চট্টগ্রাম শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪

ভূমিধসের ঝুঁকিতে নগরীর ২৮ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

ইমরান বিন ছবুর

২৬ জুন, ২০২৩ | ১১:৪১ পূর্বাহ্ণ

ভূমিধসের ঝুঁকিতে রয়েছে নগরীর ২৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ভূমিধসের ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত ১০ ওয়ার্ডে বিদ্যালয়গুলোর অবস্থান। ঝুঁকিতে থাকা এসব এলাকায় ভূমিধস রোধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া না হলে, যে কোন সময় ভূমিধসের ঘটনায় এসব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্ষয়ক্ষতিসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রাণহানির মত ঘটনা ঘটতে পারে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শাহজালাল মিশুকের গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। যা সম্প্রতি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ‘চট্টগ্রাম নগরীর আপদকালীন পরিকল্পনায় (২০২৩)’ তুলে ধরা হয়েছে। নগরীর ভূমিধসের ঝুঁকিতে থাকা এসব এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের বেশিভাগ ঢালে অবৈধ দখল রয়েছে। যা সমাধান করা না গেলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ভূমিধসের কারণে ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি বাড়বে। অন্যদিকে পাহাড়ের কাছাকাছি বাসস্থান নির্মাণে নিরুৎসাহিত করা না গেলে ভূমিধসের ঘটনা বাড়বে বলে আপদকালীন পরিকল্পনায় তুলে ধরা হয়েছে।

 

চুয়েটের ২০২১ সালের ফিল্ড সার্ভে অনুযায়ী নগরীতে ভূমিধসের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মধ্যে ২৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তথ্য পাওয়া যায়।

 

ঝুঁকিতে থাকা প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহ:

নিউ টাইগারপাস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্ব টাইগারপাস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, লালখান বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জালালিয়া ফকির তাকিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ পাহাড়তলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম ছড়ারকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বালুছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জে বটতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্ব কুলগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, এয়ার আলী হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ওয়াজেদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চলিতাতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নাজিরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মোহাম্মদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হামজারবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আহমদ মিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ওমর গণি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফিরোজশাহ কলোনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাজীর দেউড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাগমনিরাম এ এস বালক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাপাসগোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাতালগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শৈলবালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শেহশাহ কলোনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বন গবেষণাগার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মুরাদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং শহীদ ডা. মকবুল আহমদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

 

অন্যদিকে, ফিল্ড সার্ভে ২০২১ এর তথ্য অনুযায়ী নগরীর ১০টি ওয়ার্ডের বেশ কিছু এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব এলাকায় যেসব জনবসতি রয়েছে, সেগুলো ভূমিধসের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাসমূহ: নগরীর যেসকল পাহাড়ি এলাকায় পূর্ববর্তী সময়ে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বার ভূমিধস হয়েছে এবং সর্বাধিক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেই ওয়ার্ডগুলোকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

 

ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ড সমূহ হচ্ছে- নগরীর ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ড, ২ নম্বর জালালাবাদ, ৩ নম্বর পাঁচলাইশ, ৭ নম্বর পশ্চিম ষোলশহর, ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী, ১৩ নম্বর পাহাড়তলী, ১৪ নম্বর লালখান বাজার, ১৫ নম্বর বাগমনিরাম, ১৬ নম্বর চকবাজার, ২২ নম্বর এনায়েত বাজার ওয়ার্ডের পাহাড়। এছাড়া, মতিঝর্ণা, লালখান বাজার, টাঙ্কির পাহাড়, বাটালি পাহাড়, গোলপাহাড়, এ কে খান পাহাড়, রৌফাবাদ পাহাড়, ফিরোজশাহ, কুসুমবাগ, জালালাবাদ পাহাড়, মুক্তিযোদ্ধা পাহাড়, আরেফিন নগরসহ প্রায় ৩০টি মত ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় চিহ্নিত করা হয়েছে।

 

জানতে চাইলে চুয়েটের নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং চসিকের আপদকালীন পরিকল্পনার প্রধান পরামর্শক শাহ জালাল মিশুক বলেন, চসিকের আপদকালীন পরিকল্পনার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে পাহাড় ধস। পাহাড় ধসের জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোকে চিহ্নিত করা হয়েছে। পাহাড় ধসের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিতকরণের ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে, তা হচ্ছে   নগরীর যেসকল পাহাড়ি এলাকায় পূর্ববর্তী সময়ে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বার ভূমিধস হয়েছে এবং সর্বাধিক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেই ওয়ার্ডগুলোকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় পাহাড় ধস রোধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট