তারা বইয়ের পাতায় দেখেছে বাংলাদেশের জাতীয় পশু ডোরাকাটা সাদা বাঘ। সেই বাঘ সরাসরি প্রথম দেখল আয়শা সিদ্দিকা (৮) ও তানভির অপু (৬)। একসাথে এতোগুলো বাঘ দেখে দু’জন বেশ উচ্ছ্বাসিত। তাদের খুশিতে খুশি সরকারি কর্মকর্তা বাবা ফাবলু বিল্লা ও মা রোজিনা তাবাচ্ছুম। মিরসরাইয়ের করের হাট পশ্চিম জোয়ার থেকে চিড়িয়াখানায় ঘুরতে আসেন তারা।
গত সাড়ে ছয় বছরে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় এক জোড়া বাঘ থেকে ১৬ টা বাঘে পরিণত হয়েছে। এরমধ্যে পাঁচটিই বিরল প্রজাতির সাদা বাঘ। যা বাংলাদেশে প্রথম। এজন্য চিড়িয়াখানায় এখন মূল আকর্ষণ সাদা বাঘ। এ বাঘগুলো দেখতে চিড়িয়াখানায় দেশের দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসেন।
চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানায়, চিড়িয়াখানায় প্রতিদিন গড়ে ৩ হাজার দর্শনার্থী প্রাণী দেখতে আসে। এরমধ্যে মূল আকর্ষণ বাঘ। ২০১৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে কর্তৃপক্ষ একজোড়া বাঘ কিনে আনে ৩৩ লাখ টাকায়। যাদের নাম দেয়া হয় ‘ রাজ-পরী’। সেই রাজ-পরী দম্পতি থেকে সাড়ে ছয় বছরে পাঁচটি সাদা বাঘসহ ১৪টি বাঘ শাবকের জন্ম হয়েছে। তাদেরও রয়েছে বাহারি নাম। সাদা বাঘ শুভ্রা, তার বোন জয়া এবং ভাই জো বাইডেন বেশ পরিচিত। একসাথে এতো বাঘ শুধু চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায়ই আছে। বর্তমানে ১৪টি বাঘের বাজার মূল্য আনুমানিক চার কোটি টাকা হতে পারে বলে উল্লেখ্য করে কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিনে দেখা যায়, চিড়িয়াখানায় বাঘের জন্য তৈরি করা হয়েছে খাঁচা। সেই খাঁচাগুলোকে সাজানো হয়েছে বাহারি রঙ দিয়ে। যা আর্কষণ করছে দর্শকদের। আগে এতটি খাঁচা থাকলেও পরবর্তীতে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় খাঁচার সংখ্যাও বাড়ানো হয় বড় পরিসরে। সৌন্দর্য বাড়াতে দর্শকের মাথার উপরে বাঘের জন্য পথ করে এক পাশ থেকে আরেক পাশের খাঁচায় বাঘ হাঁটাচলার নজর কাড়া খাঁচা তৈরি করা হয়েছে। এটি দর্শকদের বেশি নজর কাড়ছে। খাঁচার নিচে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার সুযোগ ছাড়েন না কেউ।
এ মুহূর্তে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ সাফল্য ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে দেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাঘ প্রজনন কেন্দ্র গড়ে তোলার কথা ভাবছে এখানে। যেখানে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে প্রজনন করা বাঘ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সুন্দরবনেও অবমুক্ত করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে এবং দেশের অন্যান্য চিড়িয়াখানা ও সাফারি পার্কে সরবরাহ করার পরিকল্পনাও রয়েছে।
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ড. শাহাদাত হোসেন শুভ বলেন, চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা বাঘের জন্য উপযুক্ত। পর্যাপ্ত জায়গা পেলে এখানে বাঘের প্রজনন কার্যক্রম ভালোভাবে করা যাবে। আমরা এটা নিয়ে চিন্তা করছি। এখানে জন্ম নেওয়া বাঘকে সুন্দরবনে অবমুক্ত করার লক্ষ্যে চিড়িয়াখানায় জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের কাজ চলছে। গবেষণা শেষে সুন্দরবন ও চিড়িয়াখানার বাঘের একটি তুলনামূলক জিনোম স্টাডি পরিচালিত হবে। যদি কোনো উল্লেখযোগ্য পার্থক্য না পাওয়া যায়, তবে বাঘগুলোকে বন্য পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করার জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের পরে বনে অবমুক্ত করা হবে।
তিনি আরো বলেন, চিড়িয়াখানায় বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে প্রাণী বিনিময় কর্মসূচির আওতায় গত বছরে দুটি বাঘের বিনিময়ে ঢাকা চিড়িয়াখানা থেকে দুটি জলহস্তী আনার চুক্তি হয়েছে।
বন বিভাগ ও সুন্দরবন সংশ্লিষ্টদের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৪ সালের জরিপ অনুসারে সুন্দরবনে বাঘ ছিল ৪৪০টি। ২০১৮ সালের জরিপে দেখা যায়, তা কমে হয়েছে ১১৪টি। ২০০১ থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত সুন্দরবনে বাঘ মারা গেছে কমপক্ষে ৪৬টি। সে অনুযায়ী এখন সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ১০৬।
এ বিষয়ে শাহাদাত হোসেন শুভ বলেন, যদি একটি বাঘও সুন্দরবনে সফলভাবে অবমুক্ত করা যায় তবে এটি দেশের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের ইতিহাসে এক নতুন দুয়ার উন্মোচন করবে।
পূর্বকোণ/মাহমুদ