ত পাইনি। যানবাহন মালিকের তথ্য পেতে বিআরটিএ’র সাথে যোগাযোগ করে ম্যানুয়ালি তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
ডিসি জয়নাল বলেন, কয়েক বছর আগেও নগরীতে সিএনজি ট্যাক্সিতে ছিনতাইসহ নানা অপরাধ সংঘটিত হতো। ‘আমার গাড়ি নিরাপদ’ নামে একটি অ্যাপসে নগরীতে চলাচলরত সিএনজি ট্যাক্সির রেজিস্ট্রেশন নম্বরের তথ্যভাণ্ডার রয়েছে। এতে ট্যাক্সিতে কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে ওই ট্যাক্সির রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে অনায়াসে গাড়ির মালিক ও চালকের তথ্য পাওয়া যায়। এ অ্যাপস চালু হওয়ার পর সিএনজিতে অপরাধ শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। একইভাবে গণপরিবহনের রেজিস্ট্রেশন নম্বরের একটি তথ্যভাণ্ডার তৈরির কাজ চলমান রয়েছে। ডিজিটাল নম্বর প্লেটের মাধ্যমে দ্রুত যানবাহন মালিকের তথ্য পাওয়া গেলে সিএমপির আলাদা তথ্যভাণ্ডারের কাজ করতে হতো না।
বিআরটিএ জানিয়েছে, ডিজিটাল নম্বর প্লেটের মাধ্যমে যানবাহন ট্র্যাকিংয়ের সুযোগ নেই। শুধু রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেনটিফিকেশন স্টেশনের (আরএফআইডি) কাছ দিয়ে গেলেই এটি শনাক্ত করা সম্ভব। ডিজিটাল নম্বর প্লেট প্রকল্প করা হয় ভুয়া লাইসেন্স প্রতিরোধের জন্য। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্থানে আরএফআইডি স্টেশন বা টাওয়ার করা হলেও চট্টগ্রামে এর কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। তবে আরএফআইডি স্টেশন করতে ২০১৮-১৯ সালে নগরীতে মাঠ পর্যায়ে জরিপ চালানো হয়েছিল। বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির সহায়তায় ডিজিটাল নম্বর প্লেট তৈরির কাজ চলছে।
বিআরটিএর তথ্য অনুযায়ী চট্টগ্রামে বিআরটিএর রেজিস্ট্রেশন নম্বরযুক্ত যানবাহনের সংখ্যা ৩ লাখ ৩৩ হাজার ১৮০টি। ১৯৯০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত এসব যানবাহন রেজিস্ট্রেশনভূক্ত করে বিআরটিএ। এরমধ্যে ২ লাখ ৮৭ হাজার ২৩৬টি যানবাহন ডিজিটাল নম্বর প্লেটের আওতায় এসেছে। বাকি ৪৫ হাজার ৯৪৪ টি যানবাহনে ডিজিটাল নম্বর প্লেট লাগানোর কাজ চলমান রয়েছে।
রাজধানী ঢাকায় আরএফআইডি স্টেশন বসানো হলেও চট্টগ্রামে এখনো বসানো হয়নি কেনো? এমন প্রশ্নের উত্তরে বিআরটিএ চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক তৌহিদুল হোসেন জানান, চট্টগ্রামে আরএফআইডি স্টেশন বসানোর বিষয়ে ২০১৮-১৯ সালে মাঠ পর্যায়ে জরিপ চালানো হয়েছে। বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন। আশা করছি শীঘ্রই আরএফআইডি স্টেশন বসানোর কাজ শুরু হবে।
২০১২ সাল থেকে যানবাহনে ডিজিটাল নম্বর প্লেট দেয়া শুরু করে বিআরটিএ। অথচ গাড়ি শনাক্তকরণ, টোল আদায়, যানজট এড়ানো, দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের কথা জানিয়ে যানবাহনের জন্য এই ডিজিটাল নম্বর প্লেট বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ বলছে ডিজিটাল নম্বর প্লেটের কোন সুফল এখনো মিলেনি। অপরাধে ব্যবহৃত হওয়া কোনো যানবাহন মালিকের তথ্য জানতে আগে যেমন বিআরটিএ অফিস থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে হত এখনো একইভাবে সংগ্রহ করা হয়। গাড়ির অবস্থান খুঁজে পেতে ডিজিটাল নম্বর প্লেট নয়- তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং ম্যানুয়াল কিছু তথ্যের মাধ্যমে অথবা ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ দেখে গাড়ির অবস্থান চিহ্নিত করা হয়।
বিআরটিএ সুত্রে জানা যায়, সব গাড়িকে একই মাপের একটি নম্বর প্লেট দেয়া হচ্ছে। প্লেটটি কেউ নকল করতে পারবে না- এটাই প্রথম সুবিধা। এর সঙ্গে আরএফআইডি স্টিকার দেয়া হচ্ছে। আরএফআইডি স্টেশনের কাছ দিয়ে কোন যানবাহন গেলে গাড়িটি কোনদিকে গেছে শুধুমাত্র তা জানা যাবে।
পূর্বকোণ/মাহমুদ