এবার বোরো মৌসুমে ধানের উৎপাদন বেড়েছে দেশে। এরফলে সরকারি-বেসরকারি সকলের গুদামে চালের মজুত ভালো রয়েছে। মাস দু-একের মধ্যে বাজারে আসবে আউশ ধানও। উৎপাদন ও মজুত বাড়তি থাকার পরও বাড়ছে চালের দাম। দাম বাড়তির বিষয়ে জানতে চাইলে পাহাড়তলী বণিক সমিতির সহ-সভাপতি মো. জাফর আলম বলেন, ‘গরু ও আম পরিবহনের কারণে এখন গাড়ি ভাড়া বাড়তি রয়েছে। প্রতি ট্রাকে প্রায় ১০ হাজার টাকা বাড়তি গুনতে হচ্ছে। এর প্রভাব পড়েছে চালের দামে।’
বোরো ধান কাটার পর থেকে চালের দাম কিছুটা কমতির দিকে ছিল। প্রকৃতি অনুকূলে থাকায় দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে এবার ধানের উৎপাদন ভালো হয়েছে। আর এসময় দেশে সরকারি মজুতও ভালো ছিল। কমতি অবস্থায় প্রায় দেড় মাস ধরে স্থিতিশীল ছিল চালের বাজার। কিন্তু সপ্তাহখানেক ধরে পাইকারি বাজারে চালের দাম কিছুটা চড়তে শুরু করেছে।
পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রবীণ চাল ব্যবসায়ী এসএম নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘দেশীয় মোটা চালের দাম বস্তাপ্রতি ৫০-১০০ টাকা বেড়েছে। বোরো মৌসুমে ধান-চাল সংগ্রহের সরকারি কর্মসূচি চলমান থাকায় মোটা চালের দাম কিছুটা বেড়েছে।’
বাজার ঘুরে দেখা যায়, দেশীয় মোটা সিদ্ধ চাল (স্বর্ণা সিদ্ধ) বিক্রি হচ্ছে বস্তাপ্রতি ২৩৫০-২৪০০ টাকা। মোটা সিদ্ধ বিক্রি হচ্ছে ২১০০ টাকা। ভারতীয় আমদানি করা স্বর্ণা সিদ্ধ ২৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি বাজারে এক সপ্তাহের ব্যবধানে বস্তাপ্রতি মানভেদে ৫০ টাকা থেকে একশ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
সরকারের ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) গতকাল বৃহস্পতিবারের বাজার দর বলছে, মোটা চাল (স্বর্ণা/ইরি) কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৪৮-৫০ টাকা ও ৫০-৫৫ টাকা দরে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের বাজার দর বলছে, দেশে খুচরা বাজারে মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৭-৪৯ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে এক দশমিক ৭১ শতাংশ।
আড়তদার ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, এবার বোরো মৌসুমে বিপুল পরিমাণ ধান উৎপাদন হয়েছে। এর আগের দুই মৌসুমের চাল ধান মজুত রয়েছে। ফলে দেশে মজুত ও সরবরাহ পর্যাপ্ত রয়েছে। এতে মাস দু-এক আগে পাইকারি বাজারে চালের দাম বস্তাপ্রতি প্রায় দুইশ টাকা কমেছিল। এখন আউশ রোপণ চলছে। মাসখানেকের মধ্যে আউশ ধান বাজারে আসবে।
সরকারি মজুত
দেশে সরকারি খাদ্য গুদামে ১৯ লাখ ২৮ হাজার ২১৬ মেট্রিক টন চাল মজুত রয়েছে। এরমধ্যে চাল মজুত আছে ১৫ লাখ ৩৪ হাজার ৪৫৪ টন। ধান মজুত আছে ৯৯ হাজার ৭৭ টন। গম মজুত আছে তিন লাখ ২৯ হাজার ৩৬২ টন। সরকারি স্বাভাবিক মজুত ধরা হয় ১৪-১৫ লাখ টন। এছাড়াও বেসরকারি পর্যায়ে প্রচুর ধান মজুত রয়েছে। তারপরও বাড়ছে চালের দাম।
সরকারি খাদ্য গুদামে পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য মজুত ও অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ কর্মসূচি চালু থাকায় চাল আমদানি বন্ধ রয়েছে বলে জানান খাদ্য বিভাগের চলাচল ও সংরক্ষক কার্যালয়ের উপ-নিয়ন্ত্রক সুনীল দত্ত। তিনি বলেন, মিয়ানমার ও ভারত থেকে আমদানি করা আতপ চালের এখনো বিপুল পরিমাণ মজুত রয়েছে। এছাড়াও সরকারি গুদামে পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য মজুত থাকায় বৈদেশিক আমদানি বন্ধ রয়েছে। আড়তদার ও ব্যবসায়ীদের দাবি, ধানের মৌসুমে বড় মিলার ও শিল্প গ্রুপ ধান-চাল মজুতের প্রতিযোগিতায় নামে। ধানের মৌসুমে বাজার অস্থির করে দেয় বড় মিলার-শিল্প গ্রুপ। পরবর্তীতে বাজার পরিস্থিতি দেশে চালের দাম বাড়িয়ে দেয়।
পূর্বকোণ/এএইচ