২০১৯ সালে কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করতে না পেরে পথে-ঘাটে ফেলে দিয়েছিল। নগরীর বিভিন্ন স্থানের রাস্তা থেকে প্রায় দেড় লক্ষাধিক কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করে ডাম্পিং স্টেশনে পুঁতে ফেলেছিল সিটি করপোরেশন। বিভিন্ন মাদ্রাসা-এতিমখানা ও মসজিদের জন্য সংগ্রহ করা শত শত চামড়া বিক্রি করতে না পেরে পুঁতে ফেলেছিল। বড় ধস নেমেছিল কোরবানির পশুর চামড়ায়। এর পরের দুই বছর (২০২০-২০২১ সাল) করোনায় আক্রান্ত হয়ে ধস নামে চামড়ার বাজারে। চার বছর পেরিয়ে গেলেও চামড়ার বাজার এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে গত বছর (২০২২ সাল) চট্টগ্রামে কোরবানির পশু সংগ্রহ হয়েছিল তিন লাখ ৪৩ হাজার ২৫০ পিস। এরমধ্যে গরুর চামড়া ছিল তিন লাখ ১৬ হাজার ৪৫০। ছাগলের চামড়া ছিল ২৬ হাজার ৮০০ পিস। চার বছর ধরে পশুর চামড়া সংগ্রহ এরমধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে।
আড়তদাররা বললেন, করোনা মহামারীর পর অর্থনৈতিক সংকট এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি মানুষ। মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। এরফলে ভাগে কোরবানির সংখ্যা বাড়ছে। তাই চামড়ার সংখ্যা বাড়ছে না।
গত সোমবার চামড়া আড়তদার, ব্যবসায়ী ও চামড়া সংগ্রহকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বৈঠক করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। চট্টগ্রামের চা বোর্ড কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং টিমের চট্টগ্রামের প্রধান ও চা বোর্ডের সদস্য (অর্থ ও বাণিজ্য) মোহাম্মদ নূরুল্লাহ নূরী পূর্বকোণকে বলেন, ‘আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা চামড়া সংগ্রহ ও সংরক্ষণে প্রস্তুতি নিয়েছেন। কোরবানির পশুর চামড়া যাতে নষ্ট না হয় সেই বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, করোনা মহামারীর কারণে তিন বছর কোরবানিদাতার সংখ্যা তেমন বাড়েনি। আশা করছি, এবার ৫-১০ শতাংশ কোরবানি বাড়তে পারে।’ এবার সাড়ে তিন লাখ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে বলে জানান তিনি।
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা ৮ লাখ ৭৯ হাজার ৭১৩। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কোরবানিযোগ্য পশুর চাহিদা আর চামড়া সংগ্রহের মধ্যে বড় ফারাক দেখা যাচ্ছে।
প্রতি বছরের ন্যায় এবারও চামড়ার দর বেঁধে দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন আড়তদার সমিতি।
বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. মুসলিম উদ্দিন পূর্বকোণকে বলেন, ‘প্রতি বর্গফুটে চামড়ার দর বেড়েছে এক টাকা। কিন্তু লবণের দাম বস্তাপ্রতি (৭৪ কেজি) বেড়েছে তিন শ টাকা। বাড়তি দরে ২০ ফুটের একটি চামড়ার দাম বাড়বে ২০ টাকা। কিন্তু লবণ ব্যবহার বাড়বে ৩০-৪০ টাকা। এছাড়াও কাটাছেঁড়া ও দাগ থাকায় ট্যানারি মালিকেরা চামড়া কেনার সময় ২০-২৫ শতাংশ চামড়া বাদ দেয়। সেই হিসাবে দাম বাড়ানোর বড় প্রভাব পড়বে না চামড়ার দরে।
চামড়া কেনার সকল প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে জানান বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি আবদুল কাদের। তিনি বলেন, এবারও সাড়ে তিন লাখ চামড়া কেনার প্রস্তুতি নিচ্ছে আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা। চট্টগ্রামে আড়তদার সমিতির সদস্য রয়েছে ১১২ জন। এছাড়াও অন্তত ২৫০-৩০০ জন চামড়া সংগ্রহ করতেন। বর্তমানে চামড়া কেনাবেচায় আছেন ৩০-৩২ জন।
তিনি বলেন, নিজ উদ্যোগে ধার-কর্জ ও ঋণ নিয়ে কয়েক বছর ধরে চামড়া সংগ্রহ করছেন ব্যবসায়ীরা। কারণ ২০১৫ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ট্যানারি মালিকদের কাছে এখনো বকেয়া পড়েছে প্রায় ২০-২৫ কোটি টাকা। ৭-৮ বছর আগের বড় অঙ্কের পুঁজি আটকে থাকায় অনেকেই ফতুর হয়ে গেছেন। তারপরও টেনেটুনে টিকে রয়েছেন অনেকেই।
ট্যানারি মালিকেরা জানান, বৈশ্বিক বাজারে চামড়ার চাহিদা বেড়েছে। বিশেষ করে ইউরোপ, আমেরিকা, জাপানসহ কয়েকটি দেশ চামড়াজাতীয় পণ্যের দিকে ফের ঝুঁকে পড়েছে। কয়েক বছর আগে বড় কোম্পানিগুলো সিনথেটিক (কৃত্রিম) মেটেরিয়ালের ব্যবহার বাড়িয়েছিল।
রিফ লেদার লিমিটেডের পরিচালক মোখলেছুর রহমান পূর্বকোণকে বলেন, ‘আমরা এক লাখের বেশি চামড়া কিনি। এবারও লক্ষাধিক পরিমাণ চামড়া কেনার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। ঢাকা থেকেও ট্যানারি মালিকেরা চামড়া সংগ্রহ করতে আসবেন। আশা করছি, এবার চামড়া নষ্ট হবে না।’
পূর্বকোণ/এসি