চট্টগ্রাম সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

চালুর অর্ধেকের বেশি সময় ধরেই অচল

ইমাম হোসাইন রাজু

২৪ জুন, ২০২৩ | ১১:৩২ পূর্বাহ্ণ

নারীদের স্তন টিউমার ও ক্যান্সার শনাক্তে ২০১৮ সালের ১ আগস্ট ম্যামোগ্রাফি মেশিন চালু হয় চমেক হাসপাতালে। চালু হওয়ার পর থেকেই বারবার ত্রুটি দেখা দেয় স্বাস্থ্য বিভাগের কেন্দ্রীয় ওষুধাগার থেকে পাঠানো মেশিনটির। যন্ত্রটি চালু হওয়ার পর থেকে গত পাঁচ বছরে অকেজো হয়ে পড়েই ছিল ৩৫ মাস। ১ বছর ১১ মাস সচল থাকলেও ফিল্ম সংকট কিংবা অন্য কারণেও সেবা বন্ধ ছিল বহুদিন। বলা যায়-কোটি টাকা মূল্যের মেশিন থেকে তেমন সেবাই গ্রহণ করতে পারেননি রোগীরা। সবশেষ গত দেড় বছর ধরে বন্ধ রয়েছে বৃহত্তর চট্টগ্রামের সরকারি হাসপাতালে নারীদের স্তন ক্যান্সার শনাক্তের একমাত্র এ যন্ত্রটি।

 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মেশিনটিতে বারবার ত্রুটি দেখা দিলেও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে অদ্যাবদি পর্যন্ত মেরামতের কোন ব্যবস্থাই গ্রহণ করেননি। বরং বারবার পত্র দেয়ার পরও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মেশিন মেরামত করতে প্রতিবারই সময়ক্ষেপণ করেন। যা নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সর্বশেষ মন্ত্রণালয়েরও দ্বারস্থ হয়েছেন।

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৬ সালের ২৮ জুন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের জন্য নারীদের স্তন ক্যান্সার শনাক্তে ম্যামোগ্রাফি মেশিন ক্রয়ের জন্য ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি করে কেন্দ্রীয় ওষুধাগার বা সিএমএসডি। চুক্তির পর ২০১৭ সালের ১৬ মার্চ মেশিনটি চমেক হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগে প্রেরণ করা হয়। কিন্তু ১ বছর ৪ মাস ১৬ দিন পর্যন্ত মেশিনটি বাক্সবন্দী হয়ে পড়ে ছিল। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ১ আগস্ট স্থাপন করা হয় স্তন ক্যান্সার শনাক্তের যন্ত্রটি। স্থাপনের পর মেশিনটি মাস দু’য়েক চললেও পরবর্তীতে ফিল্ম সংকটের কারণে সেবা বন্ধ থাকে আরও কয়েকমাস। এরপর অন্তত পাঁচবার ত্রুটি দেখা দেয় এ যন্ত্রে।

 

চমেক হাসপাতালের তথ্য অনুসারে, ২০১৮ সালের ১ আগস্টে ম্যামোগ্রাফি মেশিনটি চালু করার পর ২০১৯ সালের ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত ৫ মাস ২৬ দিন চালু থাকে। এরপর ২৮ জানুয়ারি ২০১৯ সাল থেকে ২০২০ সালের ১১ জুলাই পর্যন্ত ১ বছর ৫ মাস ১৪ দিন বন্ধ থাকে। দ্বিতীয় ধাপে ২০২০ সালের ১২ জুলাই মেশিনটি চালু করার ৩ মাস ২৭ দিন তথা ২০২০ সালের ৮ নভেম্বর পর্যন্ত চালু থাকে।  এরপর ২০২০ সালের ৯ নভেম্বর থেকে ২০২১ সালের ১ জুন পর্যন্ত তথা ৬ মাস ২৩ দিন পর্যন্ত মেশিনটি বন্ধ থাকে। তৃতীয় ধাপে ২০২১ সালের ২ জুন থেকে ২০২২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮ মাস ৬ দিন পর্যন্ত মেশিনটি চালু থাকলেও ২০২২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ১৫ জুন পর্যন্ত ফের অকেজো হয়ে পড়ে থাকে ম্যামোগ্রাফি মেশিনটি। এরপর ২০২২ সালের ১৬ জুন চালু করার পর আরও ৬ মাস সেবা পাওয়া যায়। যা ২০২২ সালের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত চালু থাকে। কিন্তু ২০২২ সালের ১৭ ডিসেম্বর থেকে অদ্যাবদি পর্যন্ত মেশিনটি অকেজো হয়ে পড়ে আছে।

 

এদিকে, অকেজো থাকা মেশিনটি চালু করতে বারবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে তাড়া দিয়ে আসলেও সচল না করায় সর্বশেষ গত ১১ এপ্রিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবরে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে চিঠি দেন চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসন স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ‘সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী মেশিনটির ওয়ারেন্টি সময়কাল ৩ বছর। অদ্যাবদি পর্যন্ত মেশিনটি ১ বছর ১১ মাস ২৯ দিন চালু ছিল এবং ২ বছর ৮ মাস ৮ দিন বন্ধ ছিল। ওয়ারেন্টি সময়কাল যা সমপরিমাণ সময় মেশিনটি সচল রাখার দায়িত্ব সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের উপর বর্তায়।  এমতাবস্থায় রোগী চিকিৎসার স্বার্থে অত্র হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগের  ম্যামোগ্রাফি মেশিনটি মেরামতের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দানের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো।’

 

চিঠিতে আরও বলা হয়, ২০২২ সালের ১৭ ডিসেম্বর থেকে মেশিনটি অদ্যাবদি পর্যন্ত ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে। মেশিনটি মেরামতের জন্য পত্র প্রেরণ করা হলেও অদ্যাবদি মেরামতের কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। তাছাড়া মেশিনটি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক অত্র হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগে প্রদানের পর বরাবর ত্রুটি দেখা দেয়ায় মেরামতের জন্য বারংবার পত্র প্রেরণ করা হয়। কিন্তু সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠা মেশিনটি মেরামত করতে প্রতিবারই সময়ক্ষেপণ করেছেন বলেও উল্লেখ করা হয়।’

 

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান বলেন, ‘ম্যামোগ্রাফি মেশিনটি স্থাপনের শুরু থেকেই বারংবার ত্রুটি ছিল। যা নিয়ে অসংখ্যবার সরবরাহকারী ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি প্রেরণ করা হয়। সবশেষ প্রায় দেড় বছর ধরে অকেজো হয়ে পড়ে আছে। এ জন্য মেরামতের প্রয়োজনীয় নির্দেশনার জন্য মন্ত্রণালয়ের কাছে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

 

উল্লেখ্য, চমেক হাসপাতালে স্থাপন করা ম্যামোগ্রাফি মেশিন দিয়ে সিঙ্গেল  ম্যামোগ্রাফ টেস্টের জন্য চারশ’ টাকা এবং ডাবল টেস্টের জন্য আটশ’ টাকা নেয়। কিন্তু তা বেসরকারি ল্যাবগুলোতে স্তরভেদে দেড় থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত গ্রহণ করা হয়।

পূর্বকোণ/পিআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট