চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

কঠিন শর্তের কারণে ব্যাংক ঋণ পান না নারী উদ্যোক্তারা

মরিয়ম জাহান মুন্নী

২৭ জুন, ২০২৩ | ১১:২৬ পূর্বাহ্ণ

ফাতেমা বেগম নগরীর বাদুরতলায় দীর্ঘদিন ধরে বিউটি পার্লার ব্যবসা করছেন। করোনার কারণে তিনি নানাভাবে লোকসানে পড়েন। তাই ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে আবার ব্যবসা শুরু করতে চান। কিন্তু এ নারী উদ্যোক্তা কঠিন কিছু শর্তের জন্য শেষ পর্যন্ত ব্যাংক লোনের টাকাটাই পেলেন না। আরেক নারী উদ্যোক্তা তাজ ফুডিস’র স্বত্বাধিকারী শাহনাজ বেগম কাজ করেন হোম মেড খাবার নিয়ে। দীর্ঘদিন ঘরোয়াভাবে কাজ করার পর একটি দোকানও নেন তিনি। ব্যবসার পরিধি বড় করতে ব্যাংক লোন চেয়েছেন একটি ব্যাংক থেকে। কিন্তু তিনিও পেলেন না।

 

এমন কয়েকজন নারী উদ্যোক্তার সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রায় পাঁচ ধরনের কঠিন শর্তের কারণে লোন নিতে পারেন না নারী উদ্যোক্তারা। উল্লেখযোগ্য সমস্যাগুলো হলো, একজন সরকারি চাকরিজীবী বা ব্যবসায়ীসহ তিনজনকে গ্যারান্টার করতে হয়। যা অনেক ক্ষেত্রে নারী উদ্যোক্তাগণ দিতে সক্ষম হন না। এক বছরের পুরাতন ট্রেড লাইসেন্স দেখাতে হয়। ৬ মাসের বেশি লেনদেন করাসহ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নামে একটি একাউন্ট থাকতে হবে। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৩ বছরের ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখাতে হয়। দুই বছরের পুরোনো প্রতিষ্ঠান থাকতে হবে। এমন জটিলতার কারণে নারী উদ্যোক্তারা ঋণ পান না। যে কারণে নারীরা পিছিয়ে পড়ছে।

 

চট্টগ্রাম ওমেন চেম্বারের সাবেক পরিচালক ও রেড লাউঞ্জ বউটি স্যালুনের প্রতিষ্ঠাতা শামিলা রিমা বলেন, ব্যাংক থেকে ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে নারীরা অনেক বেশি অবহেলিত। বলতে গেলে ব্যাংকগুলো নারী উদ্যোক্তাদের অনুকূলে নেই। করোনা পরবর্তী সময়ে দেখা গেছে লোনের পূর্বের লেনদেন ভালো থাকলেও ব্যাংকগুলো নারীদের লোন দিতে চাইছে না। পূর্বের লোন পরিশোধে কোনো সমস্যা না থাকা সত্ত্বেও তারা বলেন প্রাইভেট সেক্টরে এবার কোনো লোন দেয়া হচ্ছে না। এটা নারী উদ্যোক্তাদের জন্য খুবই উদ্বেগের বিষয়। এভাবে নারীরা অবহেলার শিকার হচ্ছেন।

 

এগনোটিজ এগ্রো লি. এর পরিচালক বাহারোজ সুলতানা দীপা বলেন, নারীদের স্বাবলম্বী হতে হলে পরিবারের পাশাপাশি রাষ্ট্রসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। যদিও আমি কখনো লোনের জন্য যাইনি, তবে এটা জানি নারী উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে লোন পাওয়া খুবই কঠিন। এটি যদি সহজ না করা হয় তবে নারীরা এখন যেভাবে এগিয়ে এসেছেন সহযোগিতার অভাবে আবার পিছিয়ে পড়বেন।

 

বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রাম ওমেন চেম্বার অফ কর্মাস এন্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক নূজহাত নূয়েরী কৃষ্টি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক প্রবর্তিত এসএমই খাতে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য চালু ঋণ কার্যক্রমটা খুবই কঠিন। কিন্তু সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে শুরু করে সকল পর্যায়ে নতুন নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টির কথা বলা হলেও নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টির জন্য কোনরূপ নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। যার কারণে নারী উদ্যোক্তারা সহজে ঋণ পায় না। এতে করে নারী উদ্যোক্তারা পিছিয়ে পড়ছে। অনেকেতো করোনা পরবর্তী সময়ে কোনো প্রকার লোন না পাওয়ায় ব্যবসা বন্ধ করতেও বাধ্য হয়েছে।

 

এসময় তিনি আরো বলেন, নতুন নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টির জন্য সরকার যেভাবে এগিয়ে এসেছেন একই সাথে ব্যাংকগুলোকেও তাদের নিয়ম শিথিল করা দরকার। এতে নতুন নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টি হবে। নারীরা দেশের অর্থনীতে আরো বেশি অবদান রাখতে পারবে। এছাড়া নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ভ্যাট ও ট্যাক্স কমানো, ট্রেড লাইসেন্স ফি ও নবায়ন ফি কমানো দরকার। নারীদের জন্য জামানতবিহীন ঋণপ্রকল্প প্রবর্তন করা দরকার। ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে নতুনদের অগ্রাধিকার দেয়া এবং সহজ সর্তে ঋণ পাওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য কমপক্ষে ৬ মাস সুদ মুক্ত ঋণের ব্যবস্থা করা এবং অতি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়া শর্তগুলো শিথিল করা প্রয়োজন।

পূর্বকোণ/পিআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট