চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪

সর্বশেষ:

সিএমপি’র নজরদারিতে ওসির দেহরক্ষী, ফাঁড়ির মুন্সি

নাজিম মুহাম্মদ

২৩ জুন, ২০২৩ | ১২:৩৩ অপরাহ্ণ

বছরের পর বছর ধরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি)  অধীন থানার ওসিদের দেহরক্ষী ও পুলিশ ফাঁড়িতে মুন্সি হিসেবে কর্মরত কনস্টেবলদের প্রতি নজরদারি বাড়িয়েছে সিএমপি। অভিযোগ উঠেছে কিছু পুলিশ কনস্টেবল ঘুরে ফিরে থানার ওসিদের দেহরক্ষী  ও ফাঁড়ির মুন্সি হিসেবে বছরের পর বছর থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। একই স্থানে দীর্ঘদিন কর্মরত থাকার কারণে দেহরক্ষী আর মুন্সিরা সংশ্লিষ্ট থানা এলাকায় বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসায়ীদের সাথে অর্থনৈতিক লেনদেনে জড়িয়ে পড়ছেন। পরোক্ষভাবে থানার কথিত ‘ক্যাশিয়ারের’ ভূমিকা পালন করছেন। অনেক কর্মকর্তা এক থানা থেকে অন্য থানায় বদলি হলে দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত দেহরক্ষীকে কয়দিন পর বদলি করে নিয়ে যান সংশ্লিষ্ট থানায়। এ অবস্থায় দীর্ঘদিন সিএমপিতে  ওসিদের দেহরক্ষী আর থানা-ফাঁড়ির মুন্সি হিসেবে কর্মরত কনস্টেবলদের প্রতি নজরদারি বাড়িয়েছেন সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়।

 

কনস্টেবল মো.তৌহিদুল ইসলাম প্রায় ১০ বছর ধরে সিএমপিতে কর্মরত  ছিলেন। দীর্ঘদিন কর্মকালীন সময়ে তিনি থানার পরিদর্শকের (ওসি) দেহরক্ষীর দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি চকবাজার থানার  ওসির দেহরক্ষী ছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, ফুটপাতের দোকান, জুয়ার বোর্ড, সিএনজি ট্যাক্সি স্ট্যান্ড, ব্যাটারিচালিত রিকশা, চকবাজারভিত্তিক ডার্ক রেস্টুরেন্ট, ম্যাসেজ পার্লারসহ বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাসোহারা তুলতেন তৌহিদুল। তাকে বন্দর জোনে বদলি করা হয় সম্প্রতি। কোতোয়ালি থানায় ওসির দেহরক্ষী হিসেবে কর্মরত ছিলেন কনস্টেবল মো. দেলোয়ার। তার বিরুদ্ধেও তৌহিদুলের মতো মাসোহারা তোলার অভিযোগ উঠে। কনস্টেবল মিল্টন বড়ুয়া দীর্ঘদিন এনায়েত বাজার ও পাথরঘাটা পুলিশ ফাঁড়ির মুন্সি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার বিরুদ্ধেও দুই কনস্টেবলের মত একই অভিযোগ উঠে। গত ১৩ মে  কনস্টেবল দেলোয়ারকে সিএমপির ক্রাইম এন্ড অপারেশন, মিল্টন বড়ুয়াকে সিএমপির কন্ট্রোল রুম এবং তৌহিদুল ইসলামকে ইন সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারে বদলি করা হয়। পরবর্তীতে ২০ দিনের মাথায় দেলোয়ার এবং মিল্টন বড়ুয়াকে সিলেট মেট্রোপলিটন ও তৌহিদুলকে এপিবিএনে বদলি করা হয়। গত ৩ জুন তিনজনকে একসঙ্গে বদলির আদেশে বলা হয়, প্রশাসনিক কারণে তিনজনকে বদলি করা হয়েছে।

 

২০ দিনের মাথায় তিন কনস্টবলকে প্রশাসনিক কারণে দুইবার বদলি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে, নগর পুলিশের সদর জোনের উপ-কমিশনার  (ডিসি) আবদুল ওয়ারিশ জানান, সরকারি চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে নিয়ম হচ্ছে তিন বছরের বেশি সময় একই স্থানে না থাকা। এ সময়ের মধ্যে বদলি না হলে অস্বাভাবিক ধরে নিতে হবে। তাছাড়া দীর্ঘদিন এক জায়গায় কর্মরত থাকলে কাজের গতি কমে যায়। নতুন কেউ আসলে কাজের গতি বাড়ে। বদলি হওয়া কনস্টেবলরা ৮ থেকে ১০ বছর ধরে ঘুরেফিরে একই স্থানে কর্মরত ছিলেন। দীর্ঘদিন এক জায়গায় কর্মরত থাকলে খারাপ- সবার ক্ষেত্রে তা বলা যাবে না। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে ভাল হলেও দীর্ঘদিন এক জায়গায় থাকতে হবে এমনও কিন্তু নয়। ভাল হলে কাজ করার অনেক জায়গা আছে।

 

থানার মুন্সি কিংবা ওসিদের দেহরক্ষীরা অর্থনৈতিক লেনদেনে জড়িয়ে পড়ার কারণে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে কিনা জানতে চাইলে ডিসি ওয়ারিশ জানান, একজন কনস্টেবল দেহরক্ষী থাকলে সব সময় বছরের পর বছর দেহরক্ষী হিসাবে থাকবেন কিংবা মুন্সি হিসেবে থাকবেন এমন কিন্তু নয়। দীর্ঘদিন এক জায়গায় কর্মরত থাকা পুলিশ সদস্যদের কাউকে একইস্থানে রাখা হবে না। পুলিশ কমিশনার মহোদয় এসব বিষয়গুলো নজরদারিতে নিয়েছেন। পুলিশ সদস্যদের শৃঙ্খলা ও নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসতে আমরা চেষ্টা করছি।

পূর্বকোণ/এএইচ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট