চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

দেশের প্রথম সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং’র কমিশনিং শুরু আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৫ জুন, ২০২৩ | ১২:১১ অপরাহ্ণ

ঐতিহাসিক মুহূর্তের সামনে দাঁড়িয়ে দেশের জ্বালানি খাত। গভীর সাগরে বড় তেলবাহী জাহাজ থেকে সরাসরি জ্বালানি তেল খালাসের আধুনিক প্রযুক্তি- সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিংয়ের (এসপিএম) কমিশনিং শুরু হচ্ছে আজ। সৌদি আরব থেকে আসা অপরিশোধিত তেলবাহী ট্যাংকার ‘হরে’ থেকে জ্বালানি তেল খালাসের মাধ্যমে মহেশখালীতে স্থাপন করা দেশের প্রথম এই এসপিএম’র কমিশনিং শুরু হবে। সফল কমিশনিংয়ের পর দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা বাড়াতে নেওয়া বড় এই প্রকল্প চালু হলে আমদানি করা তেলবাহী ট্যাংকার থেকে জ্বালানি খালাসে আধুনিক প্রযুক্তির যুগে প্রবেশ করবে বাংলাদেশ। গভীর সাগরে নোঙর করা একটি ১ লাখ মেট্রিক টন তেলবাহী ট্যাংকার থেকে তেল খালাসে সময় লাগবে মাত্র ২-৩ দিন। দেশে জ্বালানি তেল মজুদের সক্ষমতা বাড়বে ১০-১৫ দিন। কমবে তেল চুরি, পরিবহন নৈরাজ্য এবং পানি দূষণের হার।

 

সংশ্লিষ্টরা জানান, পরীক্ষামূলকভাবে এসপিএম চালুর জন্য প্রায় ৮২ হাজার টন অপরিশোধিত তেল নিয়ে অয়েল ট্যাংকার ‘হরে’ গত ১১ জুন সৌদি আরবের ‘রাস তানুরে’ বন্দর ছেড়ে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। গতকাল রাতে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে এসে পৌঁছায় পানামার পতাকাবাহী এই ট্যাংকার। আজ রবিবার ট্যাংকার ‘হরে’ দিয়েই মহেশখালীর মুরিং পয়েন্ট থেকে পরীক্ষামূলকভাবে তেল খালাস শুরু হবে।

 

এসপিএম প্রকল্পের পরিচালক শরীফ হাসনাত পূর্বকোণকে বলেন, রবিবার চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙর থেকে অয়েল ট্যাংকারটি মহেশখালীর মুরিং পয়েন্টে আনা হবে। আবহাওয়া স্বাভাবিক থাকলে এদিন বিকালে ট্যাংকারের অপরিশোধিত তেল মুরিং পয়েন্টে দেওয়ার মাধ্যমে পাইপলাইনে পরীক্ষামূলক সরবরাহ শুরু হবে। এরপর আমরা মুরিং, পাইপলাইন, স্টোরেজ ট্যাংকের সবকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবো।

 

সূত্র জানায়- বন্দরের অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতা এবং কর্ণফুলী নদীর চ্যানেলের নাব্যতা কম হওয়ায় এখন তেলবাহী বড় জাহাজগুলো সরাসরি খালাস করা সম্ভব হয় না। বঙ্গোপসাগরের কুতুবদিয়া চ্যানেলে নোঙর করে ছোট লাইটারেজের মাধ্যমে তেল খালাস করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় ১ লাখ মেট্রিক টন অপরিশোধিত তেলবাহী জাহাজ খালাসে ১০-১১ দিন এবং ৩০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেলবাহী জাহাজ খালাসে ৪-৫ দিন সময় লাগে। গতানুগতিক এই পদ্ধতি সময়সাপেক্ষ, ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যয়বহুল হওয়ায় বড় জাহাজ থেকে সরাসরি তেল খালাসের জন্য ‘ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নেয় সরকার।

 

২০১৫ সালের নভেম্বরে নেওয়া এই প্রকল্পের মাধ্যমে পাইপলাইনে করে জ্বালানি তেল পরিবহনে কক্সবাজারের মহেশখালী থেকে নগরীর পতেঙ্গার মধ্যে সংযোগ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই প্রকল্পের মাধ্যমে মহেশখালীর কালারমারছড়া ইউনিয়নে উপকূল থেকে ছয় কিলোমিটার পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) স্থাপন করা হয়েছে। এসপিএম থেকে ৩৬ ইঞ্চি ব্যসের দুটি আলাদা পাইপলাইনের মাধ্যমে ক্রুড অয়েল ও ডিজেল আনলোডিং করা হবে। ১৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সেই পাইপলাইন প্রথমে নিয়ে আসা হবে কালারমারছড়ায় সিএসটিএফ বা পাম্প স্টেশন অ্যান্ড ট্যাঙ্ক ফার্মে।  সেখান থেকে বিভিন্ন পাম্পের মাধ্যমে ৭৪ কিলোমিটার পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল চলে যাবে আনোয়ারার সমুদ্র উপকূলে। সেখান থেকে আবার ৩৬ কিলোমিটার পাইপলাইন পাড়ি দিয়ে তেল নিয়ে যাওয়া হবে পতেঙ্গায় ইআরএলের রিফাইনারিতে। এসপিএম চালু হলে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) বছরে সাশ্রয় হবে অন্তত ৮০০ কোটি টাকা।

পূর্বকোণ/এএইচ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট