চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

চট্টগ্রামে বৃষ্টি উপেক্ষা, গরু বেচাকেনার ধুম

ইফতেখারুল ইসলাম

২৮ জুন, ২০২৩ | ১১:০১ পূর্বাহ্ণ

কোরবানির দুইদিন আগে গতকাল (মঙ্গলবার) পশুর হাটগুলো ছিল জমজমাট। গতকাল বিবিরহাট বাজারে হাটবার ছিল। অন্য হাটগুলোতেও ছিল ক্রেতার প্রচণ্ড চাপ। হাটগুলোতে প্রচুর গরু বেচা-কেনা হয়েছে।

 

ক্রেতাদের আশা ছিল ঈদ যত ঘনিয়ে আসবে দাম তত পড়ে যাবে। গতকাল দাম কিছুটা নিম্নমুখী হলেও গত বছরের তুলনায় এখনো একটু বেশি বলে ক্রেতারা জানিয়েছেন। আজ বুধবারও বেচা-কেনা অব্যাহত থাকবে বলে বেপারিরা জানিয়েছেন।

 

ঈদের ছুটির প্রথম দিন নগরীতে কোরবানির পশুর হাটগুলোতে ক্রেতা বাড়তে শুরু করলেও বেচাকেনায় বিঘ্ন ঘটিয়েছে আষাঢ়ের বৃষ্টি। সকাল থেকেই থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় দিনের প্রথম ভাগে হাটে ক্রেতা ছিল কম। তবে দুপুরের পর থেকে হাটে ক্রেতা আসা শুরু করে এবং পুরোদমে বেচাকেনা চলে।

 

সাগরিকা বাজারের মামা-ভাগিনা মাঠের বেপারি মো. হারুন পূর্বকোণকে জানান, গতকাল (মঙ্গলবার) প্রচুর গরু বিক্রি হয়েছে। হাটে ক্রেতার প্রচণ্ড চাপ থাকার কথা উল্লেখ করে বলেন, যত ক্রেতা আসছে সে পরিমাণ গরু সাগরিকায় নেই। দাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কোরবানির হাট নিয়ে একটা প্রবাদ আছে ‘কেউ গরু কিনে, কেউ দড়ি কিনে।’

 

তবে সস্তার যুগ শেষ। গরুর দাম কমেনি। কমার সম্ভাবনাও নেই। গতকাল (মঙ্গলবার) নগরীর সাগরিকা, বিবিরহাট, কর্ণফুলী গরুর বাজার, বড়পোল সংলগ্ন গোডাউনের পরিত্যক্ত মাঠ ও ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের আউটার রিং রোড সিডিএ বালুর মাঠের পশুরহাটগুলো সরেজমিন পরিদর্শনকালে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সাথে আলাপ হয়।

 

বিবিরহাট থেকে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকায় ষাড় কিনেছেন বহদ্দারহাট এলাকার বাসিন্দা গোলাম হোসেন। তিনি জানান, একই সাইজের গরু গত বছর আরো ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা কমে পাওয়া গিয়েছিল। প্রতি মণ মাংস ৩২ থেকে ৩৫ হাজার টাকা পড়ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তবে অনেক ক্রেতা আছেন যাদের গরু নিয়ে ধারণা নেই তাদের কেউ কেউ আরো বেশি দাম দিয়েও গরু কিনেছেন। অনেক গরু সৌন্দর্য্যরে কারণে কিছুটা বেশি দামে বিক্রি হয়েছে।

 

বিবিরহাট বাজারের বেপারি রইস উদ্দিন জানান, তিনি প্রতিবছর গরু মোটাতাজা করেন চট্টগ্রামের হাটে বিক্রির জন্য। এবারো কুষ্টিয়া থেকে গরু এনেছেন। গরু আনার পর বিক্রি শুরু না হওয়ায় প্রথমদিকে তিনি হতাশ ছিলেন। তবে আশা ছাড়েননি। প্রত্যাশা অনুযায়ী গতকাল তার অধিকাংশ গরু বিক্রি হয়ে গেছে। বাকি কয়েকটি গরু আজ বুধবার বিক্রি হয়ে যাবে বলে তার আশা। তিনি জানান, শহরের মানুষ ঈদের আগের দিন কোরবানির পশু কিনে থাকেন। এবারো তাই হয়েছে।

 

৭নং পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোবারক আলীর তত্ত্বাবধানে বিবিরহাট গরুর বাজারে হাসিল খাস কালেকশন করছে সিটি কর্পোরেশন। মোবারক আলী পূর্বকোণকে জানান, ঐতিহ্যবাহী বিবিরহাটে গতকাল মঙ্গলবার গরু বেচা-কেনার ধুম পড়েছে। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত খাস কালেকশন হয়েছে ৩৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা। আজ বুধবার বেচা-কেনার ধারা অব্যাহত থাকলে কালেকশ ৬০ লাখ টাকা পার হওয়ার আশা প্রকাশ করেন তিনি। মুরাদপুর মোড়ে নির্মিত কালভার্টটি গতকাল খুলে দেয়ার ফলে হাটে প্রচুর পরিমাণে গরু এসেছে। ক্রেতারাও হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। ছোট এবং মাঝারি গরু সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে। এবার গরুর দাম প্রতি মণ ৩০ হাজার থেকে ৩২ হাজার টাকা পড়ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

 

কক্সবাজারের পেকুয়া থেকে কর্ণফুলী গরুর বাজারে আসা আবু নাছের বলেন, তিনি পেকুয়ার বিভিন্ন এলাকা গরু কিনে শহরে বিক্রির জন্য এনেছেন। শুরুর দিকে বিক্রি কম হলেও গতকাল বেচা-বিক্রি ভাল ছিল। গরু বিক্রি করে তিনি খুশি।

 

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের তথ্যানুযায়ী এবার চট্টগ্রামে চাহিদার তুলনায় প্রায় ৩৫ হাজার গরু কম ছিল। বাস্তবে চট্টগ্রামের বাইরে থেকে বেপারিরা হাজার হাজার গরু নিয়ে এসেছে। রাজশাহী, কুষ্টিয়া, নওগাঁ, মাগুরা, কিশোরগঞ্জ, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বেপারিরা গরু নিয়ে চট্টগ্রামে এসেছে। এছাড়া ওইসব জেলায় কিছু খামারি আছেন যারা চট্টগ্রামের হাটে বিক্রির লক্ষ্য নিয়ে গরু মোটাতাজা করেন। মিয়ানমার থেকে সীমান্ত দিয়ে চোরাপথে প্রচুর সংখ্যক গরু এসেছে। সব মিলিয়ে চট্টগ্রামের হাটসমূহে চাহিদার তুলনায় বেশি গরু রয়েছে।

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট