চট্টগ্রাম শনিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২৪

সর্বশেষ:

চট্টগ্রামেও বন্ধ চিকিৎসকদের প্রাইভেট চেম্বার-অস্ত্রোপচার

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৮ জুলাই, ২০২৩ | ১১:৩৯ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলা থেকে নগরীর জিইসি মোড়স্থ একটি হাসপাতালে মা-কে ডাক্তারের কাছে নিয়ে এসেছিলেন রবিউল। এজন্য পূর্ব থেকেই মোবাইল ফোনে সিরিয়ালও নেন তিনি। কিন্তু গতকাল সোমবার বিকেলে নির্ধারিত সময়ে হাজিরও চেম্বারে পৌঁছেন তিনি। কিন্তু চেম্বারে এসে জানতে পারেন চিকিৎসক দু’দিন রোগী দেখবেন না। বাধ্য হয়েই বৃদ্ধ মাকে নিয়ে বাড়ি ফিরেন রবিউল।

 

পাশের আরেকটি বেসরকারি হাসপাতালেও একে একে আসা বেশ কিছু রোগীও ফিরতে দেখা যায় গতকাল সোমবার বিকেলে। তাদের মধ্যে একজন কক্সবাজার জেলা থেকে আসা নুরুন নাহার বেগম। দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক সমস্যায় ভোগা এ নারী এসেছিলেন পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট দেখাতে। কিন্তু চিকিৎসকের চেম্বার বন্ধ থাকায় তিনিও ফিরে যেতে হয়।

 

নুরুন নাহার বেগম বলেন, ‘অনেক কষ্টে কক্সবাজার থেকে এসেছিলাম। ভেবেছি আজই রিপোর্ট দেখিয়ে আবার বাড়ি ফিরে যাব। কিন্তু দু’দিন ডাক্তার চেম্বার করবেন না। এখন কী করবো, তা বুঝে আসছে না।’

 

রবিউল কিংবা নুরুন নাহার বেগমই নন, তাঁদের মতো গতকাল সোমবার অনেকেই বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে থাকা চিকিৎসকে দেখা এসে ব্যর্থ হয়ে ফিরেছেন অসংখ্য রোগী। চিকিৎসক না থাকায় পূর্ব নির্ধারিত অস্ত্রোপচারও পিছিয়েছে অনেকের।

 

মূলত ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নবজাতক ও প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় দুই চিকিৎসককে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে চট্টগ্রামসহ সারা দেশেই গতকাল সোমবার এবং আজ মঙ্গলবার দু’দিন চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বার ও সকল অস্ত্রোপচার বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন চিকিৎসকদের সংগঠনগুলো। যার কারণে রোগী দেখা এবং অস্ত্রোপচার কার্যক্রম বন্ধ ছিল এ দিন। যার কারণে চিকিৎসা নিতে এসে ভোগান্তিতে পড়েন রোগীরা।

 

গতকাল সোমবার নগরীর বেশ কিছু বেসরকারি হাসপাতাল ও ল্যাবে সরেজমিনে দেখা যায়- বেশিরভাগ চিকিৎসকদের চেম্বারের সামনে চেম্বার না করার বিষয়ে নোটিশ টাঙানো ছিল। এ দিন কোন হাসপাতাল কিংবা ল্যাবে কোন চিকিৎসককে পাওয়া যায়নি। অন্যান্যদিন রোগীদের হইহুল্লর থাকলেও বেশিরভাগ হাসপাতালই ছিল নীরব। অনেকেই বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে এলেও রিপোর্ট দুই দিন পর পাওয়া যাবে বলে আগেই জানিয়ে দিচ্ছেন। চিকিৎসক না থাকায় রোগীরা এসে ফিরে যাচ্ছেন।

 

তবে হাসপাতালে ভর্তিরত রোগীদের চিকিৎসা কার্যক্রম অব্যাহত ছিল। তাদের চিকিৎসা সেবা পেতে কোন ধরনের সমস্যা হয়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে, জরুরি রোগী ও গুরুতর অসুস্থদের সেবা কার্যক্রমও চালিয়ে যেতে দেখা গেছে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে।

 

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম প্রাইভেট হসপিটাল ক্লিনিক ওনারস এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ডা. লিয়াকত আলী বলেন, ‘সকল বেসরকারি হাসপাতাল-ল্যাবেই চিকিৎসকরা তাঁদের চেম্বার বন্ধ রেখেছেন। যার কারণে সাধারণ সেবা ও অস্ত্রোপচার কার্যক্রম বন্ধ ছিল। তবে ইমাজেন্সি সেবা কার্যক্রম চালু ছিল। আবার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা না আসায় পূর্বনির্ধারিত অপারেশনগুলো পিছিয়ে দিতে হয়েছে। মঙ্গলবারও এ কার্যক্রম চলবে।’

 

প্রসঙ্গত : রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানা ও ডা. মুনা সাহাকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে এবং তাদের মুক্তির দাবিতে গাইনি ও প্রসূতিবিদ চিকিৎসকদের সংগঠন অবস্টেট্রিক্যাল এন্ড গাইনিকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি) এ কর্মসূচি ঘোষণা দেন। পরবর্তীতে তাদের কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা জানিয়েছে চিকিৎসকদের অন্যান্য সংগঠনগুলোও সোমবার এবং মঙ্গলবার গত চেম্বারে রোগী দেখা এবং অস্ত্রোপচার বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন। ফলে এ দু’দিন সারাদেশে চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বার বন্ধ থাকবে।

 

জানতে চাইলে গাইনি চিকিৎসকদের সংগঠন ওজিএসবির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি অধ্যাপক ডা. কামরুন নেছা রুনা পূর্বকোণকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চট্টগ্রামের গাইনি চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত সকল চেম্বার বন্ধ ছিল। যা মঙ্গলবারও চলবে। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া হবে। আমাদের আন্দোলনের সঙ্গে অন্যান্য চিকিৎসকরাও একমত প্রকাশ করে চেম্বার বন্ধ রেখেছেন। মঙ্গলবার কর্মবিরতির শেষে আবার বিএমএর সঙ্গে বসে পরবর্তী আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

পূর্বকোণ/মাহমুদ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট