চলতি বর্ষায় নগরীর চাক্তাই ডাইভারশন খাল, হিজড়া খাল এবং বাকলিয়া খাল সংলগ্ন ১০টি এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে। ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় এই তিন খালের কাজ শেষ করতে না পারায় সেখানে জলাবদ্ধতার আশঙ্কা করছেন খোদ প্রকল্প পরিচালক। তবে ভারী বৃষ্টি হলেও তিন খালের এই ১০ এলাকা ছাড়া নগরীর অন্যান্য এলাকায় জলাবদ্ধতার আশঙ্কা নেই বলে দাবি করেছেন সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল মো. শাহ আলী।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম শহরের জলবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের অধীনে ৩৬টি খালের কাজ চলমান রয়েছে। এরমধ্যে চলতি বছরের বর্ষায় চাক্তাই ডাইভারশন খাল, হিজড়া খাল এবং বাকলিয়া খাল সংলগ্ন ১০টি পয়েন্টে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে। চাক্তাই ডাইভারশন খাল সংলগ্ন ফুলতলা বাজার, রসুলবাগ আবাসিক, বাকলিয়া এক্সেস রোডের আশপাশ এলাকা, ১৯ নং বাকলিয়া ওয়ার্ডের ইসহাক সওদাগর পোল, তক্তার পোলের আশপাশের এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে।
হিজড়া খাল সংলগ্ন কাপাসগোলা, কাতালগঞ্জ, পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকা এবং বাকলিয়া খাল সংলগ্ন রাহাত্তারপোল এবং নুর নগর হাউজিং সোসাইটি সংলগ্ন এলাকায় এবছর বর্ষায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে। এইসব এলাকার বাইরে বর্ষায় বৃষ্টির পানি দীর্ঘক্ষণ থাকবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল মো. শাহ আলী বলেন, প্রকল্পের অধীনে ৩৬টি খালের কাজ করছি আমরা। এরমধ্যে ১৬টি খালের কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। এসব খালের পাশে রাস্তার কাজ এবং কোন কোন খালের পাশে ফুটপাতের কাজও শেষ হয়েছে। এছাড়াও আরো ৯টি খালের কাজ শেষের পথে। এসব খালের কাজ সামান্যই বাকি রয়েছে। তবে এই ২৫টি খালের কোথাও কোন বাঁধ বা খাল সংকীর্ণ নেই। ডিজাইন অনুযায়ী পুরো খাল পরিষ্কার করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এই প্রকল্পের অধীনে আরো ১১টি খাল রয়েছে। এই ১১টি খাল তুলনামূলক বড় খাল। এসব খালের মধ্যে রয়েছে মির্জা খাল, ত্রিপুরা খাল, গয়নাছড়া খাল, মহেশ খাল, চাক্তাই ডাইভারশন খাল, বাকলিয়া খাল, শীতলঝর্ণা খাল, নোয়া খাল, বির্জা খাল, হিজড়া খাল ও জামালখান খাল। এরমধ্যে চাক্তাই ডাইভারশন খাল, হিজড়া এবং বাকলিয়া খাল সংলগ্ন কিছু কিছু এলাকায় এবছরও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে। এর বাইরে অন্য এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা নেই। বৃষ্টির পানি যেতে যেটুকু সময় লাগবে, ততক্ষণ পর্যন্ত পানি থাকবে।
ভূমি অধিগ্রহণের অভাবে এসব এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, চাক্তাই ডাইভারশন খাল সংলগ্ন ফুলতলা বাজার, রসুলবাগ আবাসিক, বাকলিয়া এক্সেস রোডের আশপাশ এলাকা, ১৯ নং বাকলিয়া ওয়ার্ডের ইসহাক সওদাগর পোল, তক্তার পোলের আশপাশের এলাকা। হিজড়া খাল সংলগ্ন কাপাসগোলা, কাতালগঞ্জ, পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকা এবং বাকলিয়া খাল সংলগ্ন রাহাত্তারপোল, নুর নগর হাউজিং সোসাইটি এলাকায় ভূমি অধিগ্রহণের অভাবে আমরা কাজ করতে পারিনি। ফলে এসব এলাকায় এবছরও বর্ষায় জলাবদ্ধতা হতে পারে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সিডিএ’র ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয় একনেক। তিন বছর মেয়াদি এই প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় শেষ হয় ২০২০ সালের জুন মাসে। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন ও ব্যয় বাড়িয়ে ১০ হাজার কোটি টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে বলে জানা যায়। তবে এখনো সংশোধিত প্রকল্পের অনুমোদন মিলেনি। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ২০১৮ সালের ৯ এপ্রিল সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) স্বাক্ষর করে সিডিএ। এরপর ২৮ এপ্রিল প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। বর্তমানে প্রকল্পের ৭৬ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে।
পূর্বকোণ/এসি