চট্টগ্রাম শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪

চামড়া বিক্রি শুরু করেছেন চট্টগ্রামের আড়তদাররা

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

৭ জুলাই, ২০২৩ | ১২:২৯ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রামে প্রক্রিয়াজাত করা কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি শুরু করেছেন আড়তদাররা। ইতিমধ্যেই ২০ হাজার পিস চামড়া ঢাকাসহ কয়েকটি জেলায় বিক্রি করা হয়েছে। তবে এখনো ট্যানারি মালিকেরা চামড়া কেনা শুরু করেননি। আগামী সপ্তাহ থেকে পুরোদমে বেচাকেনা শুরু হবে বলে আশা আড়তদারদের।

 

বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমবায় সমিতির সভাপতি মো. মুসলিম উদ্দিন পূর্বকোণকে বলেন, ‘কয়েক দিনে বিভিন্ন আড়ত থেকে প্রায় ২০ হাজার পিস চামড়া বিক্রি করা হয়েছে। ঢাকার হেমায়েতপুরের আড়তদার ও নাটোরসহ কয়েকটি জেলার আড়তদাররা চামড়া কিনে নিচ্ছেন।’

 

তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যেই ঢাকার ট্যানারি মালিকেরা যোগাযোগ শুরু করেছেন। আগামী সপ্তাহে চামড়া কিনতে চট্টগ্রামে আসবেন বলে জানিয়েছেন তারা।’

 

সরকার বেঁধে দেওয়া দরে চামড়া বেচাকেনার বিষয়ে জানতে চাইলে মুসলিম উদ্দিন বলেন, ‘মনে হচ্ছে, সরকারি দরে বেচাকেনা হচ্ছে। চট্টগ্রাম থেকে কিনে নিয়ে ঢাকার আড়তদাররাও আবার লাভ করবেন। লাভ না হলে তো বেচাকেনা শুরু হতো না।’

 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব বলছে, চট্টগ্রামে এবার তিন লাখ ১৮ হাজার ৮শ পিস চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছে। এরমধ্যে গরু ও মহিষের চামড়া রয়েছে দুই লাখ ৬৫ হাজার। ছাগলের চামড়া ৫৩ হাজার ৮শ ফিস। গত বছর (২০২২ সাল) তিন লাখ ৪৩ হাজার ২৫০ পিস চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছিল। গতবারের চেয়ে এবার ২৪ হাজার ৪৫০ পিস চামড়া কম সংগ্রহ হয়েছে।

 

কোরবানির পশুর দাম বাড়তি ও মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় কোরবানির সংখ্যা কমেছে। তাই চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি বলে জানান কাঁচা চামড়া আড়তাদার সমবায় সমিতির সভাপতি মুসলিম উদ্দিন।

 

প্রতি বছর কোরবানির আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ট্যানারি ও আড়তদারদের সঙ্গে বৈঠক করে চামড়ার দর বেঁধে দেয়। এবার ঢাকার বাইরের চামড়ার দর দিয়েছে প্রতি বর্গফুটে ৪৫-৪৮ টাকা। সেই হিসাবে চট্টগ্রামে সংগ্রহ করা চামড়া ২৪-২৫ কোটি টাকা বেচাকেনার আশা করছেন আড়তদাররা।

 

বেচাকেনায় নিরাপত্তা চান আড়তদাররা :

চট্টগ্রামে আড়তদার সমিতির সদস্য রয়েছেন ১১২ জন। সমিতির সদস্যসহ অন্তত ২৫০-৩০০ জন আড়তদার ও ব্যবসায়ী চামড়া বেচাকেনায় জড়িত ছিলেন। বর্তমানে চামড়া কেনাবেচায় আছেন সমিতির ২০-২৫ জন আড়তদার। কারণ ২০১৫ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত চামড়া বেচাকেনা করে ট্যানারি মালিকদের কাছে বিশাল অঙ্কের টাকা আটকে যায়। বছরের পর বছর পুঁজি আটকে থাকায় অনেকেই পুঁজিহারা হয়ে পড়েন। হয়ে পড়েন নিঃস্ব। ধার-দেনা ও ঋণের ভার সইতে না পেরে দেউলিয়া হয়ে যান।

 

এখনো ২০-২৫ কোটি টাকা বকেয়া পড়ে রয়েছে বলে জানান বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সহসভাপপতি মো. আবদুল কাদের।

 

তিনি বলেন, ব্যাংক ও সরকারি সহায়তা না থাকায় পুঁজিহারা অনেক ব্যবসায়ী ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে বাধ্য হয়েছেন। তাই চামড়া বিক্রি করতে না পেরে মানুষ এখন এতিমখানা ও মাদ্রাসায় দান করে দিচ্ছেন।

 

প্রান্তিক বেপারি ও মৌসুমী ব্যবসায়ীরা জানান, কোরবানিদাতাদের কাছ থেকে এবার এক- দুই শ টাকায় চামড়া কিনেছেন। পাড়া-মহল্লায় মৌসুমী ব্যবসায়ীদের আনাগোনা না থাকায় শত শত চামড়া এতিমখানা, মসজিদ-মাদ্রাসায় দান করে দিয়েছেন।

 

গাউসিয়া কমিটি বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রায় এক লাখ চামড়া সংগ্রহ করেছে বলে জানান গাউসিয়া কমিটির যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট মুছাহেব উদ্দিন বখতিয়ার।

 

আড়তদার হাজি মোহাম্মদ আলী এবার প্রায় ৩৫ হাজার কাঁচা চামড়া লবণ দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করেছেন। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘চামড়া বেচাকেনার অর্থ প্রাপ্তি নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন আড়তদাররা। আড়তদারদের বড় অঙ্কের টাকা আটকে রয়েছে ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে।’ তার ৭-৮ কোটি টাকা আটকে রয়েছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গত বছরের প্রায় দেড় কোটি টাকা এখনো পাইনি। ট্যানারি মালিকেরা কথা দিয়েছিল, পুরোনো বকেয়া পর্যায়ক্রমে পরিশোধ করে দিবেন। এক মৌসুমের টাকা আরেক মৌসুমের আগে পরিশোধ করে দেবেন। কথা রাখেননি ট্যানারি মালিকেরা।’

 

চামড়া বিক্রির টাকার নিশ্চয়তার বিষয়ে সরকার ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সহায়তা চেয়েছেন আড়তদাররা। আড়তদার সমিতির সভাপতি মুসলিম উদ্দিন জানান, চামড়ার রশিদ বা বিলের উপর বেচাকেনা হয়। বকেয়ার জন্য কোনো চেক দেওয়া হয় না। আইনিভিত্তিমূলক ব্যবস্থা না থাকায় বছরের পর বছর পুরোনো বকেয়া আটকে রয়েছে। বকেয়া আদায়ের জন্য আইনি ব্যবস্থা নিতে পারছেন না পাওনাদাররা।

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট