বর্ষা মৌসুমের শুরুতে প্রতিদিনই চট্টগ্রামে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। হাসপাতালেও চাপ বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর। চলতি বছরে আক্রান্তের সাড়ে ৫৭ শতাংশ রোগীই মিলেছে গত ২৬ দিনে। মৃত্যুর সংখ্যাও চোখ ওপরে ওঠার মতো।
গত এক সপ্তাহে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে নগরীর কাট্টলী, খুলশী এবং উপজেলার সীতাকুণ্ড এলাকা থেকেই তুলনামূলক বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। এর বাইরে সংখ্যার দিক থেকে নগরীর কোতোয়ালী, হালিশহর অঞ্চলের রোগী পাওয়া যাচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে পরামর্শ দিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আক্রান্ত এবং হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের তথ্য পর্যালোচনা করে এলাকাভিত্তিক ব্যবস্থা গ্রহণের এখনই সময়। এলাকাভিত্তিক এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করা গেলেই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে বলেও পরামর্শ চিকিৎসকদের।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে গতকাল সোমবার পর্যন্ত ৪৩০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এছাড়াও মারা গেছে ৯ জন। আক্রান্তদের মধ্যে সাড়ে ৫৭ শতাংশের বেশি রোগী পাওয়া গেছে গত ২৬ দিনে। আর মৃত্যু হওয়াদের মধ্যে ৬ জনের মৃত্যু হয় গত দুই সপ্তাহে। মৃত্যুদের মধ্যে ৫ জনই হচ্ছে শিশু।
এছাড়াও গত এক সপ্তাহে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে আকবরশাহ-কাট্টলী এবং খুলশী অঞ্চল থেকে গড়ে চার থেকে পাঁচজনের মতো রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আর সীতাকুণ্ডে ভর্তি হন গড়ে চার জন করে। এছাড়াও নগরীর কোতোয়ালী, পাহাড়তলী, হালিশহর, পতেঙ্গা থেকেও বিচ্ছিন্নভাবে রোগী পাওয়া যাচ্ছে।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, ‘যেসব রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন, তুলনামূলকভাবে নগরীর আকবরশাহ-কাট্টলী-হালিশহর ও তার আশেপাশের এলাকাগুলোর আক্রান্তের সংখ্যাটা কিছুটা বেশি। আর উপজেলার মধ্যে সীতাকুণ্ডের রোগী তুলনামূলক বেশি পাওয়া যাচ্ছে। এসব এলাকাগুলোতে আগেও এমন ডেঙ্গু রোগী বেশি পাওয়া গিয়েছিল। তাতে ডায়রিয়ার রোগীও পাওয়া যায়। ধারণা করা হচ্ছে, এলাকাগুলোতে ঘনবসতিপূর্ণ হওয়া কিংবা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও সচেতনতার অভাবের ঘাটতি রয়েছে। তাই বলেই হয়তো ডেঙ্গুর আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে। হাসপাতালে গিয়ে দেখেছি, অনেক ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর মশারিটাও টাঙাতে অনীহা। আক্রান্ত হওয়ার পর যদি তাদের ‘হুঁশ’ না আসে, তাহলে কখন আসবে। সাধারণ মানুষকে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। সচেতনতার বিকল্প কিছুই নেই।’
এলাকা ভিত্তিক ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (মেডিসিন) সহকারী অধ্যাপক ডা. আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের তথ্যগুলো পর্যালোচনা করা। কোন এলাকার বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছে, রোগীদের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে এলাকাভিত্তিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। যে এলাকাগুলো থেকে রোগী আসছে, তাতে মশার ওষুধ বেশি করে ছিটানোসহ অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ করলে অবশ্যই ডেঙ্গুর প্রবণতা দ্রুতই কমে আসবে। কিন্তু রোগীদের তথ্য পর্যালোচনা করা হয় কি-না, তাই বড় বিষয়। বিষয়টি অবশ্যই চসিকের নজর দেয়া উচিত।’
২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি আরও ১৭ জন: গত ২৪ ঘন্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও ১৭ জন সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। গতকাল সোমবার চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ১৭ জনের মধ্যে বেসরকারি হাসপাতালে ৯ জন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৩০ জন। তাদের মধ্যে বর্তমানে ১০৪ জন রোগী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। আর চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ৯ জনের মৃত্যু হওয়ার খবর প্রকাশ করেছে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়।
পূর্বকোণ/পিআর