চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

২৪ কোটি টাকার ব্যবসার আশা আড়তদারদের

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

৪ জুলাই, ২০২৩ | ১০:৫৩ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামে প্রক্রিয়াজাত করা কোরবানির পশুর চামড়ায় ২৪-২৫ কোটি টাকার ব্যবসার আশা করছেন আড়তদাররা। এবার ঢাকার বাইরের প্রতি ফুট চামড়ার দর দিয়েছে ৪৫-৪৮ টাকা। সেই হিসাবে চামড়ার দাম কিছুটা বাড়লেও লবণ ও শ্রমিক খরচ বেড়ে যাওয়ায় বড় লাভের আশা করছেন না আড়তদাররা।

 

তবে বেচাকেনায় টাকার নিশ্চয়তার বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সহায়তা চেয়েছেন ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা। কারণ ২০১৫ সাল থেকে ২০১৮ সালে ঢাকা ট্যানারি মালিকদের কাছে অনাদায়ী অন্তত ২০-২২ কোটি টাকা রয়ে গেছে। ট্যানারি মালিকেরা আশ্বাস দিলেও সেই বকেয়া এখনো পরিশোধ করা হয়নি। কোটি কোটি টাকার পুঁজি আটকে থাকায় অনেক ব্যবসায়ী ও আড়তদার দেউলিয়া হয়ে গেছে।

 

আড়তদার সমিতির সভাপতি মুসলিম উদ্দিন জানান, চামড়ার রশিদ বা বিলের উপর বেচাকেনা হয়। বকেয়ার জন্য কোনো চেক দেওয়া হয় না। আইনি ভিত্তিমূলক ব্যবস্থা না থাকায় বছরের পর বছর পুরোনো বকেয়া আটকে রয়েছে। বকেয়া আদায়ের জন্য আইনি ব্যবস্থা নিতে পারছেন না পাওনাদাররা।

 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব বলছে, চট্টগ্রামে তিন লাখ ১৮ হাজার ৮শ পিস চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছে। এরমধ্যে গরু ও মহিষের চামড়া রয়েছে দুই লাখ ৬৫ হাজার। ছাগলের চামড়া ৬ হাজার ৫শ ফিস।

 

প্রতি বছর কোরবানির আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ট্যানারি ও আড়তদারদের সঙ্গে বৈঠক করে চামড়ার দর বেঁধে দেয়। এবার ঢাকার বাইরের চামড়ার দর দিয়েছে প্রতি বর্গফুটে ৪৫-৪৮ টাকা।

 

বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমবায় সমিতির সভাপতি মো. মুসলিম উদ্দিন পূর্বকোণকে বলেন, চট্টগ্রামে প্রক্রিয়াজাত করা চামড়া ২৪-২৫ কোটি টাকা বিক্রি করা যাবে। এবার চামড়ার দর কিছুটা বেড়েছে। তবে লবণ ও শ্রমিক খরচ অনেক বেড়ে গেছে।

 

আড়তদার ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরকার বেঁধে দেওয়া দরে প্রক্রিয়াজাত করা গরুর চামড়া গড়ে নয়শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা যাবে। সেই হিসাবে দুই লাখ ৫৮ হাজার ৫শ গরুর চামড়া বিক্রি হবে ২৩ কোটি ২৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। মহিষের চামড়াও গড়ে ৮শ টাকা করে করা যাবে। সেই হিসাবে ৬ হাজার ৫শ মহিষের চামড়া বিক্রি হবে ৫২ লাখ টাকা। ছাগলের চামড়া একশ টাকা করে বিক্রি করা যাবে। ৫৩ হাজার ৮শ চামড়া থেকে বিক্রি হবে ৫৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সেই হিসাবে গরু, মহিষ ও ছাগলের চামড়া বিক্রি করে মিলবে ২৪ কোটি ৩২ লাখ ৩০ হাজার টাকা।

 

প্রান্তিক বেপারি ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা জানান, কোরবানিরা এক-দুইশ টাকায় চামড়া বিক্রি করেছেন। মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তিন থেকে পাঁচশ টাকায় চামড়া কিনেছেন আড়তদাররা। তবে আড়তদার সমিতির সভাপতি মুসলিম উদ্দিন দাবি করেন, চামড়াভেদে সর্বোচ্চ ৭-৮শ টাকায় কিনেছেন।

 

আড়তদাররা দাবি করেন, লবণের দাম বস্তাপ্রতি (৭৪ কেজি) গত বছরের তুলনায় তিনশ টাকা বেড়েছে। একই সঙ্গে শ্রমিক ও অন্যান্য খরচও অনেকটা বেড়ে গেছে।

 

চলতি বছর সাড়ে তিন লাখ চামড়া সংগ্রহের আশা করেছিল আড়তদাররা। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে তিন লাখ ১৮ হাজার ৮শ পিস চামড়া সংগ্রহ হয়েছে বলে জানায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গত বছর (২০২২ সাল) সংগ্রহ হয়েছিল তিন লাখ ৪৩ হাজার ২৫০ পিস। জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাব বলছে, কোরবানির পশুর লক্ষ্য ধরা হয়েছে আট লাখ ৭৯ হাজার ৭১৩টি। কিন্তু কোরবানি হয়েছে ৮ লাখ ১৭ হাজার ১২৯টি। যা গত বছরের তুলনায় ২৪ হাজার ৪৫০টি কম।

 

বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমবায় সমিতির সভাপতি মো. মুসলিম উদ্দিন গতকাল পূর্বকোণকে বলেন, কোরবানির পশুর দাম বাড়তি ও মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ থাকায় কোরবানির সংখ্যা কমেছে। তাই চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি।

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট