২০১৮ সালের এপ্রিলে চট্টগ্রামের জিইসি মোড়ে ইউনিএইড নামের একটি কোচিং সেন্টারের পরিচালক রাশেদ মিয়াকে রনির পেটানোর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওই বছরের ১৯ এপ্রিল নগরীর পাঁচলাইশ থানায় করা অভিযোগে রাশেদ মিয়া দাবি করেছিলেন, রনি এবং তার সহযোগীরা জিইসি মোড়ে তার কার্যালয়টি ব্যবহার করতেন। তাদের নিষেধ করায় রনি ক্ষিপ্ত হয়ে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ওই কার্যালয়ে গিয়ে তাকে মারধর করে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। ঘটনার পর চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে নুরুল আজিম রনি পদত্যাগ করেছিলেন, সেই ‘চাঁদা দাবির অভিযোগ’ থেকে অবশেষে অব্যাহতি পেলেন তিনি।
সোমবার (১০ জুলাই) চট্টগ্রামের দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. আমিরুল ইসলামের আদালতে এ মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি শেষে রনিকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
তবে একই মামলায় ‘মারধরের’ ঘটনায় অন্য ধারায় রনি ও আরেক আসামি নোমান চৌধুরী রাকিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ৩০ অগাস্ট সময় নির্ধারণ করে সেটি মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে স্থানান্তরের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন না বাদি রাশেদ মিয়া।
রনির আইনজীবী মিঠুন বিশ্বাস বলেন, অভিযোগ গঠন বিষয়ে উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত দুই আসামির বিরুদ্ধে ৩৮৫ ধারায় আনা চাঁদা দাবির অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায় তা থেকে আসামিদের অব্যাহতির আদেশ দিয়েছেন। তবে তাদের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগে ৩২৩, ৩৪২ ও ৫০৬ ধারায় অভিযোগ গঠন করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। যেহেতু ৩৮৫ ধারায় অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে তাই বাকি ধারায় বিচার কাজ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চলবে।”
যদিও ঘটনার পর রনি তখন বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিলেন, রাশেদের সঙ্গে মিলে তিনি ইউনিএইড নামের বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং সেন্টারটি পরিচালনা করতেন। তিনি রাশেদকে সাড়ে নয় লাখ টাকা ধার দিয়েছিলেন। ইউনিএইড কার্যালয়ে অন্য একটি কোচিং সেন্টারের এক শিক্ষককে কক্ষ ভাড়া দেওয়ায় রাশেদের সাথে তার ‘অপ্রীতিকর ঘটনা’ ঘটেছিল বলে দাবি করেছিলেন রনি। ধারের টাকা শোধ না করে রাশেদ ‘কিছু রাজনীতিবিদের ইন্ধনে’ মামলা করেছিল বলে তখন দাবি করেছিলেন রনি।
রনির আইনজীবী মিঠুন বিশ্বাস বলেন, “অভিযোগে ঘটনার যে দিন ও সময় উল্লেখ করা হয়েছিল তার সাথে বাদী রাশেদ মিয়ার মামলায় সংযুক্ত হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ সংক্রান্ত নথিপত্রের মিল নেই। এছাড়া ঘটনার বিষয়ে যাদের সাক্ষী করা হয়েছে তাদের ১৬১ ধারায় দেওয়া জবানবন্দি ও এজাহারের বক্তব্যে মিল নেই। রনি ও বাদীর মধ্যে ব্যবসায়িক লেনদেন ছিল। এসব তথ্য আমরা আদালতে উপস্থাপন করেছি। চাঁদা দাবির অভিযোগ সন্তোষজনক না হওয়ায় তা থেকে আদালত আসামিদের অব্যাহতি দিয়েছেন।
২০১৬ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে হাটহাজারীতে ভোট কেন্দ্রের বাইরে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তারের পর ভ্রাম্যমাণ আদালত রনিকে দুই বছরের সাজা দেয়। পরে জামিনে মুক্তি পেয়ে সাজার বিরুদ্ধে আপিল করেছিলেন তিনি। তাতে আদালত সাজা বাতিল করে রনিকে বেকসুর খালাস দেয়। তবে অস্ত্র আইনে দায়ের হওয়া মামলার বিচার চলছে। চলতি বছরের ২০ জুন আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালনকারী বিজিবির চার সদস্য জানান, নুরুল আজিম রনির কাছ থেকে অস্ত্র উদ্ধার হতে তারা কেউই দেখেননি।
পূর্বকোণ/রাজীব/পারভেজ